‘এসআই আকরাম ও মিতু হত্যা একই সূত্রে গাঁথা’
ইসমত মর্জিদা ইতি-
সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদ খানম মিতু ও এসআই আকরামের হত্যাকাণ্ড একই যোগসূত্রে গাথা বলে বর্ণনা করেছেন আকরামের বোন জান্নাত আরা পারভীন রিনি। মিতু হত্যার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) মো. কামরুজ্জামান মামলার তদন্তের স্বার্থে আকরামের বোন রিনিকে তার কার্যালয় সিএমপি নগরভবনে ডেকে পাঠান। তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান রিনি ও তার সাথে থাকা তার বোনের মেয়ে মোর্শেদা জাহান ডলি।
মঙ্গলবার রাতে ঝিনাইদহ থেকে রওনা হয়ে আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে রিনি ও ডলি সিএপির গোয়েন্দা কার্যালয়ে আসেন। তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান ব্যস্ততার কারণে বাইরে থাকায় তিনি তার রুমে ফিরেন সাড়ে বারোটার পর। এরপর ১২টা ৩৫ মিনিট থেকে প্রায় ঘণ্টাদুয়েক রিনি ও ডলিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ সময় লিখিতভাবে কিছু অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দাখিল করেন বলে জানান রিনি।
রিনি সাংবাদিকদের জানান, বাবুলের সাথে এসআই আকরামের স্ত্রী বর্নির পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। দুজনের এই অনৈতিক সম্পর্কেও পথের কাঁটা ছিলো তার ভাই আকরাম ও বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু। এজন্যই প্রথমে তার ভাই আকরামকে খুন করা হয়েছে এবং পরে খুন করা হয়েছে মিতুকে। যদিও বাবুল আক্তারের উপর প্রতিশোধ নিতে কেউ এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতো , তাহলে তারা বাবুল আক্তার ও মিতুর সন্তান মাহিরকে খুন করতো।
রিনি সাংবাদিকদের জানান, আমার ভাই এসআই আকরামকে বাবুল আক্তার ও বর্ণিকে পরিকল্পনা করে হত্যা করেছে। রিনি বলেন, তারা ৫ বোন একভাই। এসআই আকরামই তাদের একমাত্র ভাই।
তিনি বলেন, ২০০৬ সালে ১৩ জানুয়ারি বনানী বিনতে বশির বর্ণির সাথে আমার ভাইকে আমরা পারিবারিকভাবে বিয়ে দেই। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় তাদের একটি মেয়ে হয়। নাম রাখা হয় আফরিন। আফরিনের জন্ম ঢাকার পিজি হাসপাতালে। আফরিন জন্মের সময় বর্নি ৫দিন পিজিতে চিকিৎসাধীন ছিলো। এই ৫দিন বর্ণিকে বাবুল আক্তারের ভাই সাবু ও বোন লাবনী বর্ণিকে দেখাশোনা করতো। তাদের সাথে বর্নির আচরণ দেখে তাদের সন্দেহ হয়। পরে তারা জানতে পারেন, বাবুল আক্তারের বর্ণির আগে থেকেই বিয়ের কথা ছিলো। পরে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বর্ণি তাকেসহ বাবুল আক্তারের বোন লাবনীর বাসায় নিয়ে যায়। এরপর তার ভাই সুদানে মিশনে চলে যায়। মিশনে যাওয়ার পর একদিন তার ভাই তাকে ফোনে জানায়, বর্নির ফোন ঘন্টার পর ঘন্টা বিজি (ব্যস্ত) থাকে। তখন তার ভাই বলে এএসপি বাবুল আক্তার মনে হয় আমাদের সংসারটা টিকতে দিবেনা।
এরপর আকরাম দেশে এসে মগবাজাওে একটা ফ্ল্যাট কিনে বর্ণিকে নিয়ে বসবাস শুরু করে। কিন্তু সেখানে আবার নতুন করে বাবুল আক্তারকে নিয়ে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। এর মধ্যে বর্ণি তার ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করে ঝিনাইদহে বাবার বাসায় চলে আসে।
বাবার বাসায় একমাস থাকার পর বর্নি ফোনে তার ভাইকে বলে, আমাকে নিয়ে যাও ও যমুনা সেতু হয়ে মোটরসাইকেল যোগে আসার জন্য আকরামকে বাধ্য করে। বর্ণির কথামতো ২০১৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহের উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেল যোগে আসার সময় বাবুল আক্তারের লোকেরা আমার ভাইকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করে শৈলকুপা থানাধীন বড়দা হাইওয়েতে ফেলে রেখে যায়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার ভাই মারা যান। সেই শৈলকুপায় বাবুল আক্তারের গ্রামের বাড়ি। পরে সেটি সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়া হয়। এরপর আমার ভাইকে কবর দেয়ার পর বর্ণির বাবা তার মেয়েকে নিয়ে গিয়ে বাবুল আক্তারের মাগুরার বাড়িতে গিয়ে উঠে। এর পরে বর্ণি আমাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
রিনি আরো বলেন, বাবুল আক্তার মিশনে থাকাকালীন সময় ৩ বার দেশে এসে মাগুরায় বর্নির সাথে থেকেছেন। এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে রিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা আমরা যেসব তথ্য দিয়েছি তা তদন্ত করে দেখুক।
তবে তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেছেন, আমি কাউকে ডাকিনি। তারা নিজ থেকে কথা বলতে এসেছেন। মামলার তদন্তের স্বার্থে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে। বর্ণিকে জিজ্ঞাসাবাদেও প্রয়োজন হলে তাকে চট্টগ্রামে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলের বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে নগরীর ওআর নিজাম রোডের ওয়েল ফুডের সামনে দুষ্কৃতকারীরা গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে মাহমুদা খাতুন মিতুকে। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন।