অন্য এক বিপাশার খোঁজে
বিনোদন ডেস্ক:: বিপাশা হায়াত একাধারে একজন অভিনেত্রী, চিত্রশিল্পী ও কণ্ঠশিল্পী। এরমধ্যে তিনি নতুন একটি বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করেছেন। যা প্রচারে আসবে শিগগিরই। আজ গুণী এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। তার জন্মদিনেই তাকে নতুনভাবে খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে আজকের প্রতিবেদনে। তাকে নিয়ে লিখেছেন অভি মঈনুদ্দীন
সমসাময়িক অন্য শিল্পীদের চেয়ে নিজের চিন্তাভাবনা, কর্ম আর ব্যক্তিত্বের কারণে তিনি একটু আলাদা, অন্যরকম। আর তাই আজ এই সময়ে এসে তার নামটি বেশ শ্রদ্ধার সঙ্গেই উচ্চারিত হয়। তিনি বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনের সকল শ্রেণির প্রিয় অভিনেত্রী। একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা আবুল হায়াতের প্রথম কন্যা বিপাশা হায়াত। সত্যি বলতে কী, একজন বিপাশা হায়াত নিজেকে এমনভাবে তৈরি করেছেন, যেখানে তার নিজের পরিচয়টাই যথেষ্ট। সেই ছোটবেলা থেকেই শিল্পের পথে তার এগিয়ে চলা। বাবা আবুল হায়াত, মা শিরীন হায়াত, তাদের বড় মেয়ে বিপাশা হায়াত ও ছোট মেয়ে নাতাশা হায়াতকে নিয়ে প্রথম স্বপ্ন দেখেছিলেন হয়তোবা তারা দুজন বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবেন। কিন্তু দুজনের কেউই সেই পথে পা রাখেননি। দুঃখ নেই তাতে তাদের বাবা-মায়ের। কারণ দুজনেই নিজেদের মতো নিজেদের পৃথিবী গড়ে নিয়েছেন।
আজ বিপাশা হায়াতের জন্মদিন, তার সম্পর্কে বাবা আবুল হায়াত বলেন, ‘বিপাশা ও নাতাশা ছোট থাকতেই আমি ও আমার স্ত্রী একসময় আলোচনা করি যে, মেয়েদেরকে এমনভাবে শিক্ষিত করে তুলতে হবে, যেন জীবনে কখনো কারো মুখাপেক্ষী না হতে হয় তাদের। সেভাবেই আমরা তাদেরকে পড়াশোনায় আগ্রহী করে তুলি। যেহেতু আমি ইঞ্জিনিয়ার ছিলাম, তাই ভেবেছিলাম হয়তো আমাকে দেখে দুজনেরই আগ্রহ হবে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু বিশেষত বিপাশার আগ্রহ জন্মায় অভিনয়ের প্রতি। ছোটবেলা থেকেই তার গান, ছবি আঁকা, অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল।
ছোটবেলায় তার প্রিয় ছিল ফুল আর গান। একসময় ‘এসো গান শিখি’-তে বিপাশা গানও শেখা শুরু করে। কিন্তু চাকরির কারণে আমাকে লিবিয়ায় চলে যেতে হয়। সেখানে একবার একটি মঞ্চ নাটকের জন্য একমাসেরও বেশি সময় রিহার্সেল করতে হয়। একসময় খেয়াল করলাম, পুরো নাটকটিই বিপাশার মুখস্থ হয়ে গেছে। বিপাশার জন্মের আগে থেকেই আমি নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের সঙ্গে জড়িত। পরবর্তীতে সেখানেও নানা সময়ে বিপাশা আমার সঙ্গে গিয়েছে। তো, আমাকে অভিনয়ে দেখতে দেখতে অভিনয়েই তার আগ্রহ তৈরি হয় বেশি। ছোট বিপাশার মাঝে দেখতাম, কোরআনের বঙ্গানুবাদ থেকে শুরু করে নানা দেশ-বিদেশের নানা লেখকের বই পড়ার আগ্রহ।
মূলত বিপাশা তার নিজের চেষ্টা থেকে পরিশ্রম করে আজ যেমন একজন অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে পরিণত করেছে। তেমনিভাবে নিজের চেষ্টাতেই অনেক ব্যস্ততার মাঝেও ছবি আঁকছে। পাশাপাশি সময় পেলে নাটকও লিখছে। বিপাশা তার আচার-আচরণ, পোশাক, চলাফেরা সর্বোপরি সংস্কৃতি অঙ্গনে নিজেকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যা অন্যদের চেয়ে তাকে আলাদা করে খুব সহজেই। তাই পিতা হিসেবে আমি সত্যিই গর্বিত। শুধু তাই নয়, আমি বাবা হিসেবে এতটুকু বলতে পারি, বিপাশা তার নিজের চেষ্টায় নিজেকে এমন স্থানে নিয়ে গেছে, যা আমাকে অনেক গর্বিত করে। তার লেখনীতে এমন চিন্তাভাবনা স্থান পায়, যা তাকে অন্যধরনের নাট্যকার হিসেবে তুলে ধরে। আমি তার লেখাতেও মুগ্ধ হই। তার আজ জন্মদিন, বাবা হিসেবে দোয়া করি—সে যেন ভালো থাকে, সুস্থ থাকে, শুভ জন্মদিন মা।’
বিপাশা হায়াতের স্বামী এদেশের অভিনেতা, চলচ্চিত্র ও নাটক নির্মাতা তৌকীর আহমেদ। বিপাশা হায়াত প্রসঙ্গে তৌকীর আহমেদ বলেন, ‘বিপাশা তার সব কর্ম দিয়েই একজন আলোকিত মানুষ। আমরা দীর্ঘসময় দুজন দুজনকে দেখছি। নিঃসন্দেহে বিপাশা মানুষটিই আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তার আলাদা কোনো সত্তাকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ সবকিছু মিলিয়েই পরিপূর্ণ একজন বিপাশা, একজন আলোকিত মানুষ। তার জন্মদিনে অবশ্যই অনেক অনেক শুভকামনা, শুভ জন্মদিন।’
বিপাশা হায়াতের অভিনয় কিংবা আঁকাআঁকির বিষয় যতটা না প্রচার প্রসারে এসেছে বিপরীতে যেন গান তার পিছনেই রয়ে গেছে। অথচ বিপাশা হায়াতের সংস্কৃতি চর্চার শুরুটা গান দিয়েই। ওস্তাদ খালিদ হোসেন, আখতার সাদমানী, জাকির হোসেন, সানজিদা খাতুন, মিতা হকের মতো বরেণ্য সংগীতজ্ঞদের কাছে তার গান শেখা। অথচ একটি সময় এসে বিপাশা হায়াতকে গান আর গাওয়া হয়নি। পাওয়া গেছে অভিনয়ে আর আঁকাআঁকিতে।
কথা প্রসঙ্গে বিপাশা হায়াত বলেন, ‘গানের জন্য আমি না, আমার জন্য গান। গানকে কখনো আমলে নিয়ে আমি সাধনা করিনি, যতটা না অভিনয় আর আঁকাআঁকি নিয়ে সাধনা করেছি। তবে এটা সত্য আমি প্রচুর গান শুনি।’
বিপাশার গানের ইতিহাসে দেখা যায় হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’তে বিপাশা হায়াত গেয়েছিলেন ‘আকাশ এত মেঘলা যেও নাকো একলা’, আব্দুন নূর তুষারের ‘শুভেচ্ছা’তে গেয়েছিলেন ‘নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক’ এবং বিটিভিরই একটি অনুষ্ঠানে গেয়েছিলেন তপন চৌধুরীর গাওয়া ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’ গানটি। সম্প্রতি তারকা দম্পতি তৌকীর আহমেদ ও বিপাশা হায়াতকে কেয়া হোয়াইটপ্লাস ডিটারজেন্ট পাউডারের বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হিসেবে দেখা যায়। বিজ্ঞাপনটি নির্মাণ করেছেন নির্মাতা অমিতাভ রেজা।
আঁকাআঁকি নিয়ে বিপাশা হায়াত বলেন, ‘আঁকাআঁকিতে আমি অনেক বেশি সুখ খুঁজে পাই। এখন থেকে এখানেই নিয়মিত থাকতে চাই। কারণ এটা আমার মনের একান্ত ভালোলাগা থেকেই করা। আঁকাআঁকিতে আমার মনের যত ভাবনা সব কোনোরকম দ্বিধা ছাড়াই প্রকাশ করতে পারি।’