জাতীয় সংগীত গাওয়া ধর্মবিরোধী!
নিজস্ব প্রতিবেদক:: জাতীয় সঙ্গীত ইসলামী প্রথা বিরোধী আখ্যায়িত করে গাওয়া হয়না কওমি মাদ্রাসায়, তোলা হয়না জাতীয় পতাকাও। যারা জাতীয় সঙ্গীত গাইবেনা তাদের সনদ দেয়াকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার বিরোধিতা করেছেন শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবাল। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের সাথে জড়িত জাফর ইকবাল বলেন, সবার আগে রাষ্ট্রের মূলনীতির সাথে একমত পোষণ তারপরই স্বীকৃতি। তিনি বলেন, স্বীকৃতি পেতে হলে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ও পড়াতে হবে। তাহলেই মানবসম্পদে পরিণত হবে কওমি শিক্ষার্থীরা। তবে কওমি শিক্ষাবোর্ড সিলেবাসে হাত দিতে নারাজ।
শিক্ষার্থী ১:
স্বাধীনতা দিবস আর বিজয় দিবস কত তারিখে?
– জানি না।
শিক্ষার্থী ২: আচ্ছা বলো তো, একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের কি?
– বিজয় দিবস।
শিক্ষার্থী ৩: বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা কে বলো তো?
– আমি সঠিক জানি না।
শিক্ষার্থী ৪: কার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে?
– আমার ক্লাসের টাইম হয়ে গেছে। (উত্তর এড়িয়ে গিয়ে)
শিক্ষার্থী ৫: বাংলাদেশের বিজয় দিবস কবে জানো?
– ২৬ শে ডিসেম্বর।
সিলেট নগরীর জামেয়া কসিমুল উলুম দরগাহে হজরত শাহজালাল (র.) মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নগুলো করা হলে এভাবেই উত্তর দিয়েছে তারা। এদের কেউ পড়ে ক্লাস ফাইভে আবার কেউ সর্বোচ্চ শ্রেণী দাওরায়ে হাদিসে। প্রশ্ন করা হলে তাদের অধিকাংশই জাতীয় কবির নাম, জাতীয় সঙ্গীদের রচয়িতা কিংবা ভাষা দিবস কবে তা বলতে পারেনি। বাস্তবতা যখন এমন, তখনি সরকার দাওরায়ে হাদিস ক্লাসকেই মাস্টার্সের মর্যাদা দেয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। কওমি মাদ্রাসা বোর্ডগুলোর সিলেবাস ঘেঁটে দেখা যায়, নিম্ন মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ানো হয় বাংলা-ইংরেজি ও গণিত। উপমহাদেশের মুসলিমদের ইতিহাসও পড়ানো হয় কিছুটা। নবম থেকে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত শুধুই ধর্মীই শিক্ষা। ড. জাফর ইকবাল বলেন, কওমি শিক্ষার্থীরা যাতে বোঝা না হয়ে সম্পদ হিসেবে তৈরি হয় সেজন্য সিলেবাস পরিবর্তন করে সকল বিষয় পড়াতে হবে। শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘তারা যেনো একটা মানব সম্পদে পরিণত হতে পারে সেজন্যই কিন্তু তারা যে ধর্মীয় শিক্ষা নিচ্ছে তার আশেপাশে অন্যান্য জিনিসগুলো তাদের পড়তে হবে। এই জিনিসটা তাদেরকে বুঝতে হবে এবং আমাদের রাষ্ট্রকে তাদের এ বিষয়টা বোঝাতে হবে।’ তবে দেশের প্রাচীনতম কওমি শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, হাত দেয়া যাবে না সিলেবাসে। আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বাংলাদেশ বোর্ড রচনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক বলেন, ‘বৈষয়িক জ্ঞানে জ্ঞানীরা জেনারেল বিভাগের শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। আমরা শুধু ধর্মীয় বিষয়টাকে প্রাধান্য দেই।’ দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোতে গাওয়া হয়না জাতীয় সঙ্গীত। কওমি শিক্ষকদের মতে, এটি ইসলামী প্রথা বিরোধী।
সিলেট জামেয়া কাসীমুল উলুম দারুস সালাম খাসদবীর মোহাদ্দিস মাওলানা আবদুল খালিক বলেন, ‘জাতীয় সংগীত আমাদের ছেলেরা গায় কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে গাওয়ার পক্ষে আমরা না। এটা ধর্মীয় ভাব থেকে জাতীয়তাবাদের দিকে চলে যায়। আমরা তো মূলত জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী নই, আমরা ধর্মীয় অনুশাসনে বিশ্বাসী।’ এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমাদের দেশে জাতীয় সংগীত গাইবে না কিংবা মনে করবে যে, জাতীয় সংগীত গাওয়াটা তাদের ধর্মের পরিপন্থী তাদেরকে আমরা সনদ দেবো, এটা হতে পারে না। যদি তারা রাষ্ট্রিয় সনদ চায় তাহলে আমি মনে করি, আমাদের দেশের যতোগুলো রাষ্ট্রীয় বিষয় আছে সবগুলোতে তাদের একমত হতে হবে।’ শিক্ষানীতি প্রণয়নের সময় মূল ধারায় কওমি ৯ মাদ্রাসাকে আনা সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র চাপের কারণে একটি সনদ হাতে ধরিয়ে দেয়া রাষ্ট্রের জন্য ভালো নয় মন্তব্য করেন শিক্ষাবিদ জাফর ইকবাল।