পা দিয়ে লিখে এসএসসি পাশ করলো পাপিয়া!
দুই হাত অকেজো। কাজ চলে পা দিয়ে। দরিদ্রতা গোটা পরিবারকে গ্রাস করলেও প্রতিবন্ধী ববিতা আখতার পাপিয়ার ইচ্ছা শক্তিকে দমাতে পারেনি। পা দিয়ে লিখে মেহেরপুর সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করলো ববিতা আকতার পাপিয়া। পরীক্ষায় সে জিপিএ ২.৫০ পয়েন্ট অর্জন করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। জন্ম থেকে দুই হাতে কোনো শক্তি না পাওয়ায় পাপিয়া পা দিয়েই লেখাপড়াসহ সব কাজ চালাতে হয়। এরআগে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় এ গ্রেড পেয়ে পাস করে সে। তার ইচ্ছা সমাজের আর পাঁচটা মেয়ের মতো সেও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। শিক্ষিকা হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করে সমাজের পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদান করবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে এসএসসি ফলাফল খবর পাওয়ার পর পাপিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় অভাবের সংসারে যে যার মত ব্যস্ত। পাপিয়ার বাবা গেছেন মাঠে গুরুর ঘাস আনতে। মা গেছেন পাশের বাড়ির ছাদে শোকাতে দেওয়া ধান তুলতে। বোনকে নিয়ে পাপিয়া গেছে বাড়ির পাশের বাগানে ছাগল নিয়ে চড়াতে। প্রতিবেশীদের দিয়ে ডাকানোর পর প্রতিক্রিয়ায় পাপিয়া জানায়, পাশের খবর জানার পর এতো ভালো লেগেছে যে আনন্দে হাসবো না কাঁদবো বুঝে উঠতে পেরেছিলাম না। পাপিয়া আরো বলে, আমি কলেজে ভর্তি হব, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হব।
পাপিয়ার মা আরিফা খাতুন জানান, অনেক কষ্ট করে মেয়েকে লেখাপড়া করাতে হচ্ছে। তারও হাত অকেজো হওয়ার কারণে অনেক কষ্ট হয়। আমার মেয়েকে যেন সমাজে অবহেলায় কাটাতে না হয় সেজন্য সে যতদুর পারবে তাকে লেখাপড়া করাবো। তবে পাপিয়ার এই রেজাল্টকরায় মহা দুশ্চিন্তায় পড়েছে তার ভাই আরিফুল ইসলাম জানান, তার চিন্তা এখন কি করে বোনের স্বপ্ন পূরণ করবে।
তিনি জানান, ২০০৮ সালে প্রতিবন্ধীর সার্টিফিকেট চেয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরে আবেদন করেও কোনো সাড়া মেলেনি। বর্তমানে বই-খাতা কিনে দেয়ার মতো অর্থ এখন তাদের নেই। ফলে যে কোন সময় তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এদিকে পাপিয়ার অদম্য ইচ্ছা পূরণে তার সহপাঠীরা বইসহ পোশাক পরানো, নোট সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে বিগত দিনে। সহপাঠীদের বিশ্বাস পাপিয়া একদিন অনেক বড় হবে। মানুষ গড়ার কারিগর হবে। পাপিয়া প্রতিবন্ধী হলেও তার মেধা প্রখর। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তুহিন রেজান জানান, আমাদের বিশ্বাস ছিল ববিতা আকতার পাশ করবে। সে আমাদের অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে। তার অদম্য ইচ্ছাই তাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।