রাজধানীর বনানীর একটি রেস্টুরেন্টে বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত পাঁচ আসামিকে ধরিয়ে দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। শনিবার দিবাগত রাত ১টা ২৪ মিনিটে এই স্ট্যাটাস দেন মন্ত্রী। ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে শাহারিয়ার আলম লিখেছেন, ‘আপনারা যারা সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, বিল্লাল হোসেন, সাদনান ও সাকিফকে চেনেন, তারা দয়া করে বনানী থানায় বিস্তারিত জানান এবং ছবি প্রকাশ করুন যেন অন্য কেউ তাদের খোঁজ দিতে পারে।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘এদের মধ্যে সাফাত ও নাঈম দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তারা ওই দুই ছাত্রীর বন্ধু বলে পুলিশ পরিদর্শক মতিন জানান। এরাই অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের ধর্ষণ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন দুই ছাত্রী।’

এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত পাঁচ আসামির একজন আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ (২৬)।  আরেক আসামি সাদমান সাকিফ (২৪) পিকাসো রেস্টুরেন্টের মালিকের ছেলে। ঘটনার সঙ্গে দুই প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান জড়িত থাকায় আসামিদের নির্দোষ প্রমাণ করতে নানা ধরণের তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। যদিও পুলিশের দাবি তারা মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছেন। আসামিরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

ভুক্তভোগী দুই তরুণীর একজন বলেন, জড়িতদের মধ্যে তিনজনই প্রভাবশালী পরিবারের। সাফাতের বাবা দিলদার আহমেদ আপন জুয়েলার্সের মালিক। তারা ঘটনার পর থেকেই আমাদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। আসামীদের একজন তাদের দেহরক্ষীকে আমার বাসায় পাঠিয়ে হুমকিও দিয়েছিল। তাদের ভয়েই আমরা মামলা করতে দেরি করেছি। মামলা হওয়ার পরও তারা হুমকি দিয়েই চলেছে। প্রতিনিয়ত তারা তাদের লোক দিয়ে আমাদের অনুসরণ করাচ্ছে। গত ২৮ মার্চ দ্য রেইন ট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে আমন্ত্রণ করে ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। ঘটনার এক সপ্তাহ পর শনিবার রাতে ভুক্তভোগীদের একজন বনানী থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে। সাফাত ও সাদমান ছাড়াও ওই মামলার অন্য আসামিরা হলেন- নাঈম আশরাফ (৩০), সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল (২৬) ও অজ্ঞাতনামা দেহরক্ষী।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আবদুল আহাদ বলেন, আসামিরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের গ্রেফতারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। রোববার পর্যন্ত তাদের অবস্থান নিশ্চিত করা যায়নি। তবে তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যহত রয়েছে। আশা করছি শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।  বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মতিন বলেন, সাফাত ও নাঈম দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তারা ওই দুই তরুণীর বন্ধু। জন্মদিনের পার্টিতে দাওয়াত করে হোটেলে নেওয়ার পর সাফাত ও নাঈম হোটেলের একটি কক্ষে নিয়ে রাতভর দুই তরুণীকে আটকে রেখে মারধর এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। আসামিদের অপর তিনজন ধর্ষণে সহায়তা ও ভিডিও ধারণ করেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এদিকে ধর্ষকদের ধরিয়ে দেয়ার আহবান জানিয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। তিনি লিখেছেন, ‘আপনারা যারা সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, বিল্লাল হোসেন, সাদনান ও সাকিফকে চেনেন, তারা দয়া করে বনানী থানায় বিস্তারিত জানান এবং ছবি প্রকাশ করুন।  যেন অন্য কেউ তাদের খোঁজ দিতে পারে।  তাদের মধ্যে সাফাত ও নাঈম দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তারা ওই দুই ছাত্রীর বন্ধু বলে পরিদর্শক মতিন জানান। এরাই অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের ধর্ষণ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন দুই ছাত্রী।’

সেদিন যা ঘটেছিল দ্য রেইন ট্রি হোটেলে

মামলার এজাহারে ভুক্তভোগী তরুণীদের একজন উল্লেখ করেছেন, ‘আসামিরা ২৮ মার্চ ৯টা হতে পরের দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত বনানীর দ্য রেইন ট্রি’ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে আমাকে, আমার বান্ধবী এবং এক বন্ধুকে আটকে রেখে সবাইকে মারধর করে।  অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে অশ্লীল গালিগালাজ করে।’  ‘আমাকে ও আমার বান্ধবীকে রুমের মধ্যে জোরপূর্বক নেশাজাতীয় মদ্যপান করে আমাকে এক নম্বর আসামি এবং আমার বান্ধবীকে দুই নম্বর আসামি জোরপূর্বক একাধিকবার ধর্ষণ করে। ’  ‘তিন নম্বর আসামি সাকিফকে দুইবছর ধরে চিনি। তার ম‍াধ্যমে এক নম্বর আসামির সঙ্গে পরিচিত হই। গত ২৮ মার্চ তার জন্মদিন উপলক্ষে এক নম্বর আসামির গাড়িচালক ও দেহরক্ষীকে পাঠিয়ে আমাদেরকে নিকেতন হইতে বনানীর রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়। ’ হোটেলে ছাদে বড় অনুষ্ঠান হবে বলে আমারদেরকে নেওয়া হয়েছিলো উল্লেখ করে ওই ছাত্রী এজাহারে বলেন, ‘যাওয়ার পর ওরা ছাড়া আর কোনো লোক দেখি নাই। পরবর্তীতে জোরপূর্বক ধর্ষণের সময় গাড়িচালককে ভিডিও করতে বলে সাফাত।’ ‘ঘটনার প্রতিবাদের কথা বললে নাঈম আমাকে মারধর করে। পরবর্তীতে আমাদের বাসায় দেহরক্ষী পাঠিয়েছিলো আমাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য। এতে ভয় পেয়ে যাই এবং লোক লজ্জা ও মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে বন্ধু, আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলা করতে বিলম্ব হয়। ’

দুই তরুণীর ফরেনসিক টেস্ট করতে মেডিকেল বোর্ড গঠন

ধর্ষণের শিকার ওই দুই তরুণীর ফরেনসিক টেস্টের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ ছাড়া কমিটির অন্যান্যরা হলেন- ডা. কবির সোহেল, ডা. মমতাজ আরা, ডা. নীলুফার ইয়াসমিন ও ডা. কবিতা সাহা। রোববার দুপুরে ডা. সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে দুই নারী পুলিশ সদস্য ওই দুই তরুণীকে পরীক্ষার জন্য ঢামেকে নিয়ে আসেন। তরুণীদের মাইক্রোবায়োলজি, রেডিওলজি ও ডিএনএ পরীক্ষাগুলো করা হবে। ১৫-২০ দিনের মধ্যে পরীক্ষার প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে আশা করছি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn