আনোয়ারের চ্যালেঞ্জে চাপে শফিক চৌধুরী
ওয়েছ খছরু :
সিলেটে এসেই প্রতিপক্ষকে ধাক্কা দিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী । বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরের ‘পুরাতন’ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের। যারা এতদিন দলের হাল ধরেছিলেন তারা। তার এই ধাক্কা দলের অপর অংশের মনে ‘দাগ’ কেটেছে। চাপ বাড়ছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর ওপরও। এখন তিনি চ্যালেঞ্জের মুখে। আনোয়ারকে সামাল দেয়াই হচ্ছে শফিকুর রহমান চৌধুরীর প্রধান কাজ। এলাকায় দলের শক্তি বাড়াতে দুই শিবিরকে এক করার চিন্তাভাবনাও রয়েছে। সিলেট আওয়ামী লীগে এখন প্রকাশ্য তেমন দ্বন্দ্ব নেই বললেই চলে। সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার হোসেন শামীমের জমানা থেকে সিলেট আওয়ামী লীগ প্রবেশ করেছে শফিকুর রহমান চৌধুরীর জমানায়। এই সময়ে সিলেটে সফল হলেও নিজ এলাকায় কোন্দলের মুখে পড়েছেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। তার প্রতিপক্ষ আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। দূরত্বের সৃষ্টি সুদূর যুক্তরাজ্য থেকে। দু’জন ছিলেন দুই বলয়ের বাসিন্দা। যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছেড়ে শফিকুর রহমান চৌধুরী সিলেটের রাজনীতিতে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলে এসেছে সিলেটে। এখন দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ হচ্ছে- দলের মনোনয়ন। শফিকুর রহমান চৌধুরী ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছিলেন। ওই সময়ও সিলেট-২ আসন থেকে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু পাননি। তবে, হাল ছাড়েননি। মনোনয়নের জন্য রাজনীতির মাঠে শফিকুর রহমান চৌধুরীর বিরোধী তিনি।
এই বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। বিরোধের কারণে বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে পাড়ায় পাড়ায় আওয়ামী লীগ দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এতদিন আনোয়ারুজ্জামান এলাকার রাজনীতিতে পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু এখন যতই দিন যাচ্ছে এলাকায় তার প্রভাব বাড়ছে। বাড়ছে নেতাকর্মীর সংখ্যাও। তার সঙ্গে পুরাতন আওয়ামী লীগের অনেকে রয়েছেন। তার প্রতি সমর্থন রয়েছে সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমানেরও। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আ.ন.ম শফিকও আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে রয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন চলছে।
আর আনোয়ারুজ্জামান বলয়ের হয়ে কাজ করছেন সিলেট জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ। লুৎফুর রহমান ও শামীম আহমদের বাড়িও আনোয়ারুজ্জামানের এলাকায়। ফলে শফিকুর রহমান চৌধুরীর চেয়ে আনোয়ারুজ্জামান তাদের কাছের মানুষ। শফিকুর রহমান চৌধুরীর বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথে। কিন্তু বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ প্রকাশ্য রয়েছে আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে। যারা অতীতে আ.ন.ম শফিক ও ইফতেখার হোসেন শামীমের পক্ষে ছিলেন তারা আনোয়ারের পক্ষে চলে এসেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের একাধিকবারের সভাপতি মজম্মিল আলী, সাবেক সহ-সভাপতি ফখরুল ইসলাম মতচ্ছিন, জাবেদুর রহমান, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ফিরোজ আলী ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ। এ ছাড়া যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অর্ধেক অংশ রয়েছে তাদের সঙ্গে। নিজ বাড়ি ওসমানীনগরে আনোয়ারুজ্জামানের বলয়ের সমর্থক বেশি। গেল উপজেলা নির্বাচনে আনোয়ারের পক্ষের নেতাকর্মীরা সমর্থন দিয়েছিলেন নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী আখতারুজ্জামান জগলু চৌধুরীকে। অল্পের জন্য বিজয়ী হতে পারেননি জগলু। তবে, জয় হয়নি নৌকারও। ধানের শীষের প্রার্থী ময়নুল হক চৌধুরী উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। ওসমানীনগর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কবির উদ্দিন আহমদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দাল মিয়া, যুবলীগের সেক্রেটারি সোহেলসহ আওয়ামী লীগের বড় বলয়টি আনোয়ারের হয়ে মাঠে কাজ করছে।
আর এবার আনোয়ারের পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছেন বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, সুবক্তা মোস্তাকুর রহমান মফুর। বৃহস্পতিবার তিনি আনোয়ারুজ্জামানের শোডাউনে উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার সঙ্গে বালাগঞ্জ আওয়ামী লীগের সিনিয়র কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন শোডাউনে। মফুরের সঙ্গে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিনও ছিলেন। আনোয়ারুজ্জামান বলয়ের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা এখন আর শফিকুর রহমান চৌধুরীর পক্ষে নেই। এর কারণ শফিকুর রহমান চৌধুরীর হাত ধরে আওয়ামী লীগে হাইব্রিড নেতাকর্মীদের প্রবেশ ঘটেছে। এতে করে দলের নেতৃত্ব ছিনতাই হয়েছে বলে মনে করেন তারা। এজন্য তারা আনোয়ারুজ্জামানের হয়ে মাঠে কাজ করছেন। বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও সাংবাদিক ফিরোজ আলী জানিয়েছেন, দলের সময়ের প্রয়োজনে আমরা আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে আছি। আগামীতেও থাকব। আনোয়ারুজ্জামান নৌকার টিকিট পেলে বিজয় কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবেন না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।