করোনায় মৃত ব্যক্তির পোস্টমর্টেম হলো সিলেটে, দেশে প্রথম
রফিকুল ইসলাম কামাল :: বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া কোনোও ব্যক্তির পোস্টমর্টেম (ময়নাতদন্ত) হয়েছে। সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এই ময়নাতদন্ত হয়। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের এক বন্দি করোনায় মারা যাওয়ার পর গতকাল বুধবার এই ময়নাতদন্ত হয়। বিষয়টি সিলেটভিউকে নিশ্চিত করেছেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. আব্দুল জলিল ও জেলার মুজিবুর রহমান। কারা সূত্রে জানা গেছে, আহমদ হোসেন (৫৫) কানাইঘাট উপজেলার দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের ঘড়াই গ্রামের বাসিন্দা। একটি হত্যা মামলায় গত ৫ মার্চ তিনি কারাগারে যান। এরপর গত ৮ মে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পাঠানো হয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আহমদ হোসেনের মধ্যে করোনার উপসর্গ থাকায় তাকে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। গত ৯ মে তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়, ১১ মে ফলাফলে পজিটিভ আসে। কিন্তু এর আগেই গত ১০ মে তিনি মারা যান। পরে তার মরদেহ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়।
গতকাল বুধবার বেলা ২টায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন এণ্ড টক্সিকোলজি বিভাগের মর্গে আহমদ হোসেনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ওসমানীর ফরেনসিক মেডিসিন এণ্ড টক্সিকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শামসুল ইসলাম আর ডা. এন এম মিনহাজ ময়নাতদন্তের কাজ করেন। ময়নাতদন্তের জন্য তাদেরকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম প্রদান করা হয়। জানা গেছে, এই ময়নাতদন্তের বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, মেডিকোলিগ্যাল সোসাইটির সভাপতি ডা. সেলিম রেজা, মহাসচিব ডা. সোহেল মাহমুদ প্রমুখ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। জানতে চাইলে ওসমানীর ফরেনসিক মেডিসিন এণ্ড টক্সিকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শামসুল ইসলাম সিলেটভিউকে বলেন, ‘দেশে প্রথমবারের মতো করোনাক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত করতে সব ধরনের সাপোর্ট দিয়েছেন ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. ময়নুল হক। এছাড়া বিএমএ মহাসচিব, মেডিকোলিগ্যাল সোসাইটির সভাপতি ও মহাসচিব, ময়মনসিংহ মেডিকেলের মোখলেছ স্যার, মিটফোর্ডের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক বেলায়েত স্যার পরামর্শ দিয়েছেন।’ময়নাতদন্ত শেষে গতকালই আহমদ হোসেনের লাশ সিলেট নগরীর মানিকপীর টিলা কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার পরিবার গ্রামের বাড়িতে লাশ নিতে চায়নি। এ প্রসঙ্গে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মুজিবুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার সিলেটভিউকে বলেন, ‘প্রথমবারের মতো করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলো। এর প্রতিবেদন আমরা এখনও পাইনি। আইনগতভাবে কারাবন্দি মারা গেলে ময়নাতদন্ত করতে হয়।’তিনি বলেন, ‘সামাজিকভাবে হেনস্থা হওয়ার ভয়ে আহমদ হোসেনের পরিবার তার লাশ গ্রামের বাড়িতে নিতে চায়নি। তারা লাশ দাফনে আমাদের সাহায্য চায়। গতকাল বুধবার লাশ দাফনের সময় পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই লাশ দাফন করা হয়েছে।’ সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. আব্দুল জলিল সিলেটভিউকে বলেন, ‘আহমদ হোসেনের লাশ দাফনের জন্য সিলেট সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা নেওয়া হয়। তাদের সহযোগিতায় গতকাল মানিকপীর টিলায় তার দাফন সম্পন্ন হয়।’