ঢাবিতে তালা ভেঙে হলে প্রবেশ, রবিতে অবস্থান ধর্মঘট, রাবিতে মানববন্ধন
পিয়াস সরকার-কবে খুলবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো? অবশ্য সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর খোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। শিক্ষার্থীদের দাবি সরকারি নির্দেশনা আসায় এখন যেন দ্রুত ক্যাম্পাস খুলে দেয়া হয়। এ জন্য মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। প্রায়শই আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সরকার থেকে অনুমতি মেলার পরও কেন খুলে দেয়া হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। স্কুল-কলেজ চলছে। দেশব্যাপী বিচ্ছিন্ন কিছু করোনা আক্রান্তের খবর মিললেও মেলেনি ভয়াবহ কোনো সংক্রমণের খবর। যদিও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে দুই শিক্ষার্থীর।
ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে স্কুল-কলেজ। বাড়ছে ক্লাস সংখ্যা। দেয়া হয়েছে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার রুটিনও। কিন্তু অনুমতি মেলার পরও খুলতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে টিকার নিবন্ধন। ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, উচ্চ শিক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ৪৪ লাখ। রেজিস্ট্রেশন করেছেন সাড়ে ১৮ লাখ শিক্ষার্থী। আর প্রথম ডোজ পেয়েছেন সাড়ে ৫ লাখ শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার শিক্ষার্থী। জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া নিবন্ধন করেছেন ১ লাখ ৮২ হাজার শিক্ষার্থী।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে জাতীয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক সুবিধা নেই। তবুও কেন খুলছে না এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। উচ্চশিক্ষায় প্রায় ৪১ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৮ লাখ। উন্মুক্ততে অধ্যয়নরত আছেন প্রায় ৫ লাখ শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীরা কেন ফিরছে না প্রতিষ্ঠানে?
জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান একটি গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮ লাখের তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বাকি ২২ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে অধিকাংশেরই নেই জাতীয় পরিচয়পত্র। তারা জন্ম সনদ দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করছেন। আমরা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবো না যাতে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকিতে পড়েন। আমরা পর্যায়ক্রমে সশরীরে শিক্ষার্থীদের ফেরাবো।
এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলরদের নিয়ে কোনো বৈঠকই অনুষ্ঠিত হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে আছে দোটানায়। যদিও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে তারিখ ঘোষণা করেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে টিকা তথ্য দিতে অনাগ্রহও রয়েছে বেশ।
আবার বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগেই নানা বিষয়ে উত্তপ্ত হচ্ছে শিক্ষাঙ্গন। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেয়ার ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। সিরাজগঞ্জে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৬শে সেপ্টেম্বর দুপুরে প্রথমবর্ষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ বিভাগের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরিচিতি পরীক্ষা ছিল। এ সময় বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন কাঁচি দিয়ে ১৪ জন পরীক্ষার্থীর মাথার সামনের অংশের বেশকিছু চুল কেটে দেন। এই লাঞ্ছনা সইতে না পেরে আত্মহত্যা চেষ্টা করেন এক শিক্ষার্থী। এরপর থেকেই আন্দোলনে ফুঁসে ওঠেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে চুল কেটে দেয়ার চিত্র ফুটে ওঠে। যদিও সদর্পে চুল কাটার বিষয়টি অস্বীকার করেন সেই শিক্ষক। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় তাকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপরও আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এরপর শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে গতকাল শনিবার আন্দোলন থেকে সরে আসেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের বিজয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা। ২৯শে সেপ্টেম্বরের ঘটনায় অন্তত চার শিক্ষার্থী আহত হন। আবার আলোচনায় আসে লুঙ্গি পরে ক্লাস করায় তিন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করার ঘটনা। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তিন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, পরীক্ষা চলাকালে ক্যামেরার এঙ্গেল ঠিক করবার সময় লুঙ্গি চোখে পড়ে। লুঙ্গি পরার অভিযোগে তিন শিক্ষার্থীকে জুম থেকে বের করে দেয়ার পর বহিষ্কার করা হয়। ঘটনাটি ঘটে ২৭শে অক্টোবর। এই বহিষ্কারাদেশের প্রতিবাদ জানায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। তারা এই বহিষ্কারাদেশের প্রতিবাদে লুঙ্গি পরে ক্লাসে উপস্থিত হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলের তালা ভেঙে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করেছেন হল খুলে দেয়ার আগেই। শতাধিক শিক্ষার্থী শুক্রবার দুপুরে হলে প্রবেশ করেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে সবাই মেস ছেড়ে দিয়েছে। মাত্র পাঁচ দিনের জন্য পুরো মাসের ভাড়া দিতে হবে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই হলে উঠতে হয়েছে। ৫ই অক্টোবর থেকে ঢাবির হল খুলে দেয়ার কথা রয়েছে। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্র সংগঠনের নেতারা ৫ই অক্টোবরের মধ্যে হল খুলে দেয়া না হলে তালা ভেঙে প্রবেশের ঘোষণা দেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব অনুষদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু খোলা হয়নি হল। ফলে পরীক্ষার্থীরা অধিক অর্থ প্রদান করে আশেপাশের এলাকায় থাকছেন। ২৩শে সেপ্টেম্বর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে হল খুলে দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১১৬ বার