জাপানের সফর শেষে ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিতে সৌদির পথে প্রধানমন্ত্রী
বার্তা ডেস্ক :: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানে চার দিনের সরকারি সফর শেষে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) ১৪তম সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার সৌদি আরবের উদ্দেশে টোকিও ত্যাগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে (বিজি-১৫১২) টোকিওর হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তোশিকো আবে ও জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাবা ফাতিমা বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান। বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটটি সৌদি আরবের স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ২৫ মিনিটে জেদ্দার বাদশাহ আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিতে মক্কা যাবেন।
প্রধানমন্ত্রী জাপান অবস্থানকালে দুই দেশের মধ্যে আড়াই বিলিয়ন ডলারের একটি সহযোগিতা চুক্তি সই হয়। তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে বৈঠক করেন। চুক্তি স্বাক্ষর শেষে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী টোকিওতে ২৫তম নিক্কেই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অন্যতম প্রধান বক্তার বক্তৃতা করেন। এ ছাড়া তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানসহ বেশ কিছু অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা প্রশমনে এশীয় দেশগুলো কীভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে সমৃদ্ধির পথে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারে, সে পথ খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নানা চ্যালেঞ্জ ও সংঘাতে জর্জরিত বর্তমান বিশ্ব কাঠামোতে কীভাবে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমতার ভিত্তিতে উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়া যায়, সে বিষয়ে নিজের ভাবনা তুলে ধরেছেন ‘দ্য ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে।
উন্নত এশিয়া গড়ে তোলার লক্ষ্যে ৫টি ধারণা পেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানবতা আর শুভশক্তির জয় হবেই। বিশ্ব আজ অনেক প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে, এই উদীয়মান এশিয়ার দিকে। উদ্ভাবনে, অনুপ্রেরণায় বিশ্বকে শান্তি আর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে এশিয়াকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।’ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতা, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও তাত্ত্বিকদের অংশগ্রহণে বৃহস্পতিবার সকালে টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে নিক্কেই সম্মেলনের উদ্বোধন হয়। জাপানি সম্প্রচারমাধ্যম নিক্কেইয়ের এ আয়োজনকে এশিয়ার সম্ভাবনা ও উত্থান নিয়ে এ অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ছাড়াও ‘আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি’ মাহাথির মোহাম্মদ, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন এবং ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে অংশ নিচ্ছেন এ সম্মেলনে। শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলার গল্প সম্মেলনে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশিয়ার দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্য উদারীকরণের নীতি সমর্থন করে এলেও সম্প্রতি বছরগুলোয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সংরক্ষণমূলক বাণিজ্যনীতির বাধা ক্রমশ বাড়ছে। বিভিন্ন দেশের এ সংরক্ষণমূলক বাণিজ্যনীতি বিশ্বে বাণিজ্যযুদ্ধের উসকানি দিচ্ছে। এ বিষয়ে নিজের ভাবনার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের বিশ্ব নানাভাবে চ্যালেঞ্জ ও সংঘাতের মুখোমুখি। বিশ্বকে আরও উন্মুক্ত করতে, ঐক্যের বন্ধনকে আরও মজবুত করার অঙ্গীকার নিয়ে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্বের সামনে চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের মোকাবেলা করতে হবে যৌথভাবে; ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকারকে রক্ষা করতে হবে। উদ্ভাবনী ধারণা ও পদক্ষেপ নিয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও বাড়াতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোতে আরও উদ্ভাবনী অনুশীলনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সবার জন্য লাভজনক হয়, সব মানুষের যাতে মঙ্গল হয়, তেমন একটি কৌশল নির্ধারণ করতে হবে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে, যা গড়ে উঠবে পারস্পরিক আস্থা ও সম্মান এবং ঐক্যবদ্ধ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির চেতনা নিয়ে।’ সে জন্য উদার, অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমতাভিত্তিক, অংশীদারিত্বমূলক যৌথ উন্নয়নের চেতনা নিয়ে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এশিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে টেকসই ও সুষম উন্নয়নের ওপর, আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা এবং সবার জন্য লাভজনক একটি ফলপ্রসূ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর। আমাদের যৌথভাবে উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। আমরা বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য একটি গ্রুপ হিসেবে একত্রিত হতে পারি, যারা একটি বহুমাত্রিক বিশ্বব্যবস্থাকে উৎসাহিত করবে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করবে।’ অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও মানবতার স্বার্থে বাংলাদেশ যে মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, সে কথাও এশীয় নেতাদের সামনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ‘আমরা শুধু মানবিক আবেদনেই সাড়া দিচ্ছি না; এই সংকট যেন বিশৃঙ্খলা ও আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার দিকে না যায়, সে বিষয়েও সচেতন রয়েছি। তীব্র উত্তেজনা ও সংকটের মুখেও এ সমস্যা সমাধানের জন্য সংলাপ ও ঐকমত্য চেয়েছি আমরা।’
তিনি বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্থিতিশীল ও টেকসই বিশ্বব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সব বন্ধু ও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে যাবে। মানবসভ্যতাকে যুদ্ধের বিভীষিকার শিকার হতে হয়েছে বহুবার, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমি বিশ্বাস করি, শক্তিশালী, যৌক্তিক ও দায়িত্বশীল নেতৃত্বে দেশে দেশে সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সামনের দিনের চ্যালেঞ্জগুলো যদি আমরা মোকাবেলা করতে পারি, তা ভালো ফলই বয়ে আনবে।’ প্রধানমন্ত্রী ত্রিদেশীয় সফরের উদ্দেশে ২৮ মে ঢাকা ত্যাগ করেন। সৌদি থেকে তিনি ফিনল্যান্ড যাবেন। আগামী ৮ জুন তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। সৌজন্যে : যুগান্তর