রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা (ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে)

সাইফুলের ভিষণ রকম মন খারাপ।সে মন খারাপ এর কোনও পরিমাপ তার জানা নেইঠ সকুল ছাত্র অবস্থায় মা কে হারিয়ে জীবন কে নতুন করে জেনেছে।অর্থাভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দখিনদুয়ারী ঘরের মাথার সেগুন গাছটি বেঁচে সে ঢাকা শহরে এসেছে জীবন ধারণ করতে, রুটি রুজীর জন্য আজ সে রাজমিস্ত্রী! হাহাহা। পথের মাঝখানের ডিভাইডার তৈরী করার কাজ আজ সাইফুলের। সিমেন্ট বালু সুড়কির মশলা মিশাতে মিশাতে কত ভাবনা তাকে ছেকে ধরে! রোদ তেঁতে উঠতে উঠতে এই পৃথিবীর ওপরও তার রাগ ঝাঁ ঝাঁ করে বাড়তে থাকে অযথাই! হঠাৎ চোখে পড়ে একটি ছোট্ট বটগাছের চারা। চারাটিকে কেন্দ্র করে সিমেন্ট এর মশলা বসাতে থাকে সাইফুল। যেনো বটগাছটির চতুর্দিকে বেদী বানাচ্ছে।চারাটিকে সে আপনমনে বলে
:জীবন কি? বোঝো?
:একটু খানি
:বাঁচতে সাধ?
:ইচ্ছে তো আছেই
:কিভাবে?
: মাথা উঁচু করে
: এই নগরীর নিষ্ঠুরতা জানো?
:আমাকে বাঁচাও!
এবার সে নিজের সাথে বোঝে আর হাসে। রোজ সে চারাটিকে দেখে। দেখে দেখে ভাবে আর হাসে। আজ তার এই আইল্যান্ড বানানোর শেষ দিন। হাতের আধখাওয়া বিড়িটা ছুড়ে ফেলে এবং তার সাথে উঠে আসা ফেনায়িত একদলা ঘৃনা। থুহ এবার সে বটের চারার ওপর সিমেন্ট এর মশলা ঢালে।সিমেন্ট সমাধি!!! যতই মাথা উচু করে দাঁড়াতে চাও জীবন তোমাকে তা করতে দেবে না। মাঝপথে এলজেবরার মধুর পাজল ছেড়ে তোমাকে ইট আর বালুর সমতা বুঝে জীবনের বৈঠা ধরতে হবে। জীবন তোমাকে তোমার মত করে চলতেই দেবে না!!! মনে মনে সে কি কাঁদে না হাসে সে নিজেই বুঝতে পারেনা! নিজের সাথে যুদ্ধ করে শেষে বটের চারাটির মৃত্যু কনফার্ম করেই সে তার যন্ত্র পাতি নিয়ে তার পুঁতিগন্ধময় প্রেম ভালবাসা হীন ডেরায় ফেরে। নির্ঘুম রাতটাকে নিঘুমায় সামলাতে সামলাতে সাইফুল ভাবে এই পৃথিবীর বুকে কত সাইফুলের এভাবে বটের চারার মত সিমেন্ট সমাধি হয় তা কি এই রাজধানী নামক অহংকারী নগরী জানে?

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn