গুলশান হামলা: আরও ৮ জনকে খুঁজছে পুলিশ
কামাল তালুকদার-
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় জড়িতদের তালিকায় এ পর্যন্ত ২২ জনের নাম এসেছে জানিয়ে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, তাদের মধ্যে আটজনকে এখনও খুঁজছেন তারা।
ওই ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে অনেকে বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছেন এবং কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন জানিয়ে মনিরুল বলেন, “সোহেল মাহফুজ, রাশেদ, ছোট মিজান, চকলেট, সৈয়দ মাহফুজ, আব্দুস সামাদ ওরফে আরিফ ওরফে মামু, মুসা এবং একজন চিকিৎসককে গুলশান হামলার ঘটনায় পুলিশ খুঁজছে।”
গতবছর রোজার মধ্যে ১ জুলাই রাতে একদল অস্ত্রধারী তরুণ কূটনীতিক পাড়া গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঢুকে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। তাদের রুখতে গিয়ে বোমায় নিহত হন গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম এবং বানানী থানার ওসি মো. সালাউদ্দিন।
রাতভর আতঙ্ক-উত্তেজনার পর সকালে সেখানে অভিযান চালায় সামরিক বাহিনীর প্যারাকমান্ডো দল। নিহত হন পাঁচ জঙ্গি ও রেস্তোরাঁর এক কর্মী। পরে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় ২০ জনের লাশ, যাদের মধ্যে ১৭ জনই ছিলেন বিদেশি নাগরিক।
হামলার ঘটনার দুই দিন পর সন্ত্রাস দমন আইনে ‘অনেককে’ আসামি করে সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা করে পুলিশ। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ওই মামলার তদন্ত করছে।
গত দুই বছরের জঙ্গি কায়দায় হত্যাকাণ্ডগুলোর মতো এই ঘটনাতেও আইএসের নামে দায় স্বীকারের বার্তা আসে। তবে পুলিশ তা নাকচ করে বলে আসছে, বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবির একটি নতুন অংশ- নব্য জেএমবি- ওই হামলা চালায়। তাদের সঙ্গে আইএস এর কোনো সম্পর্ক নেই।
ওই মাসেই গুলশানের ৭৫ ও ৭৯ নম্বর সড়কে বসানো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও প্রকাশ করে র্যাব, যেখানে সড়কে চলাচলরত এক নারী ও তিন পুরুষকে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের পরিচয় জানতে সহায়তা চাওয়া হয়।
গুলশান হামলায় কতজন জড়িত ছিল জানতে চাইলে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, “মারা যাওয়া ছয়জনসহ বিশ থেকে বাইশ জনের অস্তিত্ত্ব পাওয়া গেছে। এর বাহিরেও থাকতে পারে।”
গুলশান হামলার পর সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গি হলেন নিবরাজ ইসলাম, মীর সামিহ মুবাশীর, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, খায়রুল ওরফে খায়রুজ্জামান ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।
গুলশান হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক অভিযানের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে নিহত হন তামীম চৌধুরী, সারোয়ার জাহান, তানভীর কাদেরী, নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান, সাবেক মেজর জাহিদুল ইসলাম, রায়হান কবির ওরফে তারেক, আব্দুল্লাহ ও ফরিদুল ইসলাম আকাশও গুলশান হামলায় সম্পৃক্ত ছিলেন বলে তথ্য পাওয়ার কথা বলেন মনিরুল।
এছাড়া ‘ওই ঘটনায় সম্পৃক্ত; রাজীব গান্ধী, রিগ্যান ও বড় মিজান পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানান তিনি।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার আলম জানান, যে আটজনকে পুলিশ খুঁজছে, তাদের মধ্যে এক চিকিৎসক আছেন। তিনি মেজর জাহিদের সম-বয়সী এবং একই সঙ্গে জঙ্গিবাদে জড়ান।
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মি উদ্ধার অভিযানে উদ্ধার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
গুলশান হামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে আরও একজনের এসেছে জানিয়ে মনিরুল বলেন, “তিনি আগেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে গুলশানের মামলায় এখনও গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। তিনি একটি প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী। আমরা গুলশানের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার তথ্য যাচাই বাছাই করে দেখছি।”
যাদের পুলিশ খুঁজছে তারা সবাই হামলায় অংশ নিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে কাউন্টার টোরোরিজম প্রধান বলেন, “এ ধরনের মতাদর্শীদের ‘কমন ইনটেনশন’ তৈরি হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে যাক বা না যাক, অন্য কোনো কাজ করুক বা না করুক, তারা সাপোর্ট দেয় যে এটা করা যায় বা করা উঠিত। তখন আইন অনুযায়ী ওই ঘটনার দায় অর্থাৎ ফৌজদারি দায় তাদের উপরও বর্তায়।”
হামলার রাতে পরিবার নিয়ে হলি আর্টিজানে থাকা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করার পর সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তার বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, হাসনাত করিমের বিষয়ে এখনও তদন্ত চলছে।
বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার হওয়া আবুল কাশেমও হলি আর্টিজানের ঘটনায় জড়িত ছিলেন কি-না জানতে চাইলে এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, “আবুল কাশেম যেহেতু ‘জাস্টিফাই’ করেছে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে, আমার ধারণা, তার নামও এসে যাবে।
“বইপত্র লেখা ছাড়াও জঙ্গিদের ট্রেইনিং সেন্টারগুলোতে আবুল কাশেমের যাতায়াত ছিল। তবে ঠিক ওদের (হলি আর্টিজানে হামলাকারী) প্রশিক্ষণে গিয়েছিলেন কি না- সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”