ছাতকে বোর ফসল পানির নীচে
চান মিয়া-
ছাতকে এক সপ্তাহের ভারিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার সবগুলো নদ-নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করছে। আগাম বন্যায় প্রায় ১০হাজার হেক্টর ভূমির বোর ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে সাড়ে ৪শ’কোটি টাকার ফসল গোলায় তুলতে পারছেনা উপজেলার ৮৫হাজার কৃষক। গত ২৪মার্চ থেকে অব্যাহত ভারি বর্ষন ও নদ-নদীর অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে ৬০টি ছোট-বড় হাওরসহ শতাধিক বিল-ঝিলে আবাদকৃত বোর ফসল তলিয়ে যায়। পাহাড়ি ঢল, সুরমা, ধলাই, পিয়াইন ও চেলানদীর অব্যাহত পানি বৃদ্ধি, ভারি বর্ষন, শিলাবৃষ্টি ও ব্যাপক ঝড়-তুফানে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কৃষকরা জানান, সোনারতাল হাওর, জল্লারহাওর, চৌকা বড়হাওর, বলই হাওর, গয়ারের হাওর, ঝাওয়া বিল, তেরাবিল, পাঁচবিলা, হাওয়াজিয়া, মজমদারি, পলবন্দ, খলাবন্দ, ধলমিশা ও লোহাজিরি, কুড়িবিল, দেওলাবিল, জিয়াপুর হাওরসহ বিভিন্ন হাওরে বোর ধানের উপর এখন ৪ফুট থেকে ৬ফুট পানি রয়েছে। ফসল এখনও কাটার উপযোগি হতে আরো ১৫/২০দিন লাগবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এপরিস্থিতিতে কৃষক এখন ফসল গোলায় উঠাতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাদের যেন কান্না আর থামছেনা। এখন আকাশ মেঘলা দেখলেই অজানা আতঙ্কে তাদের ভেতর কেঁপে উঠে। এই বুঝি ভারি বর্ষন, শিলাবৃষ্টি, সুরমা ও পাহাড়ি নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি ঘটে বোর ফসলের বারোটা বাজিয়ে দেয়। এই বুঝি সুরমার পানি বৃদ্ধি ঘটে দু’ক’ল বেয়ে উপচে পড়বে। এসব অজানা আতঙ্কে বোর ফসলের ভবিষ্যত নিয়ে কৃষকরা প্রতিবছরের ন্যায় এভারেও দুশ্চিন্তায় ভোগছিলেন। এরই মধ্যে কালবৈশাখী আসার অনেক আগেই চৈত্র মাসের ১০তারিখ থেকে শুরু হয় ঝড়-তুফানও ভারিবর্ষন। ১৩ইউনিয়নও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ছাতক উপজেলায় মোট আবাদি জমি ২২হাজার ১শ’ ১৭হেক্টর। এরমধ্যে চলতি রোপা আমন ৯হাজার ৫শ’ ২০হেক্টর, বোর ১২হাজার হেক্টর, আউশ ৩শ’হেক্টর ভূমি রয়েছে। এবারে বোর মৌসুমে প্রায় ১২হাজার হেক্টর ভূমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। যার উৎপাদন ৪২হাজার মে.টন চালের মূল্য প্রায় সাড়ে ৪শ’কোটি টাকা। এতে কৃষকদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন অঙ্কুরেই ঝরে গেল। এভাবে সুনামগঞ্জের ২৫টি নদ-নদীর পানি ব্যাহকভাবে বৃদ্ধি ঘটেছে। জেলার প্রায় সহ¯্রাধিক হাওর-বিলের মোট ৩লক্ষ ৭৯হাজার হেক্টর জমির প্রায় সবগুলোই পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে জেলার প্রায় আড়াই লক্ষাধিক পরিবারের বোর ফসল আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।