ইফতার নয়, যেন চেহারা প্রর্দশন ও চর দখলের লড়াই
সোহেল রাহমান– সাবেক রাষ্ট্রপতি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও নয়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্লিনম্যান জিএম কাদেরের ইফতারে নিষিদ্ধ করা হয় বেশিরভাগ খ্যাত-অখ্যাত অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আর সেই অনুষ্ঠানে হাওলাদারের ভূমিকায় অবর্তীন হন বর্তমান মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। এরশাদের হুইল চেয়ার আঁকড়ে ধরে অন্যদের কাছেই ভীড়তে দেননি তিনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে কূটনৈতিক-রাজনীতিবিদদের সম্মানে জাপা চেয়ারম্যানের ইফতার মাহফিলে ঘটে এসব ঘটনা। ইফতারের ৫ মিনিট আগে হুইল চেয়ারে করে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরপর হুইল চেয়ারে করেই আগত অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন বর্ষীয়ান এ নেতা। তাকে নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। চেহারা দেখাতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন শীর্ষ নেতারা। শুরুতে ধাক্কাধাক্কি করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে পেছনে ফেলে দেন হাওলাদার পন্থী প্রেসিডিয়াম আতিকুর রহমার আতিক। আর শুরু থেকে এরশাদের হুইল চেয়ার ওয়াহবের কাছ থেকে কেড়ে নেন (নীচে এবং উপরে) মহাসচিব রাঙ্গা। আঁকড়ে রাখেন হুইল চেয়ার। আজান হওয়ার পরও পবিত্র ইফতার রেখে চলে চর দখলের প্রতিযোগিতা। পরে এরশাদের ইশারায় তাকে নেয়া হয় কূটনৈতিকদের টেবিলে। সেখানেই শেষ পর্যন্ত ছিলেন এরশাদ। কিন্তু হুইল চেয়ার দখল ছাড়েননি রাঙ্গা। এমনকি ভিড়তে দেননি স্টাফদেরও। রাঙ্গা দু’হাতের কনুইকে এমনভাবে রাখেন, যাতে এর ধাক্কায় অন্যারা সরে যান। এমনকি খোদ এরশাদ সহোদর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকেও বেশ কয়েকবার ধাক্কা দিয়ে পেছনে ফেলে দেন। কাউকেই ভিড়তে দেননি এরশাদের কাছে।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এরশাদকে গাড়িতে তুলে দেয়া অবধি চেয়ার ধরে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকেন পার্টির মহাসচিব। সেখানে উপস্থিত মধ্য সারির নেতারা টিপুনি কেটে বলেন, এ যেন আরেক হাওলাদার। তারই প্রতিচ্ছবি। এসবের ব্যস্ততায় অনুষ্ঠানের কোনো ভালোমন্দ খবর রাখার ফুসরত ছিল না তার। এমনকি কূটনৈতিকদের ইফতারের তারা ছিলেন অসহায় দাওয়াতি। যেটুকু আপ্যায়ন করেছেন, তার পুরোটাই করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং তার অনুসারিরা। এদিকে অনুষ্ঠানে অনলাইন সাংবাদিকদের দাওয়াত না দেয়াকে কেন্দ্র করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বিরোধীদের ষড়যন্ত্রে সমালোচনার মুখে ফেলেছেন, তাদের দোসররা। দোষ চেপেছে ক্লিনম্যানের ইমেজে। কিন্তু কৌশলে কাজটি করেছেন বলে অভিযোগ হাওলাদারের নিয়োগকৃত ও সুনীল-খালেদের বিশ্বস্ত এরশাদের ডিপিএস এক সময়কার চ্যানেল ওয়ানের পটুয়াখালী প্রতিনিধি দেলোয়ার জালালী। তিনি একে ওকে দোষ চাপালেও প্রচার করেছেন জিএম কাদের নিষেধ করেছেন, তাই অনলাইনকে দাওয়াত দেয়া হয়নি। বেশ কয়েকজন রিপোর্টারের সঙ্গে এসব নিয়ে কথাকাটাকাটিও হয়েছে অনুষ্ঠানের দিন দুপুরে এবং আগের দিন। তার ইশরা ইঙ্গিতে কার্ড বিতরণে থাকা মিডিয়া উইং স্টাফ রহিম কার্ড বা দাওয়াতপত্র অথবা অ্যাসাইমেন্ট আহ্বানপত্র হস্তান্তর করেননি। পাঠানো হয়নি মেইলে। দীর্ঘদিন জাপা বিটে কাজ করা সাংবাদিকদের অনলাইন অজুহাত তুলে দাওয়াত দেয়া হয়নি। এমনকি বিটের অনেক সিনিয়র সাংবাদিক ও বর্তমানে উচ্চ পদে থাকা এরশাদ ও জিএম কাদেরের পছন্দের সাংবাদিকদেরও দাওয়াত দেয়া হয়নি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অজুহাত দেখিয়েছেন এরশাদের ডিপিএস জালালী।
এছাড়া হাতে গোনা ১৭টি পত্রিকা ও টিভি সাংবাদিক ছাড়া অনুষ্ঠানে নিষিদ্ধ ছিলো অনলাইন সাংবাদিক ও সব ফটো সাংবাদিক। তবে ইংরেজি বাংলা মিলে ১৭টি (তাদের ভাষায়) বড় পত্রিকার শুধু রিপোর্টারদের সংবাদ সংগ্রহের জন্য দাওয়াত দেয়া হয়। পাশাপাশি দাওয়াত দেয়া হয় টেলিভিশন সাংবাদিকদের। যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী অনলাইনের গুরুত্বের কথা বলছেন, সেখানে জাপার অজুহাতকে ব্যর্থতার অবলম্বন বলে দাবি করছেন বিটের সাংবাদিকরা। গভীর রাতে যখন প্রয়োজন সাংবাদিকদের ডাকেন? সারা বছর দিনে রাতে যে রিপোর্টাররা পার্টির সংবাদ সংগ্রহ করেন হটাৎ তাদের বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্তের কারণ জানতে চাইলে আয়োজক কমিটির সদস্য মনিরুল ইসলাম মিলন বলেন, এ সিদ্ধান্ত আমার না এরশাদের ডিপিএস দেলোয়ার জালালী জানেন। এদিকে এ বিষয়ে ডেইলি বাংলাদেশকে জালালী বলেন, আমি বলতে পারব না। এসব দেখছেন পার্টির স্টাফ আব্দুর রহিম ও মনিরুল ইসলাম মিলন। পরে আব্দুর রহিম জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কাউকে দাওয়াত দিতে নিষেধ করেননি। দায়িত্ব যার ছিল, তিনি ব্যর্থ হওয়ায় শেষ মুর্হূতে আমাকে তাড়াহুড়ো করে ফোনে ফোনে সাংবাদিকদের বলতে হয়েছে। অনেকদিন কাজটি আমার হাতে না থাকায় অনেকের নম্বরও ছিল না। তাই বিটের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্টার হয়তো বাদ পড়েছেন। এজন্য আমরা দূঃখিত।