আ’লীগে ঐক্য না থাকলে সিলেট ২ আসন চলে যেতে পারে বিএনপির ঘরে!
বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে সিলেট-২ আসন। আগামী নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে শফিকুর রহমান চৌধুরীর মনোনয়ন পাবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল থাকার পরও তিনি বেশ অস্বস্থিতে আছেন। উপজেলা নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের কারনে তাঁর মনোনীত প্রার্থী বিএনপির প্রার্থীর কাছে পরাজয় বরণ করেন। এখানে ইলিয়াস পত্নী লুনার রয়েছে বেশ শক্ত অবস্থান। আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনি এম ইলিয়াস আলীর গুম হবার বিষয়টি তোলে ধরে সাধারণ মানুষের সহানুভুতি কামনা করবেন। এই অবস্থায় স্থানীয় আওয়ামীলীগের মধ্যে ঐক্য বজায় না থাকলে সিলেট-২ আসনটি আবার বিএনপির ঘরে চলে যেতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। এক সময় এই আসনের এমপি ছিলেন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এম. ইলিয়াস আলী। ২০০৮ সালের এই আসনে ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে আলোচনায় আসেন তৎকালীন যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। তাকে নির্বাচিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন লন্ডন আওয়ামীলীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর আনোয়ার চৌধুরীর সাথে শফিক চৌধুরীর মতবিরোধ দেখা দিলে আনোয়ার নিজেই এই আসন থেকে নির্বাচন করা প্রস্তুতি নেন। কিন্তু বিএনপি পরবর্তী নির্বাচনে না যাওয়ায় জাতীয় পার্টিকে নিয়ে নির্বাচন করে আওয়ামীলীগ।বিশেষ রাজনৈতিক কারনে এই আসনটি জাতীয় পার্টিকে দিয়ে দেয় আওয়ামীলীগ। ফলে দুই চৌধুরীকে মনোনয়ন দৌড়ে পেছেনে ফেলে এই আসন থেকে সংসদ নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টি নেতা ইয়াহইয়া চৌধুরী।
ইয়াহইয়া চৌধুরী স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাপার কেন্দ্রীয় যুগ্ন-মহাসচিব। শফিক চৌধুরী সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। আর আনোয়ার চৌধুরী যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক। এক জন নিবেদিত আওয়ামীলীগ নেতা হিসেবে ফুলটাইম রাজনীতি করার পরও শফিকুর রহমান চৌধুরী এই আসনটি নিয়ে বেশ অস্বস্থিতে আছেন। সর্বশেষ বুধবার বিশ্বনাথ বাজারে শফিক চৌধুরী অনুসারীরা একটি সমাবেশের আয়োজন করে। একই সময়ে একই স্থানে পাল্টা সমাবেশের ডাক দেন আনোয়ার চৌধুরীর অনুরাসারীরা। এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন।
জানা যায়, তথ্য প্রযুক্তি আইনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার গং ও সাবেক সদস্য ফখরুল ইসলাম মতছিন গংদের উপর পাল্টাপাল্টি মামলা দায়েরের প্রতিবাদে ও তা প্রত্যাহারের দাবিতে বুধবার ২টায় উভয় পক্ষই বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা আয়োজন করেন। উভয় মামলায়ই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে অভিযুক্ত করা হয়। বাবুল আখতার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর অনুসারী অন্যদিকে ফখরুল আহমদ মতছিন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী অনুসারী। তাদের পাল্টিপাল্টি মামলা দায়েরের পর থেকেই উপজেলা জুড়ে গত কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করে আসছে।
মঙ্গলবার রাতে মোটর সাইকেল শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও সংগঠিত হয়। এর প্রেক্ষিতেই বিশ্বনাথ বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে শফিকুর রহমান চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দৈনিকসিলেটডটকমকে বলেন, আওয়ামীলীগ একটি বিশাল দল এই দলে প্রতিযোগিতা থাকবেই তবে এটাকে আমি সরাসরি কোন্দল বলতে চাইনা। আমি বিশ্বাস করি ফাইনালি দল যাকে মনোনয়ন দেবে সকলেই তার পক্ষে কাজ করবে। ওসমানী নগর উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পরাজয়ের জন্য তিনি অবশ্য বিদ্রোহী প্রার্থীকে দায়ী করেন। তিনি বলেন এখানে বিদ্রোহী না থাকলে অবশ্যই আওয়ামীলীগের প্রার্থী বিজয় লাভ করতেন।