এসএসসির ফরম পূরণের জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭শ টাকা নির্ধারণ করেছিল শিক্ষাবোর্ডগুলো। এভাবে প্রতিবছরই কম ফি ধার্য করে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। দেশের স্কুলগুলো শিক্ষার্থী অভিভাবকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অযুহাতে এর কয়েকগুণ টাকা আদায় করেছে। কোন কোন স্কুল কর্তৃপক্ষ নোটিশ দিয়ে, আবার কোথায় নোটিশ ছাড়াই। কোথাও আদায় করার একটি অংশ ব্যাংকে, অন্য অংশ নগদ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বছরই বাড়তি ফি আদায় করছে তা নয়। বছরের পর বছর একই চিত্র। অনিয়ম হলেও বিষয়টি এখন স্বাভাবিক হিসাবে দেখছে স্কুলগুলো।  অভিভাকরা বলছেন, অবস্থাটা এমন যে, নানা ফন্দি, নানা কৌশলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যত বেশি আদায় করা যায়। স্কুল কর্র্তৃপক্ষের পকেট ততটাই ভারি হবে অনৈতিক অর্থে। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অনলাইনে ফরম পূরন শুরু হয়েছে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত। শেষ হয়েছে গতকাল। তবে শিক্ষার্থীরা বিলম্ব ফি দিয়ে ১৪ থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত তা পূরণ করতে পারবেন। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী অসহায় অভিভাবকরা সন্তানের ফরম পুরণ করিয়েছেন। কষ্ট হলেও অর্থের দিকে তাকাননি। আমিরুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক বলেন, ধার করে সন্তানের ফরম পুরণ করিয়েছি।
২০১৮ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফরম পূরণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীপ্রতি সর্বোচ্চ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৫৫০ টাকা। তবে, ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি যোগ হলে এই হিসেব আরেকটু বেশি। বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী ভেদে ফি  একটু কম-বেশি হবে। সব বিভাগের জন্যই বিলম্ব ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতেই এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। ইতিমধ্যে স্কুলগুলোর নির্বাচনী পরীক্ষা শেষ হয়েছে। স্কুলের এসব শিক্ষার্থীদের কার্যক্রমও শেষ হয়েছে।  মিরপুরে অবস্থিত সরকারি বাঙলা স্কুল। ফরম পুরণের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করেছে ৮ হাজার টাকার বেশি। এর মধ্যে বোর্ড ও কেন্দ্র ফি বাবাদ ১৭শ টাকা ব্যাংকে জমা নেয়া হচ্ছে। মার্চ মাস পর্যন্ত বেতন আদায় করছে ৩ হাজার টাকা। আবার মার্চ মাস পর্যন্ত অতিরিক্ত ক্লাস ও মডেল টেস্টের নামেও আদায় করেছে ৩ হাজার টাকা। যা আদায় করা হচ্ছে নগদ। এর বাইরে ফেয়ারওয়েলের নামে আদায় করছে ৫, কেন্দ্র ব্যবহারিকের নামে ৩শ টাকা।
একাধিক অভিভাবক এই প্রতিবেদকে বলেন, আমরা ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতনসব সব কিছু পরিশোধ করেছি। ফেব্রুয়ারির শুরুতে এসএসসি পরীক্ষা হবে। জানুয়ারি থেকে ক্লাস, কোচিং ও স্কুলের মডেল টেস্ট বন্ধ থাকবে। অথচ আমাদের কাছ থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত স্কুলের বেতন আদায় করা হয়েছে। এছাড়া আদায় করা হয়েছে অতিরিক্ত ক্লাস ও মডেল টেস্টের টাকাও। এর প্রতিবাদও করা যায়নি। স্কুলের গভর্নিং বডির একজন এবং প্রতিষ্ঠান প্রধান মিলে বাড়তি ফি আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাড়তি ফি’র বিষয়ে সাধারণ শিক্ষকরা প্রতিবাদ জানালেও কোন লাভ হয়নি। এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়া জন্য প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আব্দুস ছালামের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আগারগাঁও তালতলা সরকারি কলোনী উচ্চ বিদ্যালয় ও মহিলা কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ৭ হাজার ৩০ এবং মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৬ হাজার টাকার বেশি আদায় করা হয়েছে।  রাজধানী ও বিভাগীয় শহরের মতো না হলেও মফস্বলের স্কুলগুলোও বাড়তি ফি আদায় করছে।  মাদারীপুরের তাঁতীবাড়ী ইসলামীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোন্দকার জিয়াউর রহমানের স্বাক্ষরে দেয়া বিজ্ঞপ্তিকে দেখা যায়, তিনি বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ২ হাজার ২৪০, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের জন্য ২১৪০ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। অভিভাবকরা এই অর্থই পরিশোধ করেছেন।  ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, এসএসসির ফরম পূরণের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছি। কিন্তু কেউ যদি অতিরিক্ত টাকা আদায় করে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn