ক্ষমতা নিতে চাইনি, কিন্তু উপায় ছিল না: এরশাদ
সেনা প্রধান থাকার সময় নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা গ্রহণের পটভূমিটা কী ছিল তা জাতীয় সংসদে তুলে ধরেছেন সাবেক সেনা শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি দাবি করেন, সে সময়ের রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার তাকে ক্ষমতা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছলেন। আর তিনি দেশের স্বার্থে বাধ্য হয়ে এই ক্ষমতা নিয়েছিলেন। বুধবার জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্যে ১৯৮২ সালে তার ক্ষমতায় আরোহনের কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সেনা শাসক এরশাদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর প্রথমে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর প্রধান থাকাকালের প্রথমে সামরিক আইন প্রশাসক এবং পরে রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৮১ সালের ৩১ মে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে তার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসেন বিএনপির আবদুস সাত্তার। কিন্তু এক বছরও তিনি টিকতে পারেননি। পরের বছরের ২৪ মার্চ সাত্তারকে উৎখাত করে নিজেকে সামরিক আইন প্রশাসক এবং রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। এরশাদ বলেন, ‘আমি কিছুটা পেছনে ফিরে যেতে চাই, জাস্টিস সাত্তার নির্বাচন করলেন। আমি সেনাবাহিনীর প্রধান, আমরা সাহায্য করেছিলাম ক্ষমতায় আসার জন্য। এক বছরের মাথায় তিনি বললেন, তার মন্ত্রিসভার সমস্ত সদস্য দুর্নীতিপরায়ন। আমি দেশ পরিচালনা করতে অপারগ। আমি সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা অর্পন করতে চাই।’
‘আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। দেশ পরিচালনা করা সহজ ব্যাপার নয়। সেটা উপলব্ধি করি। আমি নিতে চাইনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে সে দায়িত্ব আমাকে গ্রহণ করতে হয়েছিল।’ নির্বাচন দিয়ে ব্যারাকে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন দাবি করে এরশাদ বলেন, ‘আমি সেদিন বলেছিলাম, আমি শৃঙ্খলা ফেরার পর নির্বাচন দিয়ে ব্যারাকে ফিরে আসতে চাই। আমি আমার কথা রেখেছিলাম। ১৯৮৪ সালে আমি নির্বাচন দিয়েছিলাম, সেই নির্বাচনে যদি সকলে অংশগ্রহণ করতেন, তাহলে আমি ব্যারাকে ফিরে যেতে পারতাম।’ ‘দুঃখের বিষয়, তারা সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। বিএনপি, জামায়াত, আওয়ামী লীগ এবং এখানে যারা আছেন মেনন সাহেব, ইনু সাহেব অংশগ্রহণ করেননি। তার ফলে আমাকে ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি সৃষ্টি করতে হয়েছিল।’ ‘আমি আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। আমার কোনো দোষ নেই, এ কথা বলতে চাইছি।’ ‘আমাকে মাঝেমাঝে বলা হয় স্বৈরাচার। আমাকে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছিল, কোনো উপায় ছিল না, ক্ষমতা নিতে হয়েছিল দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে নির্বাচন দিয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।’ এরশাদ এসব বক্তব্য রাখার সময় সংসদে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন সংসদ সদস্যদের কেউ কেউ।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা রাষ্ট্রপতি ছিলেন এরশাদ। কিন্তু গণ আন্দোলনের মুখে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তিনি সরে দাঁড়ান। বাজেট বক্তব্যের শুরুতেই এরশাদ গভীর শ্রদ্ধা জানান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি। তিনি বলেন, ‘যার জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না, যার জন্ম না হলে বাংলাদেশ আর্মির জন্ম হতো না, যার জন্ম না হলে আমি ন্যাশনাল ডিফেন্ড কলেজে পড়তে যেতে পারতাম না, যার জন্ম না হলে আর্মি সৃষ্টি হতো না, যার জন্ম না হলে বাংলাদেশ সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতে পারতাম না।’ এই বক্তব্যের সময় সংসদে সবাই হাততালি দিয়ে এরশাদকে স্বাগত জানান।