রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভিসি হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে যোগদান করেছেন অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সোবহান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক। রোববার বিকেল ৫টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আদেশক্রমে সহকারী সচিব আবদুস সাত্তার মিয়া প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন।

মন্ত্রণালয় থেকে জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ১৯৭৩ এর ১১ (২) ধারা অনুযায়ী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আব্দুস সোবহানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে নিয়োগ প্রদান করতে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।’

প্রজ্ঞাপনে নিয়োগের শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, ভিসি হিসেবে তাঁর নিয়োগের মেয়াদ হবে চার বছর। তবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর প্রয়োজন মনে করলে এর পূর্বেই এ নিয়োগাদেশ বাতিল করতে পারবেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন। এ নিয়োগাদেশ তাঁর যোগদানের তারিখ হতে কার্যকর হবে।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ৪৮ দিন শূণ্য থাকার পর ভিসি পেলেও প্রো-ভিসি পদে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। বিগত মেয়াদগুলোতে ভিসি ও প্রো-ভিসি পদে একসঙ্গে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রথম মেয়াদে অধ্যাপক সোবহান ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সময় তাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের ফ্যাক্স রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছালে বিকেল পৌনে ৬টার দিকে প্রশাসন ভবনে এসে দায়িত্বগ্রহণ করেন অধ্যাপক সোবহান। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি প্রশাসন ভবনের সামনে পৌঁছালে সেখানে আগে থেকে ফুলের তোড়া নিয়ে উপস্থিত স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দলীয় স্লোগান দিতে থাকে। পরে তিনি ভিসি দফতের গিয়ে দায়িত্বগ্রহণ করেন। এ সময় রাবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মু. এন্তাজুল হক, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মজিবুল হক আজাদ খানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ২০/২৫ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। তবে সদ্য বিদায়ী প্রশাসনের আমলে নিয়োগ পাওয়া ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান এবং জনসংযোগ দফতরের প্রশাসককে অধ্যাপক মো. মশিহুর রহমানসহ বেশিরভাগ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানদের সেখানে দেখা যায় নি।

দায়িত্বগ্রহণকালে অধ্যাপক সোবহান ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। ধন্যবাদ জানান রাজশাহী মহানগর, জেলা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘কারও প্রতি আমার হিংসা-বিদ্বেষ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় সবার, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতা পেলে আমি নিশ্চিত সুচারুভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে পারব।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ১৯৭৩ সালে প্রণীত অধ্যাদেশের নিয়ম এড়িয়ে অলিখিতভাবে নিয়ম হয়ে ওঠা পদ্ধতিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী- আওয়ামীপন্থী তিন জন অধ্যাপকের নাম প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে মনোনীত করে রাষ্ট্রপতি দফতরে যায়। রাষ্ট্রপতি চুড়ান্তভাবে ভিসি পদে একজনকে নিয়োগে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। অথচ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ১১ (২) ধারা অনুযায়ী- বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে তিনজন অধ্যাপককে মনোনীত করা হবে। ওই তিনজনের প্যানেল থেকে একজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি ভিসি পদে নিয়োগ দেবেন।

গত ১৯ মার্চ বিদায়ী ভিসি অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মিজানউদ্দিন ও প্রো-ভিসি অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহানের মেয়াদকাল শেষ হয়। এর পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ দুই পদ শূণ্য ছিল। সবশেষ ৪ মে কোষাধ্যক্ষ পদও শূণ্য হয়ে যায়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn