ট্যাক্স আদায় না করলে পৌরসভায় বরাদ্দ নয়: মোশাররফ হোসেন
সন্তোষজনক আয়কর আদায় করতে না পারলে পৌরসভাকে আগামী অর্থবছরে সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘পৌরসভা মেয়রদের বেতন দ্বিগুন করা হয়েছে। আপনারা কেন আপনাদের আয় বাড়াবেন না? ট্যাক্সও ডাবল করেন।’ মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে বেলারুশ হতে আমদানি করা মেশিনারিজ ও যন্ত্রপাতি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। বেলারুশ থেকে আমদানি করা ১৩৯৫ টি যানবাহন ও যন্ত্রপাতির মধ্যে ১৪৩ টি যানবাহন ও যন্ত্রপাতি বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কাছে বিতরণ করেন মন্ত্রী।
এরমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩৫টি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৩৫টি, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ২৩টি, ময়মনসিংহ পৌরসভায় সাতটি, ফরিদপুর সাতটি, সাভার চারটি, নরসিংদী চারটি, ঘোড়াশাল চারটি, গোপালগঞ্জ চারটি, টুঙ্গিপাড়া চারটি, কোটালীপাড়া চারটি, পটুয়াখালী সাতটি, বাউফল চারটি ও ভেদরগঞ্জ পৌরসভায় একটিসহ মোট ১৪৩টি যানবাহন ও যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হয়। শিগগিরই দেশের বাকি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় এসব যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
বিভিন্ন পৌরসভা থেকে আসা মেয়রদের উদ্দেশ্যে এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, ‘পৌরসভা হচ্ছে সেলফ গভর্নমেন্ট। পৌরসভার ক্ষমতা আছে জনগণ থেকে সরাসরি আয়কর আদায়ের, যেটা আমরা পারি না। আমরা তো জনগণ থেকে পাঁচ টাকাও আদায় করতে পারব না। আপনারা পারেন। কেন করছেন না? ভোট কমে যাবে এই কারণে আপনারা জনগণের কাছে যান না। আমি জানি ট্যাক্স আদায় করাটা অপ্রীতিকর কাজ তারপরেও এটা করতে হবে। জনগণের কাছে যেতে হবে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’
পৌরসভার নিজস্ব আয় বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘অনেক পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরি সরকারি করার দাবি জানাচ্ছেন। তাদের চাকরি যদি সরকারি করে দেই তাহলে তো আর মেয়রদের লাগে না। সেখানে সরকারি অফিসারদের বসিয়ে দিলেই হয়ে যায়। কী বলেন আপনারা। আপনারা কি সেটা চান? যদি না চান তাহলে আয় বাড়ান। তাদের বেতন বাড়ান।’ এসময় বেশ কয়েকজন পৌর মেয়র তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। পটুয়াখালীর পৌরসভার মেয়র ডা. শফিকুল ইসলাম জানান, ‘অনেক পৌরসভায় সরকারি জমি পতিত হয়ে আছে। সেগুলো যদি আমাদের দেয়া হয় তাহলে সেখানে মার্কেট করে আয় বাড়ানো যায়।’
তার এমন প্রস্তাবের বিষয়ে এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, ‘জমির মালিক হচ্ছে জেলা প্রশাসক। সেগুলো তো আর আমরা দিতে পারব না। মালিক একজন আর দাবি যদি করেন আরেকজনের কাছে তাহলে বিষয়টি কেমন হয়। তবে আপনারা যদি ডিসির কাছে আবেদন করেন আমরা সহযোগিতা করব।’ একজন মেয়র বলেন, ‘পৌরসভার অনেক মানুষ গরীব তাদের কাছে কীভাবে ট্যাক্স ডাবলের কথা বলবো।’ মন্ত্রী বলেন, ‘আমরাও তো গ্রামে যাই। গ্রামের মানুষ যে গরীব সেটা আমিও জানি। আমাকে এসব বোঝাতে হবে না। আপনারা ঠিকভাবে অ্যাপ্রোস করেন।’, খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আগামীতে ট্যাক্স আদায়ের হার দেখে অর্থ বরাদ্দ করা হবে। আপনারা যদি আয় না বাড়ান তাহলে কিন্তু হবে না। সরকার তো আপনাদের সব কাজ করে দেবে না। হঠাৎ করে জরুরি প্রয়োজনে লাগলে সরকার পাশে থাকবে। এখন চিঠি লিখে দেবেন। আর টাকা পেয়ে যাবেন তা হবে না। ট্যাক্সের টাকা দিয়ে আপনার প্রয়োজন মেটাতে হবে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, বেলারুশ আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা সব সময় আমাদের পাশে আছে। ৫০ মিলিয়ন টাকা তারা আমাদের ঋণ সহায়তা দিয়েছে। সেটা দিয়ে আমরা আজকের যন্ত্রপাতি আমদানি করেছি। কিছুদিন আগে বেলারুশের শিল্পমন্ত্রী এসেছেন। তিনি বলেছেন আরও ১৭ মিলিয়ন ডলার ঋণ সম্প্রসারণ করেছেন। এছাড়া আরও ১০০ মিলিয়ন ঋণ সম্প্রসারণ করবেন। আজকে আপনাদের যে যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে সেগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে হবে। অপারেটরদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সেটার ব্যবস্থাও আছে।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে প্রধানমত্রীর বেলারুশ সফরের সময় বেলারুশ থেকে সহজ শর্তে দ্রব্য ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে দ্রব্য আমদানির বিষয়ে একই বছরের ৯ জুলাই একটি চুক্তি সই হয়। যে চুক্তির আলোকে স্থানীয় সরকার বিভাগ কমোডিটি ক্রেডিটের মাধ্যমে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোর জন্য বেলারুশ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলারের মেশিনারিজ যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়। আমি আশা করব এগুলোর যথাযথ ব্যবহার করা হবে। যারা অপারেটর আছে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাগুলো থেকে আসা প্রতিনিধিদেরকে নির্দেশ দেন মন্ত্রী।এসব যন্ত্রপাতি পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ড্রেন নির্মাণ, মেরামত ও পরিষ্কার, রাস্তা নির্মাণ ও মেরামত কাজে ব্যবহৃত হবে বলে জানান মন্ত্রী। অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, আজকে যে যন্ত্রপাতি দেয়া হচ্ছে তা আমাদের সিটি করপোরেশন এবং পৌসভাগুলোর জন্য প্রতিদিনই দরকার হয়। এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এ উদ্যোগের মাধ্যমে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যাবে বলে আশা করছি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেলে ঢাকার রাস্তাঘাট পরিষ্কার হচ্ছে না জানতে চাওয়া হয় বলে জানান আনিসুল। তিনি এ প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমরা ময়লার ভিন বানিয়েছি। কিন্তু সেখানে ময়লা ফেলা হয় না। রাতে ভিন চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়। ভিনের পাশে ময়লা ফেলা হয়। আমরা (জনগণ) সচেতন না হলে রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা সম্ভব না। তবে আমাদের যদি প্রশ্ন করা হয় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী আমি বলবো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এটা নিয়ে আমরা যুদ্ধ করছি। এই যুদ্ধ আমাদের সবার।