ইউরোপজয়ী সিলেটের তিন নারী
নিজস্ব প্রতিবেদক :: নানা দেশের বহু বর্ণের মানুষ একত্রে বাস করে আসছে বৃটেনে। স্বাভাবিকভাবেই এরা রাজনৈতিক মতাদর্শে ভিন্নমত ও পথের সমর্থক। বৃটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির অবস্থান এখন অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক শক্ত এক ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এখানকার বৃটিশ বাংলাদেশিদের এক বৃহৎ অংশ বৃটেনের মূলধারার রাজনীতি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, আইন ও বিচার ব্যবস্থা, সংস্কৃতি ও সমাজনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৃটিশ মূলধারার রাজনীতিতে বাঙালিদের অভিষিক্ত হওয়াই এর প্রমাণ। বৃটিশ প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখন আর আগের মতো পিছিয়ে নেই। হাঁটি হাঁটি পা পা করে অনেক দূর এগিয়ে এসেছেন বেশ সুনামের সাথে। বাংলাদেশের ‘ইউরোপ’ অঞ্চল খ্যাত সিলেটের বৃটিশ বাংলাদেশী নারীরা এ ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে।
বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মাথা উঁচু করেছে যে কয়জন তাদের মধ্যে সিলেটের ৩ জন নারী ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী, ব্রিটেনের ক্যামডেন কাউন্সিলের নারী মেয়র নাদিয়া শাহ, বিবিসির ‘গ্রেট ব্রিটিশ বেক অফ’ প্রতিযোগিতার শিরোপাজয়ী নাদিয়া হোসেইন’র অবদান উল্লেখযোগ্য
রুশনারা আলী, এমপি : ২০১৬ সালে ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলীকে বাংলাদেশবিষয়ক বাণিজ্য দূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ২০১১ সালে ব্রিটেনের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পত্রিকা নিউ স্টেটসম্যান ‘পার্লামেন্টের উদীয়মান তারকা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০১০ সালে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো থেকে নির্বাচিত প্রথম বাংলাদেশি এমপি এবং নির্বাচিত প্রথম তিনজন মুসলিম মহিলা এমপির অন্যতম সিলেটের মেয়ে রুশনারা আলী। এমনকি হয়েছেন লেবার দলের ছায়া শিক্ষামন্ত্রী। আবার এই ছায়া মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে হৈচৈ ফেলে দেন গোটা ব্রিটেনে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের মে মাসে ফের নির্বাচিত হন তিনি। সম্প্রতি বাংলাদেশের বাণিজ্য দূত হিসেবে নিয়োগ পান রুশনারা আলী। দেশটির ক্রস পার্টি বাণিজ্য দূত হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন তাকে এই দায়িত্বে নিয়োগ দেন। যুক্তরাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটের এক বার্তায় বলা হয়, রুশনারা আলী বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশি ও যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উন্নতিতে ভূমিকা রাখবেন।
নাদিয়া শাহ : ব্রিটেনের ক্যামডেন কাউন্সিলের প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নির্বাচিত নারী মেয়র নাদিয়া শাহ। প্রথম মুসলিম নারী মেয়রও তিনি। ক্যামডেনে জন্ম নেওয়া নাদিয়ার পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায়। নাদিয়ার বাবা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও মা আম্বিয়া ইসলাম। ব্যক্তি জীবনে নাদিয়া তিন সন্তানের জননী। নাদিয়ার স্বামী জলিল শাহ ক্যামডেন কাউন্সিলের ইনফরমেশন টেকনোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত। লন্ডনের পার্লামেন্ট হিল স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন নাদিয়া। পরে গ্রিনউইচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইজর হিসেবে ইংল্যান্ডের ন্যটওয়েস্ট ব্যাংকে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর হোম অফিসে কাজ, স্থানীয় সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগে কাজ করার সুযোগ পান। ২০১৪ সালে নাদিয়ার রাজনীতিতে হাতে খড়ি। রিজেন্ট পার্কের একটি আসনে তিনি কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
নাদিয়া হোসেইন : ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্মদিনে কেক বানানো যে কোনো রন্ধনশিল্পীর জন্য অনেক সম্মানের। নাদিয়া হোসেইন বানিয়েছেন ব্রিটিশ রানীর জন্মদিনের কেক। রানীর ইচ্ছা ছিল ২০১৫ সালের বিবিসির গ্রেট ব্রিটিশ বেক অফ চ্যাম্পিয়ন বানাবেন তার ৯০তম জন্মদিনের কেক। এই অভিনব সুযোগ পেয়ে নাদিয়া সোনালি ও বেগুনি রং মিশিয়ে অরেঞ্জ ফ্লেভারের কেক বানান। বিলেতি রীতির বিয়ের কেক বানিয়ে ‘গ্রেট ব্রিটিশ বেক অফ’ প্রতিযোগিতার শিরোপাজয়ী নাদিয়া হোসেইন পান ভিন্নধর্মী সম্মান। বছরের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্রিটিশ বাংলাদেশির পদক জিতেছেন তিনি। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি কমিউনিটির সাফল্য উদযাপনে মঙ্গলবার পঞ্চমবারের মতো ব্রিটিশ বাংলাদেশি পাওয়ার অ্যান্ড ইনস্পিরেশন (বিবিপিআই) তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রভাবশালী ১০০ জনের এই তালিকায় সবার উপরে ছিলেন নাদিয়া। সিলেটের বিয়ানীবাজারের মোহাম্মদপুর গ্রামের জমির আলী ও আসমা বেগমের চার মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে তৃতীয় তিনি।