দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সামগ্রিক অধিকার আদায় ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের একত্রিতকরণের লক্ষে ‘বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ’ নামের একটি রাজনৈতিক সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে। যাত্রার শুরুতেই সংগঠনটি সংসদে সংরক্ষিত ৬০টি আসন দাবি করেছে। এর আগে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদ এই দাবি জানায়। শুক্রবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে দলটি। নতুন এই দলের সভাপতি দিপংকর শিকদার বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে আমরা এখনো স্বাধীনতা ভোগ করতে পারিনি। স্বাধীনতার আগে ও পরে বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠী ছিল ৪০ শতাংশ; যা বর্তমানে আছে আট শতাংশ। প্রতিনিয়ত ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ, ভয়ভীতি, বিভিন্ন অত্যাচারের ফলে প্রতিনিয়ত আমরা পার্শ্ববর্তী ভারতে পালিয়ে যাচ্ছি। আমরা আর এই দেশে থেকে পালিয়ে যেতে চাই না, প্রয়োজনে জীবন দেব।’

সভাপতি জানান, বাংলাদেশ হিন্দু সম্পদায়ের হিন্দুত্ব রক্ষায় ধর্মীয় ও গণতন্ত্রের স্বার্থে রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের লক্ষে সারাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে লড়াই করার জন্য নেতাকর্মীদের এখন থেকেই সোচ্চার হতে আহ্বান জানান তিনি। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে হিন্দু সমাজের কোনো রাজনৈতিক দল নেই দাবি করে বিভিন্ন নেতাকর্মীরা তাদের বক্তব্যে বলেন, ‘দেশের আপামর হিন্দু সমাজের কল্যাণ করার মতো কোনো রাজনৈতিক দল নেই। নির্বুদ্ধিতার যাঁতাকলে হিন্দুরা জীবনভর অন্যের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে।’ নিজেদের মধ্যে অনৈক্য ও বিভিন্ন সময়ে একটু শান্তির আশায় মাতৃভূমি ত্যাগ করাতে বাংলাদেশের হিন্দুদের সংখ্যা ১০০ ভাগ থেকে কমে ১০ ভাগে নেমে এসেছে বলে দাবি করেন এই দলের নেতারা।

প্রতিনিয়ত হিন্দুদের ওপর নির্যাতন, হামলা, অগ্নিসংযোগ, মঠ-মন্দির ভাঙচুর, হিন্দুদের ধর্ষণ ও অপহরণ এবং জমি দখলসহ সামাজিক প্রতিকূলতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য পাঁচ দফা দাবি নিয়ে মুষ্টিবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান দলের নেতারা। দলটির সহ-সভাপতি দিলীপ দাস দেওয়ান,  সাধারণ সম্পাদক সাজন কুমার মিশ্র, সাংগঠনিক সম্পাদক রবিন লাল, প্রধান সমন্বয়কারী সুবীর সাহা, এবং সহযোগী দল বাংলাদেশ হিন্দু যুব পরিষদের সভাপতি দেবাশিস সাহা, সাধারণ সম্পাদক অপু মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক মনীষ দাশগুপ্ত ও বাংলাদেশ হিন্দু ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুফল সরকার, সাধারণ সম্পাদক অপু বর্মনসহ নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

পাঁচ দফা দাবি

১. জাতীয় সংসদে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৬০টি সংরক্ষিত আসন, একজন উপ-রাষ্ট্রপতি ও একজন উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ নিশ্চিতকরণ।

২. সরকারি চাকরিতে ২০ ভাগ কোটা নিশ্চিতকরণ এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হিন্দু শিক্ষার্থীদের জন্য হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করা।

৩. বেদখলকৃত সকল দেবোত্তর সম্পত্তি স্ব স্ব মঠ/মিন্দিরে হস্তান্তরসহ উদ্ধারকৃত হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিমা জাদুঘরের পরিবর্তে মঠ-মন্দিরের কাছে ফেরত দেয়া।

৪. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সার্বিক নিরাপত্তার লক্ষে একটি সুরক্ষা আইন পাস ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন।

৫. শারদীয় দূর্গাপূজা তিন দিনের সরকারি ছুটি ও সব বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলকভাবে শ্রী শ্রী সবস্বতী পূজা চালু করা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn