ধর্মপাশায় ডিগ্রি পাস পরীক্ষা দিতে পারেনি তিন শিক্ষার্থী
জুঁই সরকার বাদশাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্স পরীক্ষার প্রথম বর্ষের পরীক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর থানার চামরদানি গ্রামে। মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে ধর্মপাশা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা কথা ছিল তাঁর। কিন্তু গত সোমবার দুপুরে তিনি পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহ করার জন্য কলেজে এসে দেখেন তাঁর প্রবেশপত্র নেই। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানায়, তাঁর ফরম পূরণ করা হয়নি বলেই প্রবেশপত্র আসেনি। অথচ জুঁই সরকার গত বছরের ২৬ নভেম্বর ৩ হাজার ৩০০ টাকা জমা দিয়ে ফরম পূরণ করেছিলেন। ফরম পূরণের জন্য কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিস সহকারি কামরুল ইসলামের নিকট এ টাকা জমা দিয়েছিলেন তিনি। শুধু জুঁই সরকারই নয় উমা রাণী সরকার ও শীমা বেগম নামের আরও দুই পরীক্ষার্থী ফরম পূরণের টাকা অফিস সহকারি কামরুল ইসলামের নিকট টাকা জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু অফিস সহকারি কামরুল ইসলাম সেই টাকা ফরম পূরণের কাজে ব্যবহার না করে তা আত্মসাত করেন। ফলে ফরম পূরণ না হওয়ায় এ তিন পরীক্ষার্থী মঙ্গলবার ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
জানা যায়, কলেজ কর্তৃপক্ষ অফিস সহকারি কামরুল ইসলামকে ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্স পরীক্ষার ফরম পূরণের দায়িত্ব দেয়। অথচ কামরুল ইসলাম এইচএসসি শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত একজন অফিস সহকারি। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে দিয়েই বিএ/বিএসএস শাখার কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। বিএ/বিএসএস শাখার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০০০ সালের ২০ জুন লুৎফুর রহমান উজ্জ্বল নামের একজন অফিস সহকারি নিয়োগ দেওয়া হয় এ কলেজে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না থাকায় আজ পর্যন্ত লুৎফুর রহমান উজ্জ্বল এ শাখায় কোনো কাজ করতে পারেননি।
শিক্ষার্থী জুঁই সরকার বলেন, ‘আমি প্রবেশপত্র নিতে আসলে অফিস সহকারি কামরুল ইসলাম জানায় আমার ফরম পূরণ হয়নি তাই প্রবেশপত্র আসেনি। আমি ৩ হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করেছিলাম, উনি আমাকে রশিদও দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই টাকা আত্মসাত করায় আমি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারিনি।’শিক্ষার্থী উমা রাণী সরকার বলেন, ‘অফিস সহকারি কামরুল ইসলামের কাছে ফরম পূরণের টাকা জমা দেই। তখন তিনি আমাকে রশিদ না দিয়েই বিদায় করে দেন। কিন্তু প্রবেশপত্র নিতে এসে দেখি আমার ফরম পূরণ হয়নি।’
প্রবেশপত্র না আসায় সীমা বেগম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি এমনটি জানিয়ে তাঁর অভিভাবক রুপন শাহ বলেন, ‘সীমার ফরম পূরণের জন্য ২ হাজার ৭০০ টাকা জমা দিয়েছিলাম। এর মধ্যে ২ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।’
অভিযুক্ত অফিস সহকারি কামরুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি টাকা নিয়েছিলাম। আমার ভুলের কারণে এমনটি হয়েছে। এমন ভুলের জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। ভবিষ্যতে আর এমনটি হবেনা।’ বাদশাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘অফিস সহকারি কামরুল ইসলাম তিনজন পরীক্ষার্থীর ফরম পূরণের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কলেজের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সাথে জরুরি সভা করে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বিএ/বিএএস শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত অফিস সহকারি থাকা সত্যেও এইচএসসি শাখার অফিস সহকারিকে কেন এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে কোনো অফিস সহকারিকে দিয়েই এ কাজ করিয়ে নেওয়া যায়।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন খন্দকার বলেন, ‘তিনজন ছাত্রীর জীবন থেকে একটি বছর কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’