এইচএসসিতে ১ লাখ ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর খাতা চ্যালেঞ্জ
নূর মোহাম্মদ — সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পেয়ে খাতা চ্যালেঞ্জের রেকর্ড হয়েছে। চলতি বছর ৯টি শিক্ষা বোর্ডে ১ লাখ ২৫ হাজার শিক্ষার্থী প্রায় তিন লাখ পত্রের প্রাপ্ত নম্বর পরিবর্তন চেয়ে আবেদন করেছেন। যদিও বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর নম্বর পরিবর্তন হবে না বলে জানিয়েছেন বোর্ড কর্মকর্তারা। গত বছরের তুলনার এবার আবেদনকারীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১৫ হাজার। আর পত্রের সংখ্যা বেড়েছে ৩৩ হাজারের বেশি। ১০টি শিক্ষা বোর্ড থেকে এ তথ্য জানা গেছে।এত সংখ্যক শিক্ষার্থীর খাতা চ্যালেঞ্জকে পাবলিক পরীক্ষায় খাতা মূল্যায়নের প্রতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনাস্থা বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। আগামী ২২শে আগস্ট এই পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড।
৮টি সাধারণ বোর্ড ও মাদরাসা বোর্ডে প্রাপ্ত তথ্যমতে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৩৮ জন শিক্ষার্থী খাতা চ্যালেঞ্জ করেছে। এরমধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৪৬ হাজার ৩৭০ জন পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৩৪ হাজার বিষয়ে আবেদন করেছে। এর মধ্যে ইংরেজি দুই পত্রে ৪০ হাজার, আইসিটিতে ১৮ হাজার ও পদার্থ বিজ্ঞানে ৮ হাজার আবেদন করেছে। চট্টগ্রাম বোর্ডে ১৭ হাজার ৭৪০ জন আবেদনকারী ৬১ হাজার ৬৯৯টি বিষয়ে আবেদন করেছে। এরমধ্যে ইংরেজি প্রথমপত্রে ৬ হাজার ৬২৭টি ও দ্বিতীয়পত্রে ৬ হাজার ২টি, আইসিটিতে ৬ হাজার ৭৮৩টি, পদার্থ বিজ্ঞান প্রথমপত্রে আবেদন করেছে ৩ হাজার ৫৮৬ ও দ্বিতীয়পত্রে ৩ হাজার ৪২টি আবেদন করেছে। বরিশাল বোর্ডে ৩ হাজার ৭৮৩ জন পরীক্ষার্থী ১৪ হাজার ৬৮২টি বিষয়ে আবেদন করেছে। এরমধ্যে ইংরেজি প্রথমপত্রে দুই হাজার ৬২৩টি ও দ্বিতীয়পত্রে ১ হাজার ৯১৮ জন, পদার্থ বিজ্ঞান প্রথমপত্রে ৭৩৩টি ও দ্বিতীয়পত্রে ৫৪১টি, আইসিটিতে ৯২১টি আবেদন পড়েছে। যশোর বোর্ডে ১৩ হাজার ১৫৪ জন পরীক্ষার্থী মোট ৩৩ হাজার ৫৫৮টি বিষয়ে আবেদন করেছে। রাজশাহী বোর্ডে ১৩ হাজার ৪২৮ জন পরীক্ষার্থী ৩৪ হাজার ৪৬৮টি আবেদন করেছে। এরমধ্যে ইংরেজি প্রথমপত্রে ৬৪৩১ ও দ্বিতীয়পত্রে ৫৬২৯টি, আইসিটিতে ২৭৬৯, পদার্থ বিজ্ঞান প্রথমপত্রে ১৯৫৭ ও দ্বিতীয়পত্রে ২০৪৫টি আবেদন পড়েছে। দিনাজপুর বোর্ডে ৮৮৫৭ জন পরীক্ষার্থী ২৩ হাজার ৫৪২টি আবেদন করেছেন। এরমধ্যে ইংরেজি প্রথমপত্রে ৪৪৮৫ ও দ্বিতীয়পত্রে ৩৯৫১, আইসিটিতে ২৩৫০ ও পদার্থ বিজ্ঞানে প্রথমপত্রে ১৪৩০ ও দ্বিতীয়পত্রে ১৫২৭। সিলেট বোর্ডে ৭৬২৯ জন পরীক্ষার্থী মোট ১৮ হাজার ৩২২টি পত্রের ফল চ্যালেঞ্জ করেছে।
এরমধ্যে ইংরেজি প্রথমপত্রে ৩২১৩ ও দ্বিতীয়পত্রে ৩৪০২, আইসিটিতে ২৩৩৪ পত্রে আবেদন করেছে। যশোর বোর্ডে ১৩ হাজার ১৫৪ জন পরীক্ষার্থী ৩৩ হাজার ৫৫৮টি আবেদন করেছে। কুমিল্লায় ৯৩৫৫ জন শিক্ষার্থী মোট ২৮ হাজার ৭৬৮টি পত্রে আবেদন করেছে। এরমধ্যে ইংরেজি প্রথমপত্রে ৫৭২৭ জন ও দ্বিতীয়পত্রে ৫৫৬৫টি। আইসিটিতে ২৬৯৩ জন। পদার্থ বিজ্ঞান প্রথমপত্রে ১০৩১ জন ও দ্বিতীয়পত্রে ৯০৩ জন আবেদন করেছেন। কারিগরি বোর্ডের তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। এত বেশি আবেদনের ব্যাখ্যা দিয়ে আন্তঃবোর্ড ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার মানবজমিনকে বলেন, চলতি বছর অন্যান্য বছরের চেয়ে খারাপ ফল হয়েছে। এজন্য ফল চ্যালেঞ্জ করার সংখ্যা বেড়েছে। এবার ইংরেজি, আইসিটি, পর্দাথ বিজ্ঞানের পরীক্ষা কঠিন হওয়ায় কারণে অনেকেই কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি। এ তিন বিষয়ের আবেদন বেশি পড়েছে। এ ছাড়াও গত দুই বছর থেকে শিক্ষার্থীরা জিপিএ কত নম্বর পেয়েছে তা জানতে পারতো না। শুধু তাই নয়, কোন পত্রে কত, সিকিউ, এমসিকিউর আলাদা আলাদা কত নম্বর পেয়েছে তাও দেখতে পারছে। তার মতে সবচেয়ে বেশি আবেদন করেছে পরবর্তী গ্রেডের কাছাকাছি নম্বর পাওয়ার শিক্ষার্থীরা। যেমন কেউ যদি ৭৮ বা ৭৯ বা দুটি পত্র মিলিয়ে ১৫৮ পেয়েছে তারাই ফল পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছে। তাদের ধারণা হয়তো নম্বর পরিবর্তন হয়ে যাবে। বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, পুনঃনিরীক্ষণে মূল্যায়ন হওয়ার খাতার মোট ৪টি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কি না, এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কি না। এসব বিষয় পরীক্ষা করেই পুনঃনিরীক্ষার ফল দেয়া হয় বলে বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তার মানে কোনো শিক্ষার্থীর খাতা পুনরায় মূল্যায়ন হয় না।