অবশেষে মেয়রের দায়িত্ব ফিরে পাচ্ছেন জি কে গউছ
প্রায় সোয়া দুই বছর পর মেয়র আলহাজ্ব জি.কে গউছ আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় টানা ৩য় বারের মত দায়িত্ব গ্রহণ করবেন পৌর মেয়রের। হবিগঞ্জ পৌরসভার সচিব নুরে আলম সিদ্দিকী বুধবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানান, মেয়র জি.কে গউছের সাময়িক বরখাস্তের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ডিভিশনে দায়েরকৃত রীট পিটিশনের আদেশ প্রতিপালনে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব আব্দুর রউফ মিয়া হবিগঞ্জ পৌরসভাকে চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে জি.কে গউছকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে। আদেশ মোতাবেক পৌরসভাও নিয়েছে সব ধরণের প্রস্তুতি। সচেতন মহলের অভিমত, দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়টি ‘নির্বাচিত মেয়রের অনুপস্থিতির অস্বস্থিগ্রস্থ’ পৌরবাসীর জন্য অবশ্যই একটি ‘স্বস্থিদায়ক’ খবর। শুধু তাই নয়, এর ফলে অনেকটাই উজ্জীবিত হয়ে উঠতে পারেন মেয়রের রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতাকর্মীরা।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় হবিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন। ওই নির্বাচনে কারাগারে থেকেও বিপুল ভোটে জয় লাভ করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জি.কে গউছ। এরপর ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারী মাত্র ৩ ঘন্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে শপথ গ্রহন করেন তিনি। কিন্তু একই বছরের ২০ মার্চ শপথ গ্রহণের পৌনে দুই মাসের মাথায় দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়েই আবারও তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারী দীর্ঘ ৭শ ৩৯ দিন কারাভোগের পর অবশেষে জামিনে মুক্তি পান জি.কে গউছ। মুক্তির পর ২২ জানুয়ারী স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সাময়িক আদেশের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। ২৩ জানুয়ারী মেয়র জি.কে গউছকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দেয়া আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি নাইমা হায়দার ও খান মোঃ সাইফুর রহমানের বেঞ্চ এই স্থগিতের আদেশ দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্টপক্ষ হাইকোর্ট বিভাগের চেম্বার আদালতে আপিল করেন। ৩০ জানুয়ারী আদালত শোনানী শেষে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বহাল রাখেন। ফলে জি.কে গউছকে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে আইনগত আর কোন বাধাঁই ছিল না। কিন্তু অদৃশ্য কারণে জি.কে গউছকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া সংক্রান্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের চিঠি আসতে লেগে যায় প্রায় পৌনে ২ মাস সময়।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারী হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামীলীগ আয়োজিত জনসভায় দুর্বৃত্তদের গ্রেনেড হামলায় নিহত হন হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ.এম.এস কিবরিয়া। ওই হত্যাকান্ডের প্রায় ১০ বছর পর ৩য় সম্পূরক চার্জশীটে হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জি.কে গউছকে আসামী করা হয়। ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর কিবরিয়া হত্যা মামলার চার্জশীট আদালতে গৃহীত হলে ২৮ ডিসেম্বর স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পন করেন তিনি। আদালত মেয়র জি.কে গউছের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। পরে কিবরিয়া হত্যা মামলায় জামিন পেলেও কারাগারে থাকা অবস্থায়ই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলার মামলায় তাকে শ্যোন এরেস্ট দেখানো হয়। ওই হামলার ঘটনাটি ঘটে ২০০৪ সালের ২১ জুন সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই হবিগঞ্জ কারাগারের ভেতরে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে নিজ কক্ষে যাওয়ার পথে ইলিয়াছ নামের একাধিক হত্যা মামলার এক কয়েদি প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে জি.কে গউছকে আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হলে ওই দিনই নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা শেষে পাঠিয়ে দেয়া হয় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর কারাগারে থেকেও পৌর নির্বাচনে বিজয় লাভ করেন জি.কে গউছ। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ঢাকা ও সিলেট কারাগারে দীর্ঘ ৭শ ৩৯ দিন কারাভোগের পর ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারী অবশেষে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি লাভ করেন জি.কে গউছ।