আ’লীগে ‘কাউয়া নিধন প্রকল্প’ জরুরি প্রয়োজন-উৎপল দাস।।
উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীণ, ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলটির ইতিহাস, ঐতিহ্য এতটাই সমৃদ্ধ যে, বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা ও অবদান রয়েছে আওয়ামী লীগের। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবন ধরেই দেশ ও আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করে গেছেন। তার আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৭৫ এর ১৫ আগস্টের কালো রাতে পরিবার পরিজনসহ শহীদ হন বঙ্গবন্ধু। সৌভাগ্যবশত সেদিন তার দুই কন্যা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকারের পর দেশের মানুষের জন্য ফিরে আসেন তারা। আজ বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম অগ্রসরমান দেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে শুরু করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, রপ্তানি আয় ৩৫ বিলিয়ন ছুুঁই ছুই করছে। সর্বোপরি উন্নয়নের মহাসড়কেই উঠেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, এত উন্নয়ন কর্মকান্ডের পরও আওয়ামী লীগের প্রার্থী কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে জিততে পারলেন না। সংসদের বাইরে থাকা প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির প্রার্থীর কাছে প্রায় ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা। এরপরই আওয়ামী লীগের মধ্যে শুরু হয়েছে কেন কুমিল্লা সিটিতে হারলো আওয়ামী লীগ। এ পরাজয়ের কারণ বের করতে তদন্ত করবে দলটি। এমন ঘোষণাও গণমাধ্যমে এসেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গাজীপুরে শুক্রবার সকালে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ আমরা কুমিল্লায় দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারিনি। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে ঐক্যবদ্ধ রাখা সম্ভব হয়েছিল। তিনি আরো বলেন, ‘কুমিল্লা যখন পৌরসভা ছিল, তখনো আমরা জিততে পারিনি। সিটি করপোরেশন হওয়ার পরও বিএনপি জিতেছে। তবে ভোটের ব্যবধান অনেক কমেছে।’ তবে দলীয় কোনো লোকের অসহযোগিতা থাকলে তা তদন্ত করে বের করা হবে এবং সভানেত্রীর পরামর্শে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার আত্নজীবনীর দ্বিতীয় খন্ডে (কারাগারের রোজনামচা) বইয়ে সেই সময়ে উল্লেখ করেছিলেন, আওয়ামী লীগে কাউয়া ঢুকেছে। তাদের বের করতে হবে। আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদকও কয়েকধাপে দলের মধ্যে কাউয়াদের উৎপাত সম্পর্কে কথা বলেছেন।
আওয়ামী লীগে কাউয়া বলতে তিনি বুঝিয়েছে, সুযোগ সন্ধানী হাইব্রিড নেতাদের। যারা দলের সুসময়ে ঢুকে দলের নাম ভাঙিয়ে নিজের ও তার আগের দলের স্বার্থ রক্ষা করছেন। এমন কাউয়াদের বের করার তাগিদ বঙ্গবন্ধু দিয়ে গেলেও সেটার বাস্তবায়ন হয়নি কখনোই।
বঙ্গবন্ধু পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে আসতে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ ২১ বছর। তারপর শেখ হাসিনা চেষ্টা করেছেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে। অন্যসময় যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা দেশকে দুর্ণীতিতে চ্যাম্পিয়ান করার মতো কলংকিত গৌরবও উপহার দিয়েছেন নিয়মিত। শেখ হাসিনার আমলে এমন কলকিংত অধ্যায় দেখা যায়নি। উল্টো প্রতিবেশী ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা জয়, ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়ের মতো চুক্তি করে দেশকে বিশ্বদরবারে নতুন উচ্চতায় আসীন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন শুধু বাংলাদেশের নেত্রী নন, তিনি বিশ্ব নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। তবে কেন তিনি নিজ দলের মধ্যে কাউয়া নিধন প্রকল্প শুরু করতে পারছেন না? গত সাড়ে ৮ বছরে আওয়ামী লীগে কয়েক লাখ জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার ও নেতাকর্মীরা কাউয়া হিসাবে প্রবেশ করেছে আপনার দলের কোন না কোন নেতাকে অনৈতিক সুবিধা বিশেষ করে অর্থ দিয়ে। এগুলো বন্ধ করতে না পারলে শুধু তদন্ত করে তেমন কোনো ফলাফল আসবে না। আওয়ামী লীগে এখনই প্রয়োজন কাউয়া নিধন প্রকল্প এবং যারা কাউয়াদের পৃষ্ঠপোষক আছে তাদেরকেও বের করে দেয়া। এমনটা করতে পারলেই আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে দেশকে আরো অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারবে এবং বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা।