সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি আল-হেলাল : জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) সিলেট জেলা শাখা এবং সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির যৌথ উদ্যোগে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে শক্রবার সকাল ১১ টার সময় এ ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক শাহীন আলম, সহ-সাধারণ সম্পাদক মো: ছাদেক মিয়া, দপ্তর সম্পাদক রমজান আলী পটু, সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির আহবায়ক রতাংকর দাস জহর ,যুগ্ন আহবায়ক সাইফুল আলম ছদরুল, মাসুদ আক্তার , সদস্য আমীর উদ্দীন, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির আহবায়ক দীপ্তি রানী সরকার, যুগ্ন আহবায়ক শ্রাবন্তী বাল্মিকী লিপি , বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিনন্দ কর, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু মন্ডল, এনডিএফ নেতা সুখেন্দ্র সহ প্রমুখ।
ত্রাণ বিতরণে অংশ নিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, এক মাসের ব্যবধানে সিলেট-সুনামগঞ্জের দ্বিতীয় দফা নজিরবিহীন ভয়াবহ বন্যা মানুষের জীবন-জীবিকাকে বিপর্যস্ত করে ফেলছে। আগের বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই দ্বিতীয় দফা বন্যায় মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। বন্যার পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও এবং উজানের আসামের বন্যার কারণে সিলেট অঞ্চলের সম্ভাব্য বন্যা সম্পর্কে সরকার ন্যূনতম প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সরকারের অবহেলা কারণে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাকে ঘটেছে। ঘরবাড়ি, সহায় সম্পদ, গবাদি পশু বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। সরকারের মানুষের জীবন ও জীবিকাকে উপেক্ষা করে তাদের তথাকথিত উন্নয়ন ও উৎসব নিয়ে ব্যস্ত আছে। সরকার কথায় কথায় পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি ট্যানেল, এক্সপ্রেস হাইওয়েসহ বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের কথা তুলে ধরে উন্নয়নের সাফাই গাইলেও বন্যা নিয়ন্ত্রণে হাওর রক্ষায় সাধারণ বাঁধ নির্মাণ ও নদী-নদী, খাল-বিল খনন করেনি। উপরন্তু অপরিকল্পিতভাবে হাওড়াঞ্চলে রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো নির্মাণের কারণে সাধারণ পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে নজিরবিহীন এই ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের তথাকিথত উন্নয়ন হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে এসডিজি কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে অবাধ লুটপাটের মেগা প্রকল্প। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দফায় দফায় গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেলের মূল্য ও নিত্যপণ্যের অব্যাহত মূল্য বৃদ্ধি করে শ্রমিক, শ্রমজীবী, স্বল্প আয়ের মানুষ ও ব্যাপক জনগণের জীবন ও জীবিকাকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রেই লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি ঘটলেও শ্রমিক-কৃষক-জনগণের আয় বাড়েনি।
প্রায় প্রতিবছর আমাদের দেশে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদির জন্য জান-মাল ফসলের ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। বলা হচ্ছে এর জন্য দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন কিসের জন্য, সে কথাটি আড়াল করা হচ্ছে। এই পরিবর্তনের জন্য দায়ী সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল সরকারের শাসন-শোষণ। আমাদের দেশসহ যে সকল দেশে মেগা উন্নয়ন চলছে, তার মূল কাজ হচ্ছে এসডিজি অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। আর এ সমস্ত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণেই প্রকৃতি, জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন হচ্ছে। অথচ বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ঘুর্ণিঝড় থেকে উদ্ধারের জন্য নেই কোনো বাস্তব ভিত্তিক কর্মসূচি। স্থায়ী সমাধানের জন্য নেই কোনো কার্যকর পরিকল্পনা। এর বিপরীতে আছে বিদেশি ঋণের বোঝা জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া। বন্যা সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন নদ-নদী খনন। হাওর অঞ্চলের বন্যা রোধে সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, ধরলা নদীসহ পাহাড়ি নদ-নদী উপনদীগুলো খনন করতে হবে। একই সাথে ভৈরব থেকে মেঘনা নদীর উৎসমুখ পর্যন্ত খনন করতে হবে। লুটপাটের সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনার মেগা প্রকল্পগুলোর বিপরীতে নদী খননসহ বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। বন্যার পানি সরে গেলে বন্যাপীড়িত মানুষের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের বাইরে অতিরিক্ত অস্থায়ী চিকিৎসা কেন্দ্র খুলতে হবে। বন্যাক্রান্ত মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবার প্রতি ক্ষতিপূরণ হিসেবে পর্যাপ্ত টাকা থোক বরাদ্দ দিতে হবে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১০৫ বার