জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) অসহযোগিতায় সিলেট এবং সুনামগঞ্জে খনিজসম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি) এবং জ্বালানি বিভাগ থেকে কয়েক দফা জেলা প্রশাসন বরাবর চিঠি দিলেও ডিসিরা তা গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। ফলে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ জ্বালানি বিভাগ।

সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বৈঠকে ডিসিদের অসযোগিতার বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমান। তিনি বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের চিঠিকে গুরুত্ব দিয়ে ডিসিদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় তৎপর না হওয়া দুঃখজনক। এদিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহার করে সময়মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সিলেটের কানাইঘাটের লোভাছড়া পাথর কোয়ারি ও পাথরমহাল বালুমহাল হিসেবে ইজারা দেওয়ায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সেটি নির্ধারণ করতে বিএমডিকে নির্দেশ দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, লোভাছড়া কোয়ারিতে জব্দকৃত পাথর নিলামে দেওয়ার বিষয়ে বিএমডি থেকে সিলেটের ডিসিকে বারবার চিঠি দেওয়া হয়েছে; কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও জব্দকৃত পাথর নিলামে দেওয়া হচ্ছে না। বিএমডির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলছেন, দীর্ঘ সময় পাথর পড়ে থাকা এবং নিলাম না হওয়ায় সেগুলো একটি সিন্ডিকেট সরিয়ে ফেলছে বলে খবর এসেছে। যদি দ্রুত জব্দকৃত পাথর বিক্রি করে দেওয়া যেত, তবে সরকার লাভবান হতো। এখন আদৌ লোভাছড়া কোয়ারিতে কোনো পাথর রয়েছে কিনা বা কী পরিমাণ পাথর আছে, সে বিষয়ে তদন্ত ছাড়া বলা সম্ভব হবে না। বর্তমানে আদৌ পাথর আছে কিনা সেই বিষয়ে তদন্ত করতে জ্বালানি বিভাগ থেকে বিএমডিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কাজী এমদাদুল ইসলামকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এদিকে জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জব্দকৃত রাষ্ট্রীয় সম্পদ পাথরগুলো রক্ষা করতে বিএমডি থেকে সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তরকেও বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু জেলা প্রশাসক অফিস নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করায় জব্দকৃত পাথর বিক্রির কোনো সমাধান হয়নি। এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে সম্প্রতি একটি বৈঠক হয়। এতে সচিব বলেন, এটা স্পষ্টত জেলা প্রশাসকের অসহযোগিতার কারণে হয়নি। তিনি বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

শুধু সিলেট নয়, সুনামগঞ্জের ডিসির বিরুদ্ধেও বিএমডির অভিযোগ রয়েছে। বৈঠকে বিএমডির মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব মো. নুুরুন্নবী বলেন, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক অবৈধভাবে পাথরমহালকে বালুমহাল হিসেবে ইজারা দেন। পাথরমহালকে বালুমহাল হিসেবে কেন ইজারা দেওয়া হয়েছে এবং দ্রুত সেই ইজারা বাতিল করতে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয় বিএমডি; কিন্তু জেলা প্রশাসক ইজারা এখনো বাতিল করেননি। তবে সুমানগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ এ বিষয়ে বিএমডিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে আমাদের সময়কে জানান জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।

তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটি চিঠি পাঠিয়েছি। এখানে বালুমহালকে পাথরমহাল হিসেবে ইজারা দেওয়া হয়নি। বালুমহালই ইজারা দেওয়া হয়েছে। আমার ধারণা বিএমডিকে কেউ ভুল বুঝিয়েছে। আমরা বিএমডিকে চিঠি দিয়ে বালুমহাল ও পাথরমহালের নকশা পাঠিয়েছি। সেখানে স্পষ্ট ব্যাখ্যা আছে বালুমহাল এবং পাথরমহাল দুটোর অবস্থান সম্পূর্ণ আলাদা দাগে।

বিএমডির মহাপরিচালক মো. নুরুন্নবী বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজন ঘটনা। জেলা প্রশাসকরা যদি রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় তৎপর না হন, তবে মন্ত্রণালয় বা সংস্থাগুলো কী করতে পারে। লোভাছড়া পাথরকোয়ারি এবং সুনামগঞ্জের পাথরমহালকে বালুমহাল বলে ইজারা দেওয়ার বিষয়ে আমরা জ্বালানি বিভাগকে জানিয়েছি। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান বলেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা জেলা প্রশাসকদের কাজ; কিন্তু সিলেট ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকদের বিএমডি থেকে চিঠিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমনকি জ্বালানি বিভাগ থেকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে পাথরকোয়ারির ইজারা প্রদান এবং পাথরমহালকে বালুমহাল হিসেবে ইজারা বাতিল করতে; কিন্তু তারা সেটি করেননি। বিষয়টি আমি বিভাগীয় কমিশনার এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। জেলা প্রশাসকরা রাষ্ট্রীয় স্বার্থ দেখবেন- এটাই তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সেটি না করে ভিন্ন কিছু করলে সেটি অবশ্যই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দেখবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn