কোন্দলে ঝিমিয়ে পড়েছে জেলা ছাত্রলীগ
কমিটি নেই প্রায় আড়াই মাস। সাংগঠনিক কার্যক্রম পড়েছে ঝিমিয়ে। নেতাকর্মীরা হয়ে পড়েছেন গ্রুপ-উপগ্রুপে বিভক্ত। এমনই অবস্থা সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের। ছাত্রলীগের এক সাবেক নেতা হতাশা প্রকাশ করে বললেন,‘জাতির জনকের হাতে গড়া প্রাণের ছাত্রলীগ সুনামগঞ্জে এখন অভিভাবকহীন,প্রাণহীন’।
জেলা নেতৃবৃন্দ সম্মেলন করতে ব্যর্থ হওয়ায় ১১ মার্চ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে দেয় কেন্দ্র। বিলুপ্ত হওয়ার পর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে আগ্রহী নেতাদের জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহ করে কেন্দ্র। তিন কেন্দ্রীয় নেতা এই জীবন বৃত্তান্তগুলো সংগ্রহ করেন। জীবন বৃত্তান্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জমা দেওয়ার আড়াই মাস পরও নতুন কমিটি হয়নি। এদিকে সম্ভাব্য পদপ্রত্যাশীরা ঢাকায় যাওয়া-আসার মধ্যে সময় পার করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলা ছাত্রলীগের দুটি বড় পদ বাগিয়ে নিতে দীর্ঘদিন ধরেই তৎপর জেলা আ.লীগের চারজন প্রভাবশালী নেতা। তাদের সঙ্গে নতুন করে দু’জন এমপি যুক্ত হয়েছেন পদ বাগিয়ে নিতে। জেলা আ.লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য আয়ূব বখত জগলুলের নিজস্ব প্রার্থী আছে। এর মধ্যে আয়ূব বখ্ত জগলু ছাড়া অন্য গ্রুপে একাধিক পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতা আছেন। আ.লীগের নেতারা ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে অনড় অবস্থানের কারণে বিপাকে পড়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও। দফায় দফায় আলোচনা করেও কেন্দ্র সুনামগঞ্জ জেলা কমিটি দেয়ার ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছতে পারছে না। কোন আ.লীগ নেতাই শীর্ষ পদ ছাড়তে রাজি নন। সংগঠন সূত্র আরো জানায়, জেলা আ.লীগ সভাপতি মতিউর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট, পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য আয়ূব বখত জগলুল অন্য গ্রুপকে (ব্যারিস্টার ইমন গ্রুপ) ভাগ না দিয়েই জেলা ছাত্রলীগের পুরো কমিটি নিজেদের আয়ত্বে আনতে চান। এজন্য তারা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে এক্ষেত্রে তিন আ.লীগ নেতার ছাত্রলীগ অনুসারীদের মধ্যে এক নেতার অনুসারী বাদ পড়বেন পদের লড়াইয়ে।।অন্যদিকে জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন অন্য তিন আ.লীগ নেতাকে ছাত্রলীগে ‘ভাগ’ দিতে নারাজ। দুটির পদের মধ্যে তিনি নিজে একটি অন্যটি জেলার প্রতিমন্ত্রী ও এমপি বলয়কে দিতে চাচ্ছেন। আর বিষয়টি কাজে লাগিয়ে সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও সংরক্ষিত আসনের এমপি অ্যাড. শামছুন নাহার বেগম (শাহানা রব্বানী) মিলে একজন প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন বলে জানাগেছে।
দীর্ঘ দুই মাস ধরে কমিটি না থাকায় সুনামগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছেন। ঢাকা-সুনামগঞ্জ দৌড়াদৌড়ি করেই সময় কাটছে তাদের। তাদের অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই মূলত নিজেদের সক্রিয় রাখছেন। হাতে গোনা দু’একজন নেতাকর্মীরা ছাড়া হাওর বিপর্যয় অথবা এসএম জাকির হোসাইন নির্দেশিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে পদপ্রত্যাশী অধিকাংশ নেতাদেরই দেখা যায়নি। বর্তমানে জেলা ছাত্রলীগের প্রায় ১৫ জন নেতা পৃথকভাবে সংগঠনের কার্যক্রম ঢিমেতালে চালাচ্ছেন। তারা নেতাদের গ্রুপ-উপগ্রুপ হিসেবে সংগঠনে আছেন। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোশারফ হোসেন ইমন বলেন, কমিটি না থাকলে স্বাভাবিকভাবেই সংগঠনে গতিশীলতা কমে যায়, ঝিমিয়ে পড়বে নেতাকর্মীরা। এক্ষেত্রে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগও ব্যতিক্রম নয়। সংগঠন গতিশীল করতে হলে দ্রুত কমিটি দেয়া প্রয়োজন। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নূরে আলম সিদ্দিকী উজ্জ্বল বলেন, অনেক দিন ধরেই সুনামগঞ্জের কমিটি নেই, যা হতাশাজনক। কেন্দ্রের সময় ক্ষেপণের কারণে যারা নেতৃত্ব আসতে চাচ্ছেন তাদের অনেকেরই বয়স চলে যাচ্ছে, অনেকের চলে গেছে। এরকম চললে আনকোড়া নেতৃত্ব আসবে। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন ইউনিটে কমিটি নেই, নতুন নেতৃত্ব বের হয়ে আসতে পারছে না। ইউনিট কমিটি না থাকলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। কারণ নির্বাচনে প্রচারণা, গণসংযোগের একটা বিশাল দায়িত্ব পালন করে থাকে ছাত্রলীগ। বর্তমানে অনেক ত্যাগী, পরিশ্রমী নেতা হতাশ হয়ে অন্য সহযোগী সংগঠনে চলে যাচ্ছে। আমি সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে চাই দ্রুত কমিটি করা হোক এবং কমিটিতে নিয়মিত ছাত্র,সংগঠনের ত্যাগীদের স্থান দেয়া হোক। যাতে কমিটি গ্রহণযোগ্য হয়। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে ফজলে রাব্বী স্মরণকে সভাপতি ও রফিক আহমেদ চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন হয়েছিল।
সূত্রঃ সুনাম কন্ঠ