দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া নবীরুল ও সান্টু কুমার বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। শনিবার দিনাজপুর আদালত এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে এ মামলাটি ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ইমাম জাফর যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আদালত সূত্র জানায়, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তার বাবা ওমর আলী শেখের উপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত আসামিদের দিনাজপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এসময় আসামি নবীরুল ইসলাম ও সান্টু কুমার বিশ্বাসকে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। অপর একজন আসামি আসাদুল হক অসুস্থ হয়ে পড়ায় সে র্যাবের হেফাজতে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি রয়েছে। মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শনিবার বিকাল সাড়ে পাঁচটায় দিনাজপুর চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিন আসামির মধ্যে দুইজনকে হাজির করা হয়। এ সময় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিশির কুমার বসু এ রিমান্ড মঞ্জুর করে। মামলার নতুন আইও ডিবির ওসি ইমাম জাফর আদালতের কাছে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তাদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, সরকারি বাসভবনে অনুপ্রবেশ, চুরিসহ তাদের নামে একাধিক মামলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে র্যাব ছয়জনকে আটক করে। এদের মধ্যে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে যুবলীগ নেতা আসাদুল ইসলামসহ তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এ ঘটনার পর আসাদুল ইসলামকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে ওই ঘটনার পর বহিষ্কৃত অপর যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমসহ বাকি তিনজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। র্যাব জানিয়েছে, আসাদুল ইসলাম এ ঘটনায় জড়িত বলে র্যাবের কাছে স্বীকার করেছে। আর ঘটনার সময় নবীরুল ইসলাম ও সান্টু কুমার বিশ্বাসও তার সঙ্গে ছিল বলে জানিয়েছে আসাদুল। র্যাব জানায়, আসাদুল দাবি করেছে- চুরির উদ্দেশ্যে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ঘরে ঢুকেছিল। এ সময় বাধা দেয়ায় তার (ওয়াহিদা খানমের) ওপর হামলা করা হয়। পরে তার বাবাকেও মারধর করে।
শুক্রবার রাতে র্যাব-১৩ (রংপুর) অধিনায়ক রেজা আহমেদ ফেরদৌস তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য দেন। তিনি বলেন, যদিও আসামিরা র্যাবের কাছে চুরির ঘটনা বলছে, তবে এর বাইরেও কোনো ঘটনা আছে কি না, তা তদন্ত করছে র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন। ঘটনায় ব্যবহৃত আলামত হিসেবে হাতুড়ি, মই এবং একটি লাল শার্টসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র সিআইডির হেফাজতে রয়েছে। সেগুলো মামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ বলে র্যাবের ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এদিকে মুমূর্ষু অবস্থায় ইউএনওকে ঢাকায় আনার পর বৃহস্পতিবার রাতেই অস্ত্রোপচার করা হয়। রাতেই তার জ্ঞান ফিরে আসে। তিনি স্বামীকে চিনতে পেরেছেন, কথাও বলেছেন। এই হামলার ঘটনায় রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) জাকির হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যা সদস্যরা হলেন পুলিশের রংপুর রেঞ্জের একজন অতিরিক্ত ডিআইজি ও দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ মাহমুদ। কমিটিকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে ঘটনায় জড়িত সন্দহে ছয়জনকে আটক করা হয়। এরা হল- আসাদুল ইসলাম (৩৫), নবীরুল ইসলাম (৩৪), সান্টু কুমার বিশ্বাস (২৮), জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), রানা মাসুদ (৩৫) ও নাহিদ হোসেন পলাশ (৩৭)। আসাদুল হকের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওই ঘটনায় যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), রানা মাসুদ (৩৫) ও নাহিদ হোসেন পলাশ (৩৭)-এর কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকি তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। গ্রেফতারকৃত আসাদুল ইসলাম ঘোড়াঘাট থানার সাগরপুর গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে, একই থানার চক বানুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ফরাজ উদ্দিনের ছেলে নবীরুল ইসলাম ও খোকা চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে সান্টু কুমার বিশ্বাস। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব-১৩ অধিনায়ক বলেন, যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম এ ঘটনায় জড়িত না থাকায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে এবং তিনি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হলেও এটি পুলিশের বিষয়, তা পুলিশই খতিয়ে দেখবে। র্যাবের কর্মকর্তা বলেন, আসাদুল জানিয়েছে তারা চুরির জন্য ওই বাসায় মই বেয়ে ভেন্টিলেটর ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে। তাদের বাধা দেয়ায় ওই হামলা চালায়। হামলার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করার জন্য নবীরুল দায়ী বলে র্যাবকে জানিয়েছে আসাদুল। র্যাব জানায়, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা এলাকার নানা অপকর্মসহ পেশাদার চোর হিসেবে পরিচিত। যুবলীগের যেসব নেতাকে সন্দেহবশত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছিল, তারাও নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত বলে জানতে পেরে আটক করা হয়।
পরে ওই ঘটনায় তাদের কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় ছেড়ে দেয়া হলেও তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। আরও অনেকেই আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা নজরদারিতে আছে। পরে এ ঘটনায় যদি নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যায়, তাও মামলার তদন্তের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। ইউএনও’র ভাই শেখ ফরিদ উদ্দীন জানান, সিসিটিভি ফুটেজ ও সকালে উদ্ধারের সময় হিসেবে করে দেখা গেছে হামলার পর সাড়ে ৪ ঘণ্টা রক্তাক্ত অবস্থায় কক্ষে পড়ে ছিলেন ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার পিতা ওমর আলী শেখ। সিসিটিভির ফুটেজ অনুযায়ী, বুধবার দিবাগত রাত ১টা ২০ মিনিটে টয়লেটের ভেন্টিলেটর খুলে কক্ষে প্রবেশ করেন দুষ্কৃতকারীরা। হামলা চালিয়ে আধাঘন্টা পর রাত প্রায় ২ টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান তারা। সকাল সাড়ে ৬টার সময় জ্ঞান ফিরে বাবা ওমর আলী শেখ গোঙানি শুরু করলে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। র্যাব অধিনায়ক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের একজনের গায়ে লাল শার্ট দেখতে পায় তারা। শার্টের সন্ধানে আসাদুলকে গ্রেফতার করলে সে ওই শার্ট তার নিজের বলে স্বীকার করে। পরে আসাদুল ঘটনার সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে তার সহযোগীদের নাম বললে র্যাব তাদের গ্রেফতার করে