চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা দুর্গম পদ্মার আলাতুলির চরে এখন চলছে র্যাবের অভিযান। গতকাল বুধবার ভোর থেকে বিপুল সংখ্যক র্যাব সদস্য ওই চরে অভিযান শুরু করেছে। তবে অভিযানে কিছু পেয়েছে কি-না সে সম্পর্কে র্যাবের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানান হয়নি। ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা থানার সীমান্তবর্তী পদ্মার ওই দুর্গম চরে কয়েক হাজার মানুষের বসতি রয়েছে। র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুর্গম চরকে ঘিরে তাদের এই অভিযান চলমান থাকবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, চরগুলোকে নিরাপদ মনে করে জঙ্গিরা আস্তানা গড়ে তুলেছিল। মঙ্গলবার একটি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর আরো আস্তানার খোঁজে র্যাবের অভিযান চলছে। অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে জঙ্গিরা সেখানে বসবাস করছিল। ফলে ওই এলাকায় আরো কোনো আস্তানা আছে কি-না এখন সেটা খোঁজা হচ্ছে। আগের দিন রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার সীমান্তবর্তী পদ্মার আলাতুলির চরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শেষে র্যাব-এর মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ জানান, এই অভিযানে অজ্ঞাত তিন জঙ্গি নিহত হয়েছে। তদের ছিন্নভিন্ন লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাবের ধারণা, এরা সকলে নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য। গত সোমবার রাত ৩টার দিকে শুরু অভিযান গত মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে শেষ হয়। জঙ্গি আস্তানা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির মালিক রাশিকুল ইসলামসহ চারজনকে আটক করেছে র্যাব। আটক অপর তিনজন হলেন- রাশিকুলের স্ত্রী নাজমা বেগম ও নাজমার মা মিনারা বেগম ও বাবা খোরশেদ আলম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে কোণঠাঁসা হয়ে পড়া জঙ্গিদের নিরাপদ ঠিকানা হয়ে উঠেছে দুর্গম এলাকা। জঙ্গিরা দুর্গম এলাকায় আস্তানা গেড়েও পার পাবে না বলে পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। জানা যায়, ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা থানার সীমান্ত ঘেঁষা দুর্গম এলাকায় অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুদ গড়ে তোলার জন্য নিরাপদ মনে করেছিল জঙ্গিরা। র‍্যাবের অভিযানে জঙ্গি আস্তানা তছনছ হয়েছে।

জানা যায়, দুর্গম এলাকার আস্তানাটির চারপাশের দেড় থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে কোনো জনবসতি ছিল না। আরেকটু দূরে অর্থাত্ ঘটনাস্থলের মাত্র তিন কিলোমিটারের মধ্যেই ভারতীয় সীমান্ত। তাই এলাকাটিকে জঙ্গিরা নিরাপদ মনে করেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। জানা যায়, বিগত ৬ মাসে শুধু পদ্মার চরে দুটি  জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মিলেছে। র্যাব পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছে ৭ জঙ্গি। আর এ নিয়ে পুরো রাজশাহী অঞ্চলে আরো ৪টিসহ ৫টি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। এর আগে রাজশাহী অঞ্চল থেকেই আটক হয়েছে দুর্ধর্ষ জঙ্গি হাতকাটা মাহফুজ। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চলে পুলিশি নজরদারি কম। এ সুযোগটাই নিচ্ছে জঙ্গিরা। তবে লাভবান হতে পারছে না। স্থানীয় সোর্সের মাধ্যমে পরপর দুটি আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ১১ মে গোদাগাড়ীর চর বেনীপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের সময় নারী জঙ্গির চাপাতির কোপে নিহত হন ফায়ার সার্ভিস কর্মী আব্দুল মতিন। ওই অভিযানে রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমিত চৌধুরী, এসআই লুত্ফর রহমান ও কনস্টেবল উত্পল আহত হন। পুরো অভিযানে ৪ জঙ্গি নিহত হয়। শিশু সন্তানসহ আরেক নারী জঙ্গি সুমাইয়াকে জীবিত আটক করা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বাড়িটির মালিক সাজ্জাদ হোসেন নব্য জেএমবিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তার বাড়ি হয়ে উঠে আস্তানা। নব্য জেএমবির সদস্যরা তার বাড়িতে থাকত এবং প্রশিক্ষণ নিত। ছদ্মবেশে জঙ্গিরা এলাকা থেকে সদস্য সংগ্রহের কাজও করছিল। এর আগে চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে মারা পড়ে ৪ জঙ্গি। এই আস্তানায় নিহত চারজনের মধ্যে গুলশান হামলার অন্যতম সমন্বয়ক বাশারুজ্জামান ও ছোট মিজানও রয়েছে। অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘ঈগল হান্ট’। এ অভিযানকে অন্যতম সফল অভিযান বলে মনে করেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজমের কর্মকর্তারা। এছাড়া গত ১২ জুন রাজশাহীর তানোরে জঙ্গি আস্তানার খবর পায় পুলিশ। পুলিশ ওই আস্তানায় অভিযান না চালালেও সেখান থেকে অস্ত্রসহ প্রথমে ১২ জনকে আটক করলেও পরে ৩ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়। বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়। রাজশাহী র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহাবুব আলম বলেন, পদ্মার দুর্গম চরে কারা বসবাস করছে, বহিরাগত কেউ রয়েছে কীনা অথবা কোথাও গোলাবারুদ মজুদ রয়েছে কীনা- তা খতিয়ে দেখতেই বুধবারের অভিযান। এছাড়া জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে চরের অধিবাসীদের সচেতন করার বিষয়টিও অভিযানের অংশ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn