প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে সতর্ক করে বলেছেন, রাজকার-আলবদর, যুদ্ধাপরাধী, খুনি, দুর্নীতিবাজ ও ইতিহাস বিকৃতিকারীরা, যারা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তারা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। আগামীর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক মুক্তির ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণেই বলা আছে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে স্বীকৃতি প্রদান উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপনের অংশ হিসেবে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল আয়োজনে স্বাগত বক্তৃতা করেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম। আরো বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবৃন্দ, বিভিন্ন গণমাধ্যমের স¤পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ, দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিক প্রবন্ধকারসহ সকল শ্রেণি পেশার নাগরিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে স্মৃতিচারণ করে বলেন, ৭ মার্চের বক্তৃতা দেয়ার আগে আমার মা আমার বাবাকে বলেছিলেন- তোমার সারাটা জীবন তুমি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছ। তুমি জান এদেশের মানুষের মুক্তি কিসে। কাজেই কারো কথা শোনার কোন প্রয়োজন নাই। তোমার মনে যে কথা আসবে তুমি সেই কথাই বলবে। সেই বক্তৃতাই দেবে। পৃথিবীর এই একটি ভাষণ যেখানে জাতির পিতার হাতে কোন কাগজ ছিল না। কোন নোট, কিছুই ছিল না। এই ভাষণ স¤পূর্ণ তিনি তাঁর মন থেকে বলেছিলেন। যে ভাষণের মধ্যদিয়ে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়েছিল এবং বাংলাদেশের মানুষ যৃদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছিল। স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল জাতির পিতার নির্দেশে। তিনি বলেন, জনগণ জাতির পিতার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল। আজকে সেই ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। আজকে বারবার আমার এই কথাই মনে হয় যারা এই ভাষণ একদিন নিষিদ্ধ করেছিল তাদের অবস্থাটা কি? তারা কোথায় মুখ লুকাবে? তারা যে এই মহাসত্যকে স¤পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী ৪৬ বছর আগে তাঁরা যারা এই ভাষণ শুনতে পেরেছিলেন তাদের নিজেদের সৌভাগ্যবান উল্লেখ করে বলেন, যে নতুন প্রজন্ম ’৭৫ এর থেকে শুধু ইতিহাস বিকৃতি দেখেছে তাদের জন্য দুঃখ হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের সেই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আমাদের বহু প্রজন্ম জানতে পারে নাই। তবে, আজকে সময় এসেছে এই ভাষণ আজকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্থান করে নিয়েছে। এই ভাষণ বাজাতে গিয়ে বহু মানুষ জীবন দিয়েছেন, নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যারা সেদিন রক্ত দিয়ে গেছেন, যারা সংগ্রাম করেছেন আজকে তাদের সেই মহান আত্মত্যাগ স্বীকৃতি পেয়েছে। আজকে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে সম্মান পেয়েছে।
শেখ হাসিনা সমাবেশস্থলে আগতদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের এখানে আগামী প্রজন্মের অনেকেই আছে আমি তাদেরকে একটা কথাই বলবো- এই গৌরবগাঁথা এই ভাষণ শুধু ভাষণ নয়, এই ভাষণে আমাদের শোষণ, বঞ্চনার ইতিহাস বলেছেন জাতির পিতা। এই ভাষণে তিনি নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, এই ভাষণে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কি হবে সেটাও তিনি বলে গেছেন। আমরা আজকে স্বাধীন জাতি। যে বাংলাদেশকে একসময় এতেবারেই একটা দরিদ্র দেশ হিসেবে করুণার চোখে দেখা হতো। তিনি বলেন, আল্লাহর রহমতে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আমরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে কাজ করেছি। আওয়ামী লীগ যখন থেকে ক্ষমতায় এসেছে তখন থেকেই আন্তর্জাতিকভাবে বাঙালি জাতি মর্যাদা পেয়েছে। আজকে বিশ্বে আমরা উন্নয়নের রোল মডেল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ আমাদের এখন আর করুণা করতে পারে না। আমরা এখন অর্থনৈতিকভাবেও শক্তিশালী। বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এই ভাষণের মধ্যদিয়েই জাতির পিতা বাঙালি জাতির যেই মুক্তির সনদ দিয়েছেন- বাংলাদেশের মানুষ অর্থনৈতিক মুক্তি পাবে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা পাবে, বাংলাদেশ হবে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ, বাংলাদেশ হবে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ, বাংলাদেশ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ। ইনশাল্লাহ সেই বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলবো। আর ঐ রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধী, খুনী, যারা ইতিহাস বিকৃতকারী তারা যেন এদেশে কোনদিন ক্ষমতায় আসতে না পারে। এই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এই দেশ এগিয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn