পিয়াস সরকার:- প্রাথমিকের সহকারী প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষকের বর্তমানে দীর্ঘশ্বাস হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্রেড। ১৫তম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেডে তাদের উন্নীত করার ১১ মাসেও মেলেনি ভাতা। প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন গ্রেড সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আন্দোলন করেছেন। এরই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাস পান তারা। এরপর ২০২০ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি ১৫তম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। কিন্তু এরপর ১১ মাস কেটে গেলেও তারা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
প্রজ্ঞাপনের আলোকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রধান হিসাব কার্যালয় থেকে ২৮শে সেপ্টেম্বর হিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে অফিস আদেশ প্রেরণ করা হয়। ২৯শে নভেম্বর হিসাব নিয়ন্ত্রক কার্যালয় থেকে অতিরিক্তি হিসাব মহানিয়ন্ত্রক স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ আইবিএসপ্লাসপ্লাস (ইন্ট্রিগ্রেটেড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম) কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়। এই নির্দেশনা প্রাপ্তির পরেও তারা ১৩তম গ্রেডে সংযুক্ত হতে পারেননি।
এই বিষয়ে ক্ষেতলাল, জয়পুরহাট সহকারী শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহবুবর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে আমাদের দু’টি বোনাস ভাতা পাইনি।অনেক শিক্ষক ১৩তম গ্রেডের সুবিধা ভোগ করার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষকের আবেগ, অনুভূতি ও গুরুত্ব বিচেনায় তিনি এইবিএএসপ্লাসপ্লাস-এ অন্তর্ভুক্ত করণের আকুল আবেদন জানান। তথ্য মতে, বর্তমানে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা ১৫তম গ্রেডে ৯ হাজার ৭শ’ টাকা বেতন স্কেলে চাকরি করছেন। ১৩তম গ্রেড বাস্তবায়ন হলে তারা ১১ হাজার টাকার বেতন স্কেলে উন্নীত হবেন।
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের সভাপতি মো. সামসুদ্দিন মাসুদ বলেন, আমরা বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছি। আমাদের কাজটা দ্রুতই হয়ে যাবার কথা। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য কারণে তা বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট-১) নাজমা মোবারক বলেন, আমরা অ্যাপ্রুভ করে দিয়েছি। খুব দ্রুতই তারা ১৩তম গ্রেডের সুবিধাভুক্ত হবেন। আর হিসাব মহানিয়ন্ত্রক জহিরুল ইসলাম এ বিষয় নিয়ে কোনো জটিলতা নেই উল্লেখ করে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ে এটি প্রক্রিয়াধীন আছে। খুব শিগগিরই এটির সুফল মিলবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশ থেকে জানা যায়, অর্থ বিভাগের সম্মতিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড-১৪ (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) এবং বেতন গ্রেড-১৫ (প্রশিক্ষণ বিহীন) থেকে গ্রেড-১৩তে উন্নীত করা হয়।
অর্থ বিভাগের সম্মতিপত্রে ৫নং কলামে উল্লেখ রয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ‘২০১৯-এর তফসিল অনুযায়ী পদ পূরণযোগ্য’ এবং ১নং শর্তে বলা হয়েছে ‘৪নং নির্ধারণকৃত বেতন গ্রেড ৫নং কলামে প্রদর্শিত যোগ্যতা/অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কার্যকর হবে। অর্থাৎ ২০১৯ সালের নিয়োগবিধি অনুযায়ী যারা নব নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন তাদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার এ শর্ত প্রযোজ্য হবে। বাদবাকি শিক্ষকরা যারা পূর্ব থেকে কর্মরত আছেন অর্থাৎ সহকারী শিক্ষক হিসেবে যাদের অভিজ্ঞতা আছে তারাও বেতন স্কেল উন্নীতকরণের এ সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন।
গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, ২০১৯ সালের নিয়োগবিধি জারি হওয়ার পূর্বের নিয়োগবিধি অনুযায়ী যারা সহকারী শিক্ষক হিসেবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্বিশেষে বেতন গ্রেড-১৩ এর সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।