পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর লন্ডন যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তিনি লন্ডন গেলেও সেখানে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাংগঠনিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। বিএনপির ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির ব্যাপারে কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবেন দলের দুই শীর্ষ নেতা। বিশেষ করে তারেক রহমানের পরামর্শে নির্বাচনে বেশ কিছু নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া না-দেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন খালেদা জিয়া। এতে কিছু নেতার ‘ভাগ্য বিপর্যয়’ ঘটবে, আবার কিছু নেতার ‘ভাগ্য খুলবেও’। এ পরিস্থিতিতে দলের অনেক নেতা এখন লন্ডনমুখী হচ্ছেন। দলের চেয়ারপারসনের লন্ডন সফরের আগেই দ্বিতীয় ক্ষমতাধর নেতা তারেক রহমানের ‘আশীর্বাদ’ নিতে চান তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির তরুণ নেতা ও পেশাজীবীদের কেউ কেউ চেষ্টা করছেন সরাসরি লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। কেউ তার ঘনিষ্ঠ নেতাদের মাধ্যমে যোগাযোগ করছেন। অনেকে মালয়েশিয়া গিয়ে সেখানে অবস্থানরত তারেক রহমানের ‘ঘনিষ্ঠ’ নেতাদের মাধ্যমে টেলিফোনে যোগাযোগ করে নিজের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। বেশ কিছু নেতা ঈদের পরপর লন্ডনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ কেউ চেষ্টা করছেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে একই ফ্লাইটে যাওয়ার। আবার কেউ যাচ্ছেন ব্যক্তিগতভাবে। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের এটি ‘ব্যক্তিগত সফর’ হওয়ায় দলীয় নেতাদের সফরসঙ্গী হওয়ার সম্ভাবনা কম।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ভেতরে ভেতরে নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ৩০০ আসনে দলটির একাধিক প্রার্থী জরিপ। প্রাথমিকভাবে তৈরি করা হয়েছে ৩০০ আসনে ৯০০ সম্ভাব্য প্রার্থীর খসড়া তালিকাও। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিভিন্ন সূত্র থেকে এই তালিকাভুক্ত সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত মূল্যায়ন করে খালেদা জিয়া ও তারেকের বৈঠকে অনেক নেতার মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনকেন্দ্রিক একটি বড় রাজনৈতিক দল। যে কোনো মুহূর্তে নির্বাচন করার মতো প্রস্তুতি রয়েছে বিএনপির। আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকাও এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে, একই আসনে একাধিক প্রার্থীও রয়েছেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্য থেকেই যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে দলীয় বৈঠকে আলোচনা করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।’
প্রতি বছর রমজানের শেষদিকে পবিত্র ওমরাহ পালনে খালেদা জিয়া সৌদি আরবে গেলেও গত বছর যাননি এবং এবারও যাওয়ার সম্ভাবনা কম। রমজান মাসব্যাপী তিনি দল, জোট ও বিভিন্ন সংগঠনের ইফতার পার্টিতে অংশ নেবেন। দেশে ঈদ উদযাপনের পরপর চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাবেন তিনি। লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ ও গণসংযোগ করার চিন্তাভাবনা করছেন খালেদা জিয়া।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান গতকাল বলেন, খালেদা জিয়ার পা ও চোখের চিকিৎসার জন্য অনেক আগেই লন্ডন যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। সব কিছু ঠিক থাকলে তিনি আগামী ঈদুল ফিতরের পরপর লন্ডন যাবেন। এক প্রশ্নের জবাবে মারুফ কামাল খান বলেন, সফরের তারিখ এবং সফরসঙ্গী এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
নাম প্রকাশ না করে বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে যে কোনো মূল্যে অংশ নেবে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে গত নির্বাচনের মতো ভুল আর হবে না। এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ হচ্ছে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা। এরই মধ্যে কোনো কোনো নেতাকে খালেদা জিয়া মনোনয়ন-সংক্রান্ত ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দিতে শুরু করেছেন। এলাকায় গিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলছেন নিশ্চিত প্রার্থীদের। তবে প্রার্থী মনোনয়নের ব্যাপারে এবার দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।

দলের নেতারা জানান, অনেক আগে থেকেই তারেক রহমান ৩০০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী সম্পর্কে খোঁজখবর রাখছেন। প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য প্রার্থী জরিপের তালিকাও তার হাতে পৌঁছানো হয়েছে। ওই তালিকার মধ্য থেকে এবং তালিকার বাইরে থেকেও বেশ কিছু নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে তারেক রহমান চেয়ারপারসন ও মা খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করবেন।
বিএনপির সিনিয়র দুই নেতা জানান, খালেদা জিয়া নিজেও মনে করেন, বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে এবারের নির্বাচনই তার জন্য শেষ হতে পারে। কাজেই এখন দলের পরবর্তী নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। বিএনপির পরবর্তী শীর্ষ নেতা এখনও পর্যন্ত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেই ভাবা হয়। যদি কোনো কারণে তারেক রহমান নেতৃত্ব দিতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান নেতৃত্বে আসতে পারেন। এসব হিসাব-নিকাশ কষে খালেদা জিয়া তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানকে এবারের নির্বাচনী মনোনয়নেও তাদের ‘সম্পৃক্ত’ রাখতে চান।

সূত্র জানায়, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরিতে এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে তারেক রহমানের পরামর্শে বেশ কিছু তরুণ নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার চেষ্টা করবেন খালেদা জিয়া। সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি তারেক রহমান অর্ধশত আসনে দলের যোগ্য ও ত্যাগী তরুণ এবং সাবেক ছাত্রদল নেতাদের মনোনয়ন দিতে চান। প্রার্থী জরিপেও এসব তরুণ নেতার নাম উঠে এসেছে। তারাও এরই মধ্যে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় তৎপর হয়ে উঠেছেন। অনেক নতুন মুখ এবার বিএনপির মনোনয়ন তালিকায় দেখা যাবে। আবার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় অনেক সাবেক মন্ত্রী-এমপির ভাগ্য বিপর্যয় ঘটবে।

সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিএনপি বিভিন্ন দল থেকে আসা নেতা এবং ব্যবসায়ী ও সাবেক আমলাদের মধ্য থেকে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে প্রার্থী সংকট দূর করে আসছে। তবে এখন আর তা করতে হবে না। বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর গত চার দশকে দলেই অনেক যোগ্য নেতা তৈরি হয়েছেন। একান্ত বাধ্য না হলে অন্য দল থেকে বিএনপিতে আসা এবং জোটের নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। শুধু বিজয়ী হওয়ার মতো আসনেই ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn