সংসদ সদস্যদের হাতে থাকা বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা আপিল বিভাগ বাতিল করলেও তা আবারও সংসদে ফেরাতে চায় সরকার। কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে তা ফিরিয়ে আনা যায় এ নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনও পদ্ধতি ঠিক করতে পারেনি ক্ষমতাসীনরা। সূত্র জানায়, খ্যাতিমান আইনজীবীরা এ ইস্যুতে রিভিউ করারই পরামর্শ দিয়েছেন। রিভিউয়ের ক্ষেত্রে ৩০ দিনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও আবেদন করে এ জন্য তিন-চার মাস সময় বাড়িয়ে নেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এখন এই কৌশল নিয়েই ভাবছে সরকার।

রিভিউয়ের কৌশল ঠিক করার পাশাপাশি বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফেরাতে সংবিধানে আর কোনও সুযোগ রয়েছে কি-না তা যেমন দেখা হচ্ছে, তেমনি এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বা এখতিয়ার রয়েছে কি-না তাও গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ফল যাই হোক, নির্বাহী ও বিচার বিভাগ মুখোমুখি হয়ে পড়ে এমন পথ এড়িয়ে সমাধান খোঁজার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে সরকার। শুধু বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা ফেরানো নয়, পাকিস্তানের অনুসরণে সামরিক শাসকের প্রবর্তিত ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ নামটিও রাখার বিপক্ষে ক্ষমতাসীনরা।

তবে এসব নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। এ ইস্যুতে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে দলের উচ্চপর্যায়ের বিশেষ নির্দেশনাও রয়েছে। আপিলে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আগামী বৃহ্স্পতিবার  আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরবেন বলে সোমবার (০৭ আগস্ট) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, সংসদের হাতে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা ফেরানোর উপায় খুঁজতে দেশের প্রতিথযশা আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সরকারের আলাপ-আলোচনা চলছে। সরকারের পক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম এ আলোচনা করছেন বলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরা পরামর্শ দিয়েছেন রিভিউ করেই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার কৌশল খুঁজতে হবে। সংবিধান ও রাষ্ট্রপতির কাছে কিছু এখতিয়ার থাকলেও সেটি জটিল পথ। রিভিউর মাধ্যমে ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা গেলে সেটাই শ্রেয় বলে মত দিয়েছেন তারা। সেক্ষেত্রে রিভিউ করার প্রস্তুতির আগে এ জন্য উপযুক্ত সময়-সুযোগ খুঁজে বের করতে হবে। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ করার বিধান থাকলেও এ জন্য তিন-চার মাসের সময় চেয়ে আদালতে আবেদন করতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন আইনজীবীরা।

জানা গেছে, আইনজীবীরা পরামর্শ দিয়েছেন সংসদের হাতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে রিভিউ-ই হল সবচেয়ে উত্তম পন্থা। তবে যে আপিল বিভাগ ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করেছেন, সেখানে রিভিউ করে রায় পাল্টানোর সম্ভাবনা কম বলে ধীরে চলো নীতি’ অনুসরণ করে রিভিউ করাই হবে শ্রেয়। আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউর জন্য এখন সময় চেয়ে নেওয়ার উপায় বের করার পথেই হাঁটছে সরকার। সরকারের দুই জন নীতিনির্ধারক জানান, সরকারের কোনও চালিকাশক্তিই চান না যে নির্বাহী  বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগের দূরত্ব সৃষ্টি হোক। তাই সংবিধানসম্মতভাবে সমাধানযোগ্য পথে হাঁটবে সরকার।

জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ  বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের আপিল বিভাগের রায় নিয়ে সরকার রিভিউ করতে পারে। আর সেই রিভিউ রায় প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে করতে হবে। তিনি আরও বলেন, অবশ্য রিভিউ করার জন্য যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে ৩০ দিনের যে সময় নির্দিষ্ট করা আছে, তা বাড়ানোর জন্য সরকার যথাযথ স্থানে আবেদন করতে পারে।’ এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বলার মতোও কিছু ঘটেনি। কী করা যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

জানা গেছে, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আপিল বিভাগের রায়ের পর ইস্যুটি নিয়ে ক্ষমতাসীনরা বেশ বিপাকে পড়েছেন। এই রায় তাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। এই রায় নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতা দূর করতে সংবিধানে রাষ্ট্রপতির যেসব এখতিয়ার ও ক্ষমতা রয়েছে, তা প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নভাবে ভাবা হচ্ছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দুই জন নেতা জানিয়েছেন, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে অযাচিত বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকতে দলটির উচ্চপর্যায়ের নির্দেশ রয়েছে। এরপরই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের সব পর্যায়ের নেতাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। গত শনিবার সিলেটে একটি অনুষ্ঠানে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পরদিনই বক্তব্যটি ‘দলীয় নয়, অর্থমন্ত্রীর ব্যক্তিগত’ বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn