চরম অর্থ সংকটে দেশ ছেড়ে লন্ডনে সাকা পরিবার
চরম অর্থনৈতিক সঙ্কট, ব্যবসা-বাণিজ্যের অব্যবস্থাপনা, সরকারের চাপ—সবমিলিয়ে চরম বেকায়দায় রয়েছে যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর পরিবার। দেশ ছেড়ে এখন লন্ডনে অবস্থান করছে সাকা চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা। তবে এই পরিবারের সদস্যদের দিয়েই চট্টগ্রামের অন্তত দুটি সংসদীয় আসনে প্রার্থী দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে বিএনপি। নির্বাচন তো দূরের কথা এই পরিবারের বিশাল খরচ চালানোই দুরূহ হয়ে পড়েছে। বাজেয়াপ্ত হতে পারে—এই ভয়ে এই পরিবারের সম্পত্তিও কেউ কিনতে চাচ্ছে না। তাই আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ নেই সাকা পরিবারের। সাকার পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাকা চৌধুরী আনুমানিক হাজার কোটির টাকার বেশি মালিক ছিলেন। তার বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যও ছিল। তবে সেই সুদিন আর নেই। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৫ সালের নভেম্বরে ফাঁসি কার্যকর হওয়া সাকার পরিবার বর্তমানে নগদ টাকার সঙ্কটে ভুগছে।
সাকা চৌধুরীর রেখে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিমাসে যে পরিমাণ অর্থ আসে তা দিয়ে বিলাসী ও রাজকীয় জীবনে অভ্যস্ত তার পরিবারের সদস্যরা কোনোভাবেই খাপ খাওয়াতে পারছেন না। এ অবস্থার উত্তরণে পৈতৃক সম্পত্তি ও ব্যবসার শেয়ার বিক্রি করতে চাইলেও তা কেনার লোক খুঁজে পাচ্ছে না তারা। এর মধ্যেই বিক্রির জন্য পরিচিতজন ও শুভার্থীদের কাছে অনেক ধর্ণা দিয়েছে তারা। কিন্তু বাজেয়াপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় এসব সম্পত্তি কিনতে আগ্রহী নয় কেউ। এ অবস্থায় সাকা চৌধুরীর ছোট ভাই জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরীই পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছেন। ভাবি-ভাতিজাদের বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হলে তিনি তা মেটানোর চেষ্টা করছেন।
সূত্র জানায়, ফাঁসির দড়ি থেকে সাকা চৌধুরীকে রক্ষার জন্য দেশে-বিদেশে সব ধরনের চেষ্টাই করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। ২০১০ থেকে ফাঁসির আগ পর্যন্ত দীর্ঘ পাঁচ বছর এই নিয়ে নানা দৌড়ঝাঁপ করতে গিয়ে আর্থিকভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাকার পরিবার। কিন্তু তাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কার্যকর করা হয় সাকার মৃত্যুদণ্ড। সেই থেকে আর্থিক, মানসিক বিধ্বস্ততা লেগেই আছে সাকা পরিবারে। দিনে দিনে বেড়েছে দেনাও। সাকার দুই ছেলে ফয়জুল কাদের চৌধুরী, হুম্মাম কাদের চৌধুরী পৈতৃক ব্যবসাবাণিজ্য নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও তেমন একটা সফল হতে পারছে না বলে জানা গেছে। তাছাড়া তাদের তৎপরতা, গতিবিধি এখনো বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে রয়েছে।
এদিকে সরকারের মানসিক চাপ ও নজরদারি রয়েছে সাকার পরিবারের সদস্যদের ওপর। ফলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও তেমন যুক্ত হতে পারছে না তারা। প্রায় ৮ মাস নিখোঁজ থাকার পর গত বছরের ৩ মার্চ বাড়ি ফিরে আসেন সাকার ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। ওইদিন সকালে ধানমন্ডি লেকের কাছে কে বা কারা তাকে ফেলে চলে গেলে তিনি বাসায় ফিরে আসেন। এতদিন তিনি কোথায় ছিলেন, কে বা কারা তাকে নিয়ে গেছে এসবের কিছুই জানেন না হুম্মাম। হুম্মাম কাদের চৌধুরী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এদিকে ২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সাকার ভাই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে গোপন বৈঠকের সময় সাকা চৌধুরীর পৈতৃক বাড়ি ‘গুডস হিল’ থেকে ২০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসব কারণে চরম বেকায়দায় রয়েছে সাকার পরিবার। এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধে যাদের দণ্ড বা দণ্ড কার্যকর হয়েছে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াফত করার জন্য অনেক আগে থেকেই সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে আসছে মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশের সুশীল সমাজ। সাকা চৌধুরীর সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগার অথবা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করার জন্য নানা শ্রেণিপেশার মানুষের দাবি এখনো অব্যাহত আছে। সাকা চৌধুরীর পৈতৃক বাড়ি ‘গুডস হিল’কে ‘ঘৃণাচত্বর’ ঘোষণার দাবি উঠেছে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও তার ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী রাঙ্গুনিয়া থেকে বিএনপির টিকেটে প্রার্থী হতে পারেন। দলের নীতিনির্ধারণী মহলও সাকা চৌধুরীর আসনগুলোতে তার পরিবারের সদস্যদের দিয়ে নির্বাচন করাতে চায় বলে জানা গেছে। কিন্তু নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ নিয়ে নানা মত রয়েছে। রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ার বিএনপি নেতাকর্মীদের তথ্য মতে, তারা বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী নয়। তদুপরি বর্তমান পারিবারিক অবস্থায় তারা নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থীর বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে আসতে পারবেন কি না এ সংশয় রয়েছে। সাকা চৌধুরীর সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী নাজিম উদ্দিন শিবলু বলেন, ‘স্যারের (সাকা) পুরো পরিবার এখন লন্ডনে অবস্থান করছে। গত বছরের মাঝামাঝিতে তারা দেশ ছাড়েন। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রার্থী করা হলে তারা দেশে আসতে পারেন। এমনিতে নির্বাচন নিয়ে তারা এত বেশি আগ্রহী নন।’