কিছু হলেই ‘জাফর ইকবাল এখন কই’!
রাফী শামস- মুহম্মদ জাফর ইকবাল কলাম লেখেন প্রতি দুই সপ্তাহে একটা, এবং সেটা শুক্রবারের শুরুতে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২ টায় প্রকাশিত হয় তার একমাত্র ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজ ও অন্যান্য পত্রিকায়। অর্থাৎ যেকোনো ইস্যুতে তাঁর লেখা ফেসবুক সেলিব্রেটিদের মত যখন তখন পাওয়া যাবেনা।
২.
মুহম্মদ জাফর ইকবাল কোন ফেসবুক সেলিব্রেটি নন। তিনি একজন শিক্ষক। তাঁর কোন ফেসবুক একাউন্ট নেই। তাঁর একমাত্র ভেরিফাইড পেইজটা তাঁর ছাত্ররা চালায়। তারাই সেখানে লেখা পোস্ট করে। যেহেতু তিনি ফেসবুক সেলিব্রেটি নন, তাই তিনি সব ইস্যুতে ‘স্ট্যাটাস’ দেবেন না, এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
৩.
মুহম্মদ জাফর ইকবাল যেহেতু ফেসবুকে নেই, তিনি টেলিভিশনও দেখেননা বলে জানা যায়, তাঁর নিউজ সোর্স হচ্ছে পত্রিকা আর আশেপাশের মানুষদের থেকে প্রাপ্ত তথ্য। তাই কোন একটা ইস্যুকে ফেসবুকে এক্টিভ থেকে আপনি যতটা গভীরভাবে অনুভব করেন, তাঁর থেকে সেটা আশা না করাই শ্রেয়। তিনি ততটুকুই জানেন, যতটুকু পত্রিকা থেকে জানা যায়।
৪.
মুহম্মদ জাফর ইকবাল যখন সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কলাম লিখেছেন তখন আমাদের অনেকে অ আ পড়াও শিখিনি। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে তাঁর প্রথম লেখাটা ছিল ‘মৃত্যু কত প্রকার ও কী কী?’ শিরোনামে, প্রকাশিত হয়েছিল ভোরের কাগজ পত্রিকায় ১৯৯৯ সালে। এরপরেও বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে মিশুক মনির এবং তারেক মাসুদ নিহত হবার পরেও এই বিষয়ে তাঁর বেশ কিছু লেখা আছে।
৫.
মুহম্মদ জাফর ইকবাল কোন পলিটিকাল নেতা নন যে সর্বক্ষেত্রে তাঁকে দিকনির্দেশনা দিয়ে লেখা দিতে হবে। তিনি ফেসবুক সেলিব্রেটি নন যে তাঁকে সব ইস্যুতে স্ট্যাটাস দিতে হবে। তিনি এমন কোন শপথনামায় সই করেছেন বলে জানা নেই যে সব সময় সব বিষয়ে মতামত দিতে তিনি বাধ্য থাকবেন!
৬.
মুহম্মদ জাফর ইকবাল আওয়ামীপন্থী। এটা তাঁর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আওয়ামীপন্থী হয়েও তিনি অন্ধ নন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সবথেকে বেশি সমালোচনা তিনিই করেন। যারা তাঁর লেখা ফলো করে তারা সেটা জানে। আওয়ামী লীগের বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক তাঁর বিরুদ্ধে সিলেটে মিছিল করেছিল কিছুদিন আগেই! যারা তাকে দালাল বলে তারা হয় পলিটিকালি আওয়ামী বিরোধী (আওয়ামী বিরোধী হওয়া দোষের কিছু না) অথবা বইপত্র পড়ার অভ্যাস নাই। তাঁর পরের লেখাটা আসবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২ টায়। সেটা তিনি চলমান ইস্যু নিয়ে লিখতেও পারেন, নাও পারেন। এটা তাঁর সিদ্ধান্ত। সেই লেখা আপনার পছন্দ না হলে পড়বেন না, সমালোচনা করবেন। কিন্তু কোথাও কিছু হলেই ‘জাফর ইকবাল এখন কই’ বলে যারা তেলতেলে হাসি হাসেন তাদের সমস্যাটা কোথায় সেটা বোঝা যায়- হয় তাদের জাফর ইকবালের নাম শুনলেই চুলকানি হয় অথবা তারা খোঁজখবর রাখেন না, পড়াশুনা কম। তিনি এখন পর্যন্ত যা করছেন, তার সিকিভাগ আগে করে আসুন। একই কথা যারা ইলিয়াস কাঞ্চনকে খুঁজছেন তাদেরকেও বলি। এই লোকটা পরিবহন নৈরাজ্য আর সড়কে প্রাণহানি নিয়ে একা লড়াই করে গেছেন অনেক বছর ধরে। তখন কেউ তার পাশে থাকেননি, এখন দু দিনের হুজুগে লাফালাফি করে, স্ট্যাটাসবাজি করে ইলিয়াস কাঞ্চনকে খুঁজছেন? আগে নিজেকে খুঁজে বের করুন… ‘অমুক’ ইস্যুর সময় আপনি কোথায় ছিলেন?