আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে কি করছেন বিএনপি প্রধান— এ নিয়ে উত্সুক দৃষ্টি শুধু দলের নেতা-কর্মীদেরই নয়, রাজনৈতিক মহলেও। তবে চিকিৎসার পাশাপাশি দীর্ঘ এই সময়ে কূটনৈতিক যোগাযোগসহ দলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটে বেগম জিয়ার। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে দেশে ফিরবেন বেগম জিয়া। এরপরই তিনি ছুটে যাবেন কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে। দলের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র এ তথ্য জানায়। সূত্র মতে, ব্যক্তিগত চিকিৎসা ও বড় ছেলে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি সমানতালে দলীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন করছেন বেগম জিয়া। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্দোলন ও সম্ভাব্য প্রার্থীর খসড়াও চূড়ান্ত হচ্ছে। সেখানে বসেই দলের সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তিনি। দেশে ফিরে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখাও দেবেন। তবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথও খোলা রাখবেন তিনি।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির লন্ডনে থাকা দুই প্রভাবশালী নেতার সঙ্গেও গোপনে বৈঠক হয়েছে বিএনপি প্রধানের। সঙ্গে বড় ছেলে তারেক রহমানও উপস্থিত ছিলেন। কোরবানির ঈদের আগ মুহূর্তে লন্ডন প্রবাসী বিজেপির দুই নেতা বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তবে তাদের কোথায় দেখা হয়েছে তা নিশ্চিত করা যায়নি। বিজেপির এ দুই নেতাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ। দুজনই ব্যবসায়ী এবং তাদের বাড়ি মোদির গুজরাটে। এ ছাড়াও কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গেও তার অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী তার একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের ফলোআপ চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসা শেষ হলেই তিনি যথাশিগগির দেশে ফিরবেন। ’ গত ১৫ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে লন্ডন সফরে যান বেগম খালেদা জিয়া। চিকিৎসার জন্য এই সফর বলা হলেও তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বেশ আগ্রহ ছিল। সেখানে তিনি তারেক রহমানের বাসায় ওঠেন। তারেকের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান,  মেয়ে জাইমা রহমান ছাড়াও প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান  কোকোর স্ত্রী
শামিলা রহমান সিঁথি, তার দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমানের সঙ্গেই তার সময় কাটছে। জানা যায়, লন্ডনে থেকেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী এবং ওআইসিভুক্ত দেশসহ মোট ৫০ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছেন খালেদা জিয়া। গত ১২ সেপ্টেম্বর একই দিনে এ চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে তিনি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বাস্তব অবস্থা নির্ধারণের জন্য জাতিসংঘের অধীনে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা গঠন, প্রয়োজনে জাতিসংঘের অধীনে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়াসহ ৫ দফার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

বিএনপির লন্ডন শাখার নেতারা জানান, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে ফিরতে পারেন বেগম খালেদা জিয়া। এর আগে লন্ডন বিএনপির উদ্যোগে একটি সমাবেশেও যোগ দিতে পারেন বিএনপি প্রধান। সেই প্রস্তুতিও চলছে। দুই ভাগে বিভক্ত থাকা বিএনপিকে এক করে বড় ধরনের শোডাউন করা হবে।   ২০০৬ সালে ক্ষমতা হারানোর পর যুক্তরাজ্যে খালেদার এটি তৃতীয় সফর। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ১৬  সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া লন্ডন গিয়েছিলেন। ওই সময় তারেকসহ পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ করেই দেড় মাস পর ফিরেছিলেন তিনি। এবারও তিনি কোরবানির ঈদ পরিবারের সঙ্গেই উদযাপন করেন

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn