সিলেটের পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান হত্যার বিচার নিয়ে সারাদেশে চলছে সমালোচনার ঝড়। এ ঘটনা নিয়ে একটি সমালোচনামূলক মন্তব্য প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত পোস্টটি মের পাঠকদের জন্য হুবহু দেয়া হলো:
‘সিলেটে রায়হান মারা গেছে ফাঁড়িতে, পুলিশের পিটুনিতে। অথচ প্রথমবার ময়নাতদন্তে ডাক্তার আঘাতের কোনো চিহ্ন পায়নি। ২য় ময়নাতদন্তে ডাক্তার পেয়েছে শতাধিক আঘাতের চিহ্ন। এই প্রথম ডাক্তারের মতো কিছু ডাক্তারের কারণে খুনের বিচার করা যায় না, ক্ষমতাশালীরা অবাধে খুন করার সাহস পায়। খুনের আলামত সম্পর্কে মিথ্যাচার ফৌজদারী অপরাধ। এ ধরনের ডাক্তারদের বিচার করতে হবে। এরকম ডাক্তারের মতো এস আকবরকে পালিয়ে যেতে ও পালিয়ে থাকতে সহযোগিতা করার লোকও আছে। এদের কেন আইনের আওতায় আনা হয় না? কেন আকবরের মতো অমানুষকে ধরতে এতো সময় লাগছে? ডিজিটাল যুগ না এটা?’

প্রসঙ্গত, রায়হান উদ্দিন নামের ওই যুবককে বন্দরবাজার থানা পুলিশ গত শনিবার (১০ অক্টোবর) বিকালে আটক করে। ওই দিন রাতে ফাঁড়িতে তার ওপর নির্যাতন চালায় পুলিশ এবং তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য টাকা দাবি করে। ভোরে অপরিচিত একটি মোবাইল থেকে ছেলের ফোন পায় রায়হানের বাবা। তাতে ওই ফাঁড়িতে তাকে আটকে রেখে ছেড়ে দেওয়ার জন্য টাকা দাবি করা হচ্ছে বলে জানায় রায়হান। বাবাকে টাকা নিয়ে এসে তাকে উদ্ধারের অনুরোধও করে রায়হান। ছেলেকে বাঁচাতে ভোরে তার বাবা টাকা নিয়ে ওই ফাঁড়িতে গেলে তাকে জানানো হয় রায়হান এখন ঘুমাচ্ছে, সকাল ১০টার দিকে আসতে হবে। পরে সকাল ১০টা দিকে গেলে তাকে বলা হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে যেতে। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন তার ছেলে মারা গেছে। এরপর মৃত ছেলের শরীরে নির্যাতনের ভয়াবহ চিহ্ন দেখতে পান তিনি। রায়হানের হাতের নখগুলোও উপড়ানো ছিল। পুলিশ এরপর দাবি করে রায়হানকে ছিনতাইকারী সন্দেহ করে জনতা গণপিটুনি দেওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। তবে সিটি করপোরেশনের ফুটেজে এর কোনো প্রমাণ মেলেনি। রোববার সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। বিকালে ৩টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। এশার নামাজের পর জানাজা শেষে তার লাশ পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়। রায়হানকে পুলিশ হেফাজতে অমানবিক নির্যাতনের ঘটনাটি রোববার থেকেই গণমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে। এ ঘটনায় সিলেট কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। মামলা দায়েরের পর এর তদন্তভার দেওয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। এ ঘটনায় বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর থেকেই পলাতক রয়েছেন আকবর।

রোববার সংবাদ সম্মেলন করে নিহত রায়হানের পরিবারের পক্ষ থেকে ছয়টি দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, রায়হান হত্যাকাণ্ডে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন, হত্যায় জড়িত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর ভূঁইয়াসহ দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার, পলাতক এসআই আকবর ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারে আইজিপির নির্দেশ, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য প্রদান এবং নিহতের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন। এদিকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে মারা যাওয়া রায়হান আহমদের শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন পেয়েছেন ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকরা। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৪টি গুরুতর আঘাত উল্লেখ করে ময়না তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, রায়হানের দুইটি আঙুলের নখ উপড়ে ফেলা হয়। মৃত্যুর দুই থেকে চার ঘণ্টা আগে এসব নির্যাতন চালানো হয়। এছাড়া তার শরীরে চামড়ার নিচ থেকে প্রায় দুই লিটার রক্ত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন। সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম। ফরেনসিক বিভাগ থেকে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn