‘ঘরে ঘরে গিয়ে মশারি টানানো সম্ভব নয়’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক বলেছেন, ‘চিকুনগুনিয়া আক্রান্তকে মশারির মধ্যে রাখা দরকার। তাও যদি মানুষকে জানাতে হয় তাহলে আর কী বলব। আমার পক্ষে ঘরে ঘরে গিয়ে মশারি টানানো, ঘরের মশা নিধন করা সম্ভব নয়। সবাইকে সচেতন হতে হবে।’ আজ শুক্রবার ডিএনসিসির নগর ভবনে ‘চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব এবং ডিএনসিসি গৃহীত কার্যক্রম’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সম্মেলনে জানানো হয় চিকুনগুনিয়া রোগ ‘মহামারির আকার’ ধারণ করেছে। চিকুনগুনিয়া মহামারির আকার ধারণ করেছে বলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তিন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেছেন। তবে এ মহামারির দায়দায়িত্ব ডিএনসিসির নয় বলে দাবি করে মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘মহামারি হয়েছে কিনা তা দেখবে সরকার। মহামারির জন্য ডিএনসিসি দায়ী নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসিসি মশক নিয়ন্ত্রণ দুই বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মাহমুদুর রহমান ও ডা. মুনজুর এ চৌধুরী সরাসরি নিজেদের ব্যক্তিগত মতামতে বলেন, ‘চিকুনগুনিয়া মহামারির আকার ধারণ করেছে।’ তবে সরাসরি না বললেও অপর এক বিশেষজ্ঞ ডা. তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ সমর্থন দিয়ে গেছেন। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রকাশ করা তথ্যানুযায়ী চিকুনগুনিয়া রোগীর সংখ্যা ৬৪৯ জন সঠিক নয় উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘বাস্তবে চিকুনগুনিয়া রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি।’ চিকুনগুনিয়া রোগ বহনকারী এডিস মশা বাসাবাড়ির ভেতরে প্রজনন করে যা নিধন করা সিটি করপরেশনের পক্ষে সম্ভব নয় জানিয়ে মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘বাসাবাড়ির নিরাপত্তা জনিত কারণে কীটনাশক প্রয়োগ করা সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘চিকুনগুনিয়া ভাইরাস দেশের বাইরে থেকে এসে থাকতে পারে। কিংবা আফ্রিকা থেকে অনেক মানুষ ঢাকায় এসেছেন তাদের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।’ আগাম কোনো বার্তা না থাকায় চিকুনগুনিয়ায় বিগত দিনের থেকে বেশি সংখ্যক আক্রান্ত হয়েছে মেয়রের এমন এক বক্তব্যের সূত্র টেনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জানানো হয়- গত বছরের ডিসেম্বরে ৩০ জন চিকুনগুনিয়ায় আক্রন্ত সনাক্ত হয়েছিল। তাহলে কত দিন হলে আগাম বার্তা বলে বিবেচনা করা হবে? জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘এমন তথ্য আমার জানা নেই।’ সংবাদ সম্মেলনে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে ড্রেনের মশার জন্য চিকুনগুনিয়া হয় না। তবে চিকুনগুনিয়া আক্রন্তকে অন্য মশা কামড়ালে সেই মশা থেকেও এই রোগ ছড়াতে পারে। এমন কথা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের তরফ থেকে প্রশ্ন করা হয়?- মশা নিধনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের তাহলে অন্য মশা নিধনে ব্যর্থ হওয়ায় এ রোগের প্রভাব বিস্তার করেছে কি? জবাবে মেয়র বলেন, ‘আমাদের অনেক দোষ আছে। তবে যেখানে পাঁচ দিন পর পর মশা নিধনের ওষুধ প্রয়োগের কথা, সেখানে আমরা তিন দিন পর পর প্রয়োগ করছি। কোনোভাবে দায়ভার ডিএনসিসির নয়।’
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিএনসিসির বিজ্ঞাপনে সচেতনতার জন্য মশারির কোনো দৃশ্য নেই। তাদের মতে রোগে আক্রান্ত রোগীকে প্রথম পাঁচ দিন মশারির মধ্যে রাখা উচিত। তা না হলে, অন্য মশা এ রোগীকে কামড়ালে সেখান থেকেও চিকুনগুনিয়া পরিবারের অন্য সদস্যদের আক্রান্ত করতে পারে। মশা নিধনে ডিএনসিসির ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বরাদ্দ ২৩ কোটি টাকা। তবে বর্তমানে যেভাবে মশা নিধনের ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে তাতে এ বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়ে ৩০ কোটি টাকায় পৌঁছাবে এমন কথা জানান মেয়র। তিনি আরও জানান, বর্তমানে মশা নিধনের জন্য ডিএনসিসির হস্তচালিত মেশিনের সংখ্যা ৩৮৭টি, ফগার মেশিন ২৫৫টি, হুইল ব্যারো মেশিন ১০টি এবং ভ্যাহিক্যাল মাউন্টেড ফগার ১টি। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেসবাউল ইসলাম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম এম সালেহ ভূঁইয়া, প্রধান বর্জ কর্মকর্তা কমডোর আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।