অবসরে যাওয়ার পর আপনাদের বিষয় বাস্তবায়ন কইরেন!
নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধি চূড়ান্ত করতে আবারও দুই সপ্তাহ সময় পেল সরকার।রাষ্ট্রপক্ষের চার সপ্তাহ সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ সময় দেন। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন—বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ বারবার এভাবে সময় চাওয়ায় বিরক্তি প্রকাশ করে। সর্বশেষ এক সপ্তাহ সময় নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানির শুরুতেই রাষ্ট্রপক্ষ বিচারকদের শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধি চূড়ান্ত করতে আরো চার সপ্তাহের সময় আবেদন করে। এ সময় আপিল বিভাগ বলেন, ‘আপনারা দুই সপ্তাহ, চার সপ্তাহ, এক সপ্তাহ করে এক বছরের বেশি সময় নিয়েছেন। এর পর এসে হয়তো ১০ সপ্তাহ সময় চাইবেন। এভাবে এটা চলতে পারে না। প্রতিদিন একই বিষয় নিয়ে আমাদের কথা বলতে হচ্ছে। এটা বেশ লজ্জাজনক।’ ‘কিছুদিন পর প্রধান বিচারপতি অবসরে যাবেন। এরপর আরো দুজন যাবেন। এরপর আপনারা এসে আপনাদের বিষয় বাস্তবায়ন কইরেন। এখন ইটস রিয়েলি সেইমফুল’, যোগ করেন বেঞ্চ।
অ্যাটর্নি জেনারেল তখন দাঁড়িয়ে থেকে বক্তব্য শোনেন। পরে শুনানি শেষে বিচারক দুই সপ্তাহের সময় দেন। ১৯৮৯ সালে সরকার বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কিছু পদের বেতন স্কেল বৃদ্ধি করে। এতে অন্য ক্যাডারদের সঙ্গে অসংগতি দেখা দেয়। তৎকালীন সরকার এই অসংগতি দূর করার জন্য ১৯৯৪ সালের ৮ জানুয়ারি জজ আদালতের বেতন স্কেল বাড়িয়ে দেয়। প্রশাসন ক্যাডারের আপত্তির মুখে সরকার ওই বেতন স্কেল স্থগিত করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মাসদার হোসেনসহ ৪৪১ জন বিচারক ১৯৯৫ সালে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ১৯৯৭ সালে হাইকোর্ট পাঁচ দফা সুপারিশসহ ওই মামলার রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে আপিল বিভাগ ১৯৯৯ সালে ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করার ঐতিহাসিক রায়টি দেন। মাসদার হোসেন মামলার রায় ঘোষণার আট বছর পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা হয়। ওই সময় যে চারটি বিধিমালা গেজেট আকারে জারি করা হয়েছিল, এর মধ্যে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরি, নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা বিধান এবং চাকরির অন্যান্য শর্ত) বিধিমালা, ২০০৭ একটি। যেখানে বলা হয়েছে, পৃথক বিধি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধান করা হবে ১৯৮৫ সালের গভর্নমেন্ট সার্ভিস রুলস অনুযায়ী। তবে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের ৭ নম্বর নির্দেশনা অনুযায়ী সেই জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের জন্য পৃথক শৃঙ্খলাবিধি এখনো তৈরি হয়নি।