দোয়ারাবাজারে ঘুর্ণিঝড় তাণ্ডব: বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত বিভিন্ন গ্রাম
ফের দূর্ভোগে কাবু হয়ে পড়ছেন দোয়ারাবাজারের মানুষ। চৈত্রের ভয়াবহ দূর্ভোগের রেশ কাটতে না কাটতে শনিবার ভোরে আকস্মিক ঘূুর্ণিঝড় (জলহস্তি) তাণ্ডবে বসত ঘর উড়ে গিয়ে অন্তত ২০ পরিবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অন্যদিকে শুক্রবার রাত হতে টানা বর্ষণে পাহাড়ীঢল নেমে চিলাই, খাসিয়মারা, মারগাঙ্গসহ কয়েকটি পাহাড়ী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে উপজেলার ৪ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বোগুলাবাজার, সুরমা, বাংলাবাজার ও নরসিংপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। শনিবার দুপুরে ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বসত ঘর ও প্লাবিত এলাকা ঘুরে দেখেছেন- সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম, দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ চেয়ারশ্যান অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীরপ্রতিক, নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া।
সরজমিন গিয়ে জানা গেছে- শনিবার ভোরে লোকজন সেহরি খাওয়ার পর সুরমা ইউনিয়নের গিরিশ নগর গ্রামের নিকটবর্তী দেওলার হাওর থেকে প্রচন্ড গতিবেগে বিকট শব্দে ঘুর্ণিঝড় (জলহস্তি) তান্ডবে মুহুর্তের মধ্যে গিরিশ নগর গ্রামের শরাফত আলী, আলফত আলী, সোহেল মিয়া, মতিন মিয়া, গোলাপ মিয়া, সাহারা খাতুন, আবুল কাশেম, বরকতনগর গ্রামের সোনাফর আলী, রাশিদ আলী, আং কাদির, দেলোয়ারা বেগম, বাতির আলীসহ অন্তত ২০টি টিনসেডের বসত ঘর উড়ে যায়। বিধ্বস্ত হয় অসংখ্য কাচা বসত ঘর। এসময় বিধ্বস্ত ঘরেন নীচে চাপা পড়ে থাকা লোকজনকে উদ্ধার করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘূর্ণিঝড়ে চাপা পড়ে নারী ও শিশু সহ অন্তত ২০ জন আহত হন। এসময় অলৌকিকভাবে বেঁচে যান টিনসেডের নীচে চাপা পড়া নারী ও শিশুসহ অসংখ্য লোকজন।
সুরমা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান মাস্টার জানান- এটা অলৌকিক ঘটনা। হঠাৎ বিকট শব্দে মুহুর্তের মধ্যে বেশ কিছু বাড়ী ঘর উড়ে যায়। লন্ডভন্ড হয়ে যায় গাছপালা। গিরিশ নগরে ৭টি বসত ঘরের টিনের চাল উড়ে গিয়ে অন্তত দুই শ’ তিন শ’ ফুট দূরে পড়েছে। বিধ্বস্ত ঘরের নীচে অনেকে চাপা পড়লে স্থানীয়রা এসে তাদের উদ্ধা করেন। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন খোলা আকাশের নীচে রয়েছে।
অপরদিকে গত শুক্রবার রাত থেকে ভারী বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ীঢলে খাসিয়ামারা, মরা নদী, চিলাই, মৌলা, চেলা ও মরা চেলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে প্রচন্ড গতিবেগে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয় চার ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা। শনিবার ভোরে সুরমা ইউনিয়নের খাসিয়া মরা নদীর গিরিশনগর কোণা পাড়া গ্রামের আং গণির বাড়ীর নিকটবর্তী বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয় ৪/৫টি গ্রাম। চিলাই মারগাঙ্গ সিফাত আলীর বাড়ীর নিকট বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সুরমা ইউনিয়নের শিমুলতলা, রাজনগর, সুন্দরপই, গোজাউড়া সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। নদীর তীরবর্তী গ্রাম সহ কেশ কিছু গ্রামের মানুষ ইতোমধ্যে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। পাহাড়ীঢলে চিলাই, মৌলা নদী ও পাহাড়ী নদী গুলোর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বর্তমানে উপজেলার বালাবাজার ইউনিয়নের বাংলাবাজার-হকনগর সড়কটি পানির নীচে তলিয়ে গেছে। ঘিলাতলী, চৌধুরী পাড়া, মৌলারপাড়. দক্ষিণ কলোনী, জুমগাঁও, ইসলামপুর, পেকপাড়া, বোগুলাবাজার ইউনিয়নের আলম খালি, ইদু কোনা, ক্যাম্পের ঘাট, ভোলা খালিসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে হাওরের আউশ ফসল। সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামে বিভিন্ন বসত ঘরে হাঁটু সমান পানি উঠে গেছে। নরসিংপুর ইউনিয়নের চেলা ও মরা চেলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শনিবার সকালে স্থানীয় নরসিংপুরবাজার ও বালিউড়া বাজারে হাঁটু সমান পানি থাকায় ব্যবসায়ীরা শনিবার সকাল থেকে দোকান পাট বন্ধ রেখেছেন। রিপোর্ঠ লেখা পর্যন্ত বর্ষণ ও বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেছেন- শনিবার ভোরে ঘুর্ণিঝড়ে সুরমা ইউনিয়নের গিরিশনগর-বরকতনগর দুটি গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এ ছাড়া পাহাড়ীঢলে প্লাবিত হচ্ছে ৪ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম। সরজমিন ক্ষতিগ্রস্ত ও প্লাবিত এলাকা ঘুরে দেখেছেন জেলা প্রশাসক। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।