জাপানে প্রবাসী বাংলাদেশীর অনন্য অর্জন
সিলেট :: জাপানের নাগাওকা সিটি কোমে ১০০ এওয়ার্ড বা কোমে হায়াপ্পো ২০১৯ সম্মাননা অর্জন করলেন জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী মো. নূরুল এলাহি। জাপানের ভাষায় কোমে হায়াপ্পো মানে ‘শত বস্তা চাল’ বা ‘একশত ব্যাগ চাল’। ধৈর্য এবং অধ্যবসায় সহকারে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। জনসেবায় নিয়োজিত কয়েক’শো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইল যাচাই বাছাইয়ের পর ২৭ মার্চ সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে উনাকে চুড়ান্ত মনোনয়নের কথা জানানো হয়। গত ১৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে নূরুল এলাহী ও মিসেস এলাহীর হাতে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। জাপানের একটি ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণের প্রতিকরুপে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়ে থাকে। আধুনিক জাপানের অর্থনৈতিক বিকাশ শুরু হয়েছিল এদো যুগে। ইতিহাসে জাপানের বসিন সেন্সো বা দ্য বসিন ওয়ার, যা জাপানী বিপ্লব নামেও পরিচিত। ২৭ জানুয়ারী ১৮৬৮ থেকে ২৭ জুন ১৮৬৯ পর্যন্ত চলা এ যুদ্ধে জাপানের নাগাওউকা রাজ্য যা বর্তমানে নিগাতা এলাকা ভুক্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে এবং ফসল উৎপাদন ব্যবস্থা সম্পুর্ণ রুপে ধংস হয়ে পড়ে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত নিগাতা অঞ্চলের মানুষের সাহায্যার্থে পার্শ্ববর্তী মাকি শহর হতে একশ বস্তা চাল প্রদান করা হয়। এলাকার সবাই সে চাল খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলেও ভিন্নমত পোষণ করেন কোবায়াশি তোরাসাবুরু তিনি ছিলেন সে সময়কালের নিগাতা অঞ্চলের একজন বর্ষীয়ান নেতা। তিনি মত দেন আমরা এ চাল খাবো না, বরং এ চাল বিক্রি করে তা শিক্ষাক্ষেত্রে কাজে লাগাবো। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তিনি এ কাজে সফল হন এবং কোক্কান গাক্কু স্কুল নামে একটি স্কুল গড়ে তোলেন। তিনি বলেছিলেন যদি আমরা এ চাল খাই তবে তা দ্রুত শেষ হয়ে যাবে, আর যদি আমরা তা শিক্ষায় ব্যয় করি তবে এই একশ বস্তা চাল একদিন দশহাজার বস্তা এমন কি দশ লক্ষ বস্তা হয়ে ফিরে আসবে। আধুনিক জাপানের অর্থনৈতিক বিকাশ শুরু হয়েছিল এদো যুগে। এদো যুগের অধুনা বিদ্যলয়, শিল্প উপাদানগুলির মধ্যে সড়ক ও জলপথ এবং ফিউচার্স কনট্র্যাক্টস, ব্যাংকিং ও ওসাকা রাইস ব্রোকারসের বিমাগুলির মতো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলি উল্লেখযোগ্য ১৮৬৮ সাল থেকে মেইজি যুগে জাপানের অর্থনীতি প্রসার লাভ করে। এই সময় জাপান বাজার অর্থনীতিকে গ্রহণ করেছিল। আজকের অনেক সংস্থা সেই যুগে স্থাপিত হয়েছিল। সেই সময় থেকেই জাপান এশিয়ার সর্বাধিক সর্মৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে শুরু করে। এই সময়ের কোবায়াশি তোরাসাবুরু হচ্ছেন সম্মানিত হানশি মোঃ নূরুল এলাহি ।
দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে জাপানে বসবাসকারী এই বাংলাদেশী নিজের পেশার বাইরে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন শিক্ষার প্রসার ও একেবারে প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিশুশিক্ষায় নিজের পূর্বপুরুষের ভিটে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার বুরুদ্দিয়ার নামাপুটিয়ায় ফাতেমা সালাম মিসাকো এলাহি আইডিয়াল স্কুল নামে সম্পুর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে গড়ে তোলেন একটি স্কুল। শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে সকল শিক্ষা উপকরণ, স্কুল ড্রেস সব কিছুই স্কুল থেকে বিনামূল্যে প্রদান করা হয় এবং এখানকার শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে কোন রকমের কোন ফি প্রদান করতে হয় না। তিনি মনে করেন তাঁর আজকের এই প্রচেষ্টায় আজকের শিশুরাই একদিন তৈরি করবে স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা বাসযোগ্য স্বপ্নীল পৃথিবী। এছাড়াও তিনি ওয়ার্ল্ড সিতোরিও কারাতে-দো সেইসিনকাই ইন্টারন্যাশনাল এর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ব্ল্যাকবেল্ট ৯ম ড্যন মর্যাদার অধিকারী। ওয়ার্ল্ড সিতোরিও কারাতে-দো সেইসিনকাই ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার শান্তি রায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন।