আছপিয়া,নজীর এবং মিলনের প্রার্থীতা চূড়ান্ত !
সুনামগঞ্জঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির চূরান্ত তালিকায় আছে সুনামগঞ্জ জেলার পাচ সংসদীয় আসনের তিন প্রার্থীদের নাম। তবে এর সত্যতা বা গ্রহন যোগ্যতা কতটুকু ? সে প্রশ্ন দলের নেতা কর্মীদের। বিএনপির দলীয় সূত্রে জানাগেছে, প্রার্থীর মৃত্যু, বার্ধক্য, নিখোঁজ হওয়া, অজনপ্রিয়তা, দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয়তা বহিষ্কার কিংবা দলের বাইরে অবস্থানের কারণে বেশ কিছু আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। ইতোপূর্বে তৈরি করা খসড়া তালিকায় স্থান পাওয়া ৯০০ জনের মধ্য থেকে ৩০০ জনের নমের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তালিকা প্রস্তুত করা হলেও এখন পর্যন্ত ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি দলটি। এ কাজে দায়িত্ব পাওয়া দলটির কতিপয় নেতা হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আসনভিত্তিক প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করছেন। ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা এতে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটছে। রাখা হয়েছে একদম নতুন মুখ। ইতোমধ্যে চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পাওয়াদের আংশিক নাম পাওয়া গেছে। এই চুড়ান্ত তালিকায় সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-তাহিরপুর) সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেন। সুনামগঞ্জ-৪ (সুনামগঞ্জ সদর-বিশ্বম্ভরপুর) চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুল হক আছপিয়া। সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন-এর নাম রয়েছে। বৃহত্তর সিলেটের আছেন সিলেট-১ (সদর-সিটি করপোরেশন) আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অথবা তার ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান। সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ) নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদির লুনা। সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ-গোয়াইনঘাট জৈন্তাপুর) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিম।
চূড়ান্ত তালিকায় নতুনদের স্থান দেয়ার ব্যাপারে বিএনপির হাইকমান্ড কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। আপাতত চূড়ান্ত তালিকায় রাখা হলেও তাদের প্রশ্নে আরো খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। নেতিবাচক কিছু পাওয়া গেলে চূড়ান্ত তালিকা থেকেও ছিটকে পড়তে পারেন অনেকে। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তার ফাঁসি কার্যকার হওয়ায় এবার এ আসনে সাংবাদিক নেতা ও দলের সহপ্রচার সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরীর নাম চূড়ান্ত তালিকায় স্থান দেয়া হয়েছে। একইভাবে ঢাকা-৭ আসনে নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর মৃত্যুজনিত কারণে তার স্ত্রী দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাসিমা আক্তার কল্পনার নাম চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গাজীপুর-৪ আসনে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহর মৃত্যুতে তার ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নানকে তালিকায় স্থান দেয়া হয়েছে। নাটোর-১ আসনে ফজলুর রহমান পটলের মুতুতে তার স্ত্রী অধ্যক্ষ কামরুন্নাহার শিরিনের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে কুমিল্লা-২ আসনে এম কে আনোয়ার, পঞ্চগড়-২ মোজাহার হোসেন মারা যাওয়ায় এ দুই আসনে দলের যোগ্য প্রার্থী আপাতত মিলছে না। সিলেট-২ আসনে নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদী লুনা স্থান পেয়েছেন।
এদিকে, আগামী নির্বাচনে জামায়তসহ জোট শরিকদের কোন কোন আসনে ছাড় দেয়া হবে তারও একটা খসড়া তালিকা করছে বিএনপি। তবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে সংশ্লিষ্ট দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে। বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, এবার জামায়াতের আসন নিশ্চিতভাবেই কমছে। কারণ যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় ও জেলে থাকায় জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের আসনে এবার প্রার্থী সংকটে রয়েছে দলটি। এসব আসনের ব্যাপারে নতুন করে ভাবছে বিএনপি নেতৃত্ব। তাছাড়া, বাস্তবতার নিরিখে কয়েকটি আসনে এবার জামায়াতের ভোটের বাজার নাজুক। শীর্ষ নেতারা যুদ্ধাপরাধ মামলায় সাজা পাওয়ায় ভাবমূর্তি সংকটেও রয়েছে দলটি। এসব বিবেচনায় ২০০৮ সালের তুলনায় কম আসনে জামায়াতকে ছাড় দেয়ার কথা এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে বিএনপি। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া সসম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতিটি নির্বাচনে মনোনয়ন পরিবর্তন দলের রুটিন ওয়ার্কের অংশ। আগামী নির্বাচনেও তেমনটা হতে পারে। দলের প্রার্থী তালিকা তৈরি করাও একটি রুটিন ওয়ার্ক। সামনে যেহেতু নির্বাচন রয়েছে সে কারণে তালিকা নিয়ে কাজ চলা স্বাভাবিক। তবে দলের মনোনয়ন বোর্ডই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী। যার প্রধান দলীয় চেয়ারপারসন নিজে। চূড়ান্ত মনোনয়ন চেয়ারপারসনের সম্মতিতেই হবে