আমি এক দুর্ভাগা সংসদ সদস্য : জয়া সেনগুপ্ত
নিজেকে একজন দুর্ভাগা সংসদ সদস্য হিসেবে মন্তব্য করেছেন সুনামগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘আমি এক দুর্ভাগা সংসদ সদস্য। প্রথমত, আমি স্বামীকে হারিয়ে (মৃত্যুর পর) সংসদ সদস্য হয়েছি। দিরাই-শাল্লার (সুনামগঞ্জ-২) জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য বানালো। আমি নির্বাচিত হবার পরদিন থেকেই আমার এলাকার মানুষের ফসলহানি শুরু হয়েছে। তাদের দুঃখ দুর্দশার সীমা নেই।’ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বুধবার বিকেলে ‘হাওরের সঙ্কট ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক ব্র্যাকের এক সংবাদ সম্মেলনে জয়া সেনগুপ্ত এসব কথা বলেন।
প্রয়াত বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের স্ত্রী হাওর অঞ্চলে কৃষকের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, ওই এলাকার মানুষের একমাত্র ফসল হচ্ছে বোরো। এটা নষ্ট হওয়ার পর তাদের দুঃখের কোনো সীমা নেই। তিনি তার নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লা উপজেলার মানুষের দুর্গতির কথা তুলে ধরে বলেন, আমার এলাকার মানুষের শতভাগ ফসল বিনষ্ট হয়েছে। পানিতে ফসল পচে দুর্গন্ধ হয়ে মাছও মরে যাচ্ছে। শুধু কৃষক নয়, জেলে সম্প্রদায়ও ক্ষতির মুখে পড়েছে। প্রতিবছর এ এলাকার কৃষক অপেক্ষায় থাকেন বোরো কেটে ঘরে তুলবেন, ঋণ শোধ করবেন। উৎসব করবেন কিন্তু, এখন তাদের ঘরেই খাবার নেই।
জয়া সেন গুপ্ত জানান, তার নির্বাচনী এলাকা দিরাই উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে। প্রতি ইউনিয়নের জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩৫ টন করে চাল ও নগদ ১০ কোটি টাকা এবং শাল্লা উপজেলার প্রতি ইউনিয়নে ৫০ টন করে চাল ও নগদ টাকাসহ অন্যান্য উপকরণের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় থেকে কতটুকু পাওয়া যায় সেটাই বিষয়। সরকারের পাশাপাশি তিনি বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও হাওর অঞ্চলের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে অষ্টগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ ও শাল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিধান চন্দ্র চৌধুরী তাদের এলাকার কৃষকের দুঃখের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তারা বলেন, কোনো জায়গায় ২০০ জনকে ত্রাণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলে সেখানে হাজির হচ্ছেন হাজারের বেশি মানুষ। ফলে বেশিরভাগই খালি হাতে ফিরে আসছেন। ব্র্যাকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির পরিচালক গওহর নঈম ওয়ারা তার বক্তৃতায় হাওর এলাকার মানুষের সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে এক বছরের জন্য স্থানীয় বিত্তবানদেরকে দেওয়া জলাভূমির ইজারা স্থগিত করার দাবি জানান। এতে স্থানীয় মানুষ উন্মুক্ত জলাভূমিতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ পাবেন বলে তিনি মনে করেন।