খুলনায় প্রেসিডেন্ট-যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের ক্ষমতা রাখে বাংলাদেশ
এর আগে প্রেসিডেন্ট খুলনায় নৌঘাঁটি বানৌজা তিতুমীরে পৌঁছালে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ এবং কমোডর কমান্ডিং খুলনার কমোডর সামসুল আলম তাকে অভ্যর্থনা জানান। কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নৌ-সদস্যদের আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ইতিমধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত চট্টগ্রাম ড্রাই ডকে ফ্রিগেট নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে খুলনা শিপইয়ার্ডসহ অন্যান্য শিপইয়ার্ডে দেশীয় প্রযুক্তিতে জাহাজ নির্মাণের মাধ্যমে এ খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় সম্ভব হবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে জাহাজ রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পটুয়াখালীর রাবনাবাদ এলাকায় ও ঢাকার খিলক্ষেতে পূর্ণাঙ্গ নৌঘাঁটি এবং চট্টগ্রামের পেকুয়ায় একটি সাবমেরিন ঘাঁটির নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী গঠনের লক্ষ্যে প্রথম ধাপ ছিল নৌবাহিনীর জন্য আকাশসীমা উন্মোচন। বর্তমান সরকারের আমলে দুটি হেলিকপ্টার ও দুটি মেরিটাইমন পেট্রোল এয়ারক্রাফট নিয়ে গঠিত হয় নেভাল এভিয়েশন। নেভাল এভিয়েশনে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অত্যাধুনিক সমর ক্ষমতাসম্পন্ন আরো দুটি হেলিকপ্টার এবং মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট শিগগির যুক্ত হবে। যা সমুদ্রসম্পদ এবং সমুদ্রসীমা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’ সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা বিধান অপরিহার্য মন্তব্য করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘ক্রমাগত সম্পদ আহরণের ফলে স্থলভাগের সম্পদ সীমিত হয়ে পড়ায় সারা বিশ্ব আজ সমুদ্র সম্পদের দিকে নজর দিয়েছে। বাংলাদেশের বিশাল সামুদ্রিক এলাকায় আমাদের জন্য রয়েছে মৎস্য, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ পদার্থসহ মূল্যবান সম্পদ। এ ছাড়া ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় প্রায় তিন কোটি মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের বাণিজ্যের ৯০ ভাগের বেশি সমুদ্রপথেই পরিচালিত হয়। এমতাবস্থায় আমাদের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা বিধান অপরিহার্য।’ চীন ও মালয়েশিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘কারিগরিভাবে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে এই দুই দেশ আমাদের নৌবাহিনীর নাবিকদের দক্ষ করে তুলেছে।’ যুদ্ধজাহাজ তৈরি করতে সক্ষম হওয়ায় তিনি খুলনা শিপইয়ার্ডকেও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও নাবিকদের উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যুদ্ধের পর প্রায় শূন্য থেকে যে নৌবাহিনীর যাত্রা শুরু হয়েছিলে, সময়ের পরিক্রমায় আজ তা একটি পেশাদার ও বহুমাত্রিক নৌবাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বিশাল সমুদ্র আপনাদের কর্মক্ষেত্র। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সামুদ্রিক সম্পদের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।’ সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখা, চোরাচালান ও জলদস্যু দমন, জাহাজ চলাচলে ব্যবহৃত সমুদ্রপথের নিরাপত্তা বিধানে নৌবাহিনীকে সদা সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, সেনা ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।