অন্ধকারে পিপাসার গল্প…
আজকাল কি যেন হয়েছে পিপাসার? মেয়েটা একা একা দিনের বেলায়ও ঘরের সব পর্দা টেনে অন্ধকারকে ডেকে আনতে চায়। কি এক চাপা অভিমান ভর করেছে পিপসার বুকে। আমার সঙ্গে প্রতিরাতেই কথা হয়, কিন্তু এমন অভিমান নিয়ে থাকতে দেখিনি। বিষয়টা বেশখানিক সময় ধরে ভাবাচ্ছে আমাকে। রাত ২ টা বেজে গেল পিপাসা একটি বারও ফোন করেনি। ওর কিছু একটা হয়েছে, এই ভেবে নিজেই ফোন করে বসলাম। সাধারণত আমি গরিব বলে পিপাসাই আমার ফোন কেটে দিয়ে কলব্যাক করে। আমি ফোন করলাম, যথারীতি কেটে দিল। কিন্তু কলব্যাক করার নামও নেই।
খানিক পর আবার পিপাসাকে ফোন করতে গিয়ে দেখলাম মোবাইলটাই বন্ধ। তখন আমার মাথা ঘুরতে শুরু করেছে। এত ভালো বন্ধু আমরা। দুজনই দুজনাকে খুব ভালো বুঝি। কারো কাছেই গোপনীয়তা বলতে কিছু নেই। একটা মেয়ে হয়েও পিপাসা আমার সামনেই প্রায়ই কাপড় পরিবর্তন করে। ওর নগ্ন দেহ দেখেছি বহুবার। কিন্তু আমার মাঝে লোলুপ দৃষ্টিটুকুও আসেনি। বন্ধুত্বের মধ্যে এমনটা হতেই পারে ভেবে আমি নিজেও খুব আনন্দিত বোধ করি।
আমার বাসার মূল গেইটের চাবিটা বাড়িওয়ালা দিয়েছেন একরাতের গালমন্দ শুনেই। সেদিন একে তো বৃষ্টি হচ্ছিল, তারওপর ৭ প্যাক ভদকা গিলে বাসায় গিয়ে দেখি গেইট বন্ধ। তথন রাত মাত্র দেড়টার মতো বাজে। শুরু হলো মাতালের চিৎকার। বাড়িওয়ালা নিজেই নেমে আসলেন, বললেন এত রাতে গেইট খোলা যাবে না। আমি বললাম-ব্যাটা তোর বাসায় কি মাগনা থাকি নাকি? বাসা ভাড়া দিয়ে থাকি। যা তোর বাসায় থাকবো না, এখনই আমার জিনিসপত্র নিয়ে বের হয়ে যাবো। এখনই গেইট খুলে দে, এখনই বের হয়ে যাবো তোর বাসা থেকে। বাড়িওয়ালা চাচা তো মনের আনন্দে গেইট খুলে দিয়েছেন-এই বুঝি আপদটা বিদায় হবে। গেইট খোলার পরই বললাম-চাচা মিয়া এইবার ঘুমাতে যান। এখন বাসায় ঢুকে গেছি। আর আপনার সঙ্গে বাসা ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়ার মূল কারণই হচ্ছে-এখন ঘুমাতে হবে, পরে কথা বলবো বলেই একটা সিগারেট ধরালাম। পরের দিন দুপুরে বাড়িওয়ালা নিজ দায়িত্বের একটা চাবি দিয়ে গেলেন, আর বলে গেলেন-বাবা এত গিলো না; মরে যাবে তো। আমি আর কিছু বলতে পারি নাই, শুধু সরি বলতে পেরেছিলাম।
রাত ২ টা ২৭ মিনিটে পিপাসার উত্তরার বাসাতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিএনজি করে রওনা দিলাম। তখন আমি বেনসন এন্ড হেজেস ব্রান্ডের রেগুলার সিগারেট খাই। এক প্যাকেট কিনে আরাম করেই একটার পর একটা সিগারেট ধরাচ্ছি। বনানীতে পুলিশ সিএনজি থামালো। পরিচয় দেয়ারও সুযোগ নেই, আগে নামতে হবে আমাকে। নামলাম -একজন সিভিল ড্রেসের পুলিশ সিএনজির ভিতরে লাইট জ্বালিয়ে চেক করছে। আমি দায়িত্বরত অফিসারকে বললাম-উনার ইউনিফর্ম নেই কেন? উনি আমার সিএনজি কেন চেক করবেন? আপনার গায়ে ইউনিফর্ম আছে-আপনি চেক করুন। পুলিশের এস আই তো ক্ষেপে মহারাজা হয়ে গেছেন। আমাকে আইন শিখাস নাকি বেটা? উত্তেজিত হয়ে পারে না আঘাত করে বসে। বললাম-শান্ত হয়ে কথা বলুন। আমি দেশের প্রথম শ্রেণীর একজন নাগরিক। করি সাংবাদিকতা…আপনাকে কেন আইন শিখাতে যাবো। এবার তিনি ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললেন-ভাইজান আপনি চলে যান। আমি কথা না বাড়িয়ে আবার সিগারেট ধরিয়ে সিএনজিতে উঠলাম।
অভিজাত এ্যাপার্টমেন্ট বলে পিপাসার বাসার গেটে সবসময়ই কেয়ারটেকার থাকে। প্রায় পৌনে ৪ টার দিকে পিপাসার ঘরে প্রবেশ করলাম। কলিং বেল তিনদফা বাজানোর পর প্রায় ৭ মিনিট পর দরজা খুললো পিপাসার বাসার কাজের ছেলে মহিদ। ছেলেটা দেখতে হৃষ্টপুষ্ট। কিন্তু আজ ওর চেহারাটা দেখে বেশ মলিন মনে হলো। বললাম পিপাসা কোথায়? মহিদ কিছু না বলেই ঘুমাতে চলে গেল।
আমি পিপাসার রুমে ঢুকতে কখনো নক করি না, সরাসারি ঢুকে পড়লাম। ঘুটঘুটে অন্ধকারে একা একা রিডিং টেবিলের পাশে সম্ভবত বসে আছে পিপাসা। কিন্তু ওকে দেখতে পাচ্ছি না। বাইরের রুমের খানিকটা আলো প্রবেশ করায় পিপাসা চিৎকার করে বলে উঠলো-এই রাতেও তুই প্যারা দিবি। দরজা বন্ধ কর তারাতারি।
আমি দরজা বন্ধ করলাম। বললাম-লাইট কি অন করবো। আবারো চিৎকার বললো-অন্ধকার উপভোগ করছি। কেন বিরক্ত করছিস? ঠিক আছে বলে আমি বিছানায় শুয়ে পড়েছি। কিন্তু মিনিটখানেক পরই পিপাসা বললো বন্ধু লাইট অন করতে পারবি না। আমি এখন মোমবাতি জ্বালাবো। তুই তো একটা বিড়িখোর। দে তো তোর ম্যাচটা দে। আমি পকেট থেকে লাইটার বের করে দিলাম। পিপাসা বললো, একজন মানুষ একা থাকলেই পুরোপুরি অন্ধকারে থাকতে পারে। দুজন হলেই মুখ দেখতে ইচ্ছে করে। এটা প্রকৃতির নিয়ম।
প্রশ্ন করলাম-ফোন কেটে বন্ধ করে দিলি কেন? হাসতে হাসতে বললো-তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল-তাই ফোন কেটে দিয়েছিলাম।
তারিখ: ২১-০৩-২০১৭ ইং, প্রথম প্রহর
লেখক: নিজস্ব প্রতিবেদক, পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজ