দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। আজ-কালের মধ্যেই সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এ নিয়োগ চূড়ান্ত করবেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। গত বছর ২ অক্টোবর থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন আপিল বিভাগের এই জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। চলতি বছর ১০ নভেম্বর অবসরে যাবেন বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা। সূত্রগুলো জানায়, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুসারে প্রধান বিচারপতির নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে বিচার বিভাগ-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র  জানায়, প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালনরত বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা চলতি বছরের নভেম্বরেই অবসরে যাবেন। তিনিই আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্যে কর্মে প্রবীণ। পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ ১১ অভিযোগের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে বিজ্ঞপ্তির বিষয়েও তিনি ভূমিকা পালন করেছেন। এ ছাড়া জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে অন্য কাউকে প্রধান বিচারপতি করা হলে বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞাও পদত্যাগ করতে পারেন। প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞাকে নিয়োগের বিষয়ে এসব বিষয় বিবেচনায় রাখা হতে পারে বলে জানায় সূত্রটি।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সংবিধান অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। রাষ্ট্রপতিই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। রাষ্ট্রপতির নির্দেশ অনুসারেই আইন মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করবে। শিগগিরই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলেও জানান আইনমন্ত্রী।

সুপ্রিম কোর্টের তথ্যনুসারে, আপিল বিভাগে বর্তমানে পাঁচজন বিচারপতি কর্মরত আছেন। চাকরিবিধি অনুসারে তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬৭ বছর। সে হিসেবে বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা চলতি বছরের ১০ নভেম্বর অবসরে যাবেন। জামালপুরের প্রয়াত আবদুস সাত্তার মিঞা ও প্রয়াত সৈয়দা তাহেরা বেগমের ঘরে ১৯৫১ সালের ১১ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন আপিল বিভাগের এই জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলএলবি পাস করার পর ১৯৭৪ সালে ময়মনসিংহ জেলা বার ও ঢাকা জেলা বারে আইন পেশা শুরু করেন তিনি। বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ১৯৭৬ সালের ২ নভেম্বর হাই কোর্টে এবং ১৯৮২ সালের ১৪ জানুয়ারি আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর তিনি হাই কোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। পরে ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তাকে আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে ১৯৮২-৮৩ মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সম্পাদক এবং ১৯৮৮-৮৯ ও ১৯৮৯-৯০ মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন।

গত বছর ১ আগস্ট উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে নিয়ে করা ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশিত হয়। এ রায়ে প্রধান বিচারপতির দেওয়া বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারপন্থি আইনজীবীরা। তারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিও তোলেন। সমালোচনার মধ্যেই ১ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা হঠাৎ করে এক মাসের ছুটির কথা জানিয়ে চিঠি দেন। পরদিন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্্হাব মিঞাকে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পর আইনমন্ত্রী জানান, প্রধান বিচারপতি ক্যান্সারে আক্রান্ত। এ কারণ উল্লেখ করে তিনি ছুটির আবেদন জানিয়েছেন। পরে ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধান বিচারপতি। দেশ ছাড়ার আগে প্রধান বিচারপতি তার বাসভবনের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি অসুস্থ নই। বিচার বিভাগের স্বার্থে আবার ফিরে আসব। ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে একটি মহল প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছেন।’ তিনি একটি লিখিত বিবৃতিও সাংবাদিকদের দিয়ে যান। পরদিন ১৪ অক্টোবর এস কে সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ ১১টি অভিযোগ তুলে ধরে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। পরে ১০ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে বসেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে বিচারপতি সিনহা কানাডায় চলে যান। পরদিন পদত্যাগপত্রটি রাষ্ট্রপতির দফতরে পৌঁছায়। ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি ওই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদি

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn