জামালগঞ্জে ছাত্রী অপহরনের ঘটনায় ৪ বখাটের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত মামলা এখনও এফআইআর হয়নি মোবারক হোসাইন : জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজার ইউনিয়নের পলক শান্তিপুর গ্রামে ৭ম শ্রেণির ছাত্রী অপহরনের পর ধর্ষনের ঘটনায় বিজ্ঞ আদালতে ৪ বখাটের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে দায়েরকৃত মামলাটি এখনও এফআইআর হয়নি। এ সুযোগে অথচ সুনির্দিষ্ট এই অপহরন ও পরবর্তীতে ধর্ষনের ঘটনায় সুনামগঞ্জের বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে গত ২৭ জুন ২১৭/২০২১ইং পিটিশন মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ভিকটিম ছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ ইং (সংশোধিত ২০০৩ইং) এর ৭/৯ (১)/ ৩০ ধারায় এই মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলায় জামালগঞ্জ উপজেলার পলক শান্তিপুর গ্রামের সফর আলীর পুত্র মিজানুর রহমান (২০),মজিবুর রহমান (২২),সাচনা পালহাটি গ্রামের মৃত মানিক দাসের পুত্র মানব দাস (২১) ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের পৈন্দা গ্রামের মৃত নুর উদ্দিনের পুত্র জুবায়ের (২০) কে আসামী করা হয়েছে।
মামলার বিবরনে প্রকাশ, পলক শান্তিপুর গ্রামের সফর আলীর পুত্র মিজানুর রহমান,স্থানীয় সাচনা বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রী কে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার পথে প্রায়ই উত্যেক্ত করতো। এ ঘটনায় ভিকটিম ছাত্রীর পিতা ময়না মিয়া,বখাটে মিজানুর রহমানের পিতা সফর আলীসহ প্রতিবেশীদেরকে অবগত করলে গত ৫ মার্চ শুক্রবার রাত ৮টায় মিজানুর রহমান ও তার সহযোগীরা পিতার অগোচরে ভিকটিম কিশোরীকে ফুসলিয়ে অপহরন করে নিয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় খুজাখুজি করে ভিকটিমের সন্ধান না পাওয়ায় অসহায় পিতা ৬/৩/২০২১ইং তারিখে জামালগঞ্জ থানায় ২৩০নং জিডি দায়ের করেন। পরবর্তীতে ১৯/৩/২০২১ইং থানা পুলিশের সহায়তায় আসামী মিজানুরের হেফাজতে থাকাবস্থায় ভিকটিমকে থানা হতে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন পিতা। কিন্তু এলাকায় সালিশ পঞ্চায়েতে আসামী মিজানুর রহমান তার হেফাজতে রাখা অবস্থায় ভিকটিম কিশোরীকে নোটারী পাবলিক মাধ্যমে বিবাহের হলফনামা সম্পন্ন করেছে বলে দাবী করে।
হলফনামার মাধ্যমে কথিত অবৈধ বিবাহের পূর্বের হলফনামাটি বাতিল ঘোষনা করে মিজানুর রহমানকে কপি প্রদান করা হয়। ২৪ জুন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ঘর হতে বের হলে ওৎপেতে বসে থাকা বখাটে মিজান পুনরায় ভিকটিম ছাত্রীকে অপহরন করে নিয়ে যায় এবং অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষন করে। দ্বিতীয়বার একই আসামী কর্তৃক পুনরায় ভিকটিমকে অপহরন করার ব্যাপারে থানা পুলিশকে অবগত করলে মিজানুর অপহৃত ভিকটিম কে তার সহযোগী মানব দাসের বোন রুমা দাসের সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নতুনপাড়াস্থ বাসায় আটক করে রাখে। অসহায় পিতা তার কন্যাকে উদ্ধারের জন্য নতুনপাড়ায় রুমা দাসের বাসায় গেলে মিজানুর ও তার সহযোগীরা তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। পরে ঘটনার ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে জামালগঞ্জ থানা পুলিশ ভিকটিমের পিতার দায়েরকৃত অভিযোগটি আমলে নেয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন ভিকটিমের পিতা ময়না মিয়া। বাদীপক্ষে মামলাটি দায়ের করেন এডভোকেট আমিরুল হক।
বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তক্রমে এফআইআরের জন্য জামালগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। গত ১০ মার্চ প্রধান শিক্ষক রইছ মিয়া স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ২০১৯ইং এর সনদপত্র অনুযায়ি ভিকটিম কিশোরী জামালগঞ্জ থানার সাচনাবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী এবং তার জন্ম তারিখ ৮/৫/২০০৭ইং বলে জানা যায়। এছাড়া তার জন্ম নিবন্ধনপত্রে জন্ম তারিখ সাল ৮/৫/২০০৭ইং উল্লেখ রয়েছে। এ থেকে প্রমাণিত হয়,১৪ বছরের অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরী হচ্ছে ভিকটিম স্কুল ছাত্রী। তারপরও ভিকটিম ছাত্রী অপহরন ও ধর্ষনের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটি এখনও এফআইআর করেনি জামালগঞ্জ থানা। জামালগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাইফুল আলম বলেন, বিজ্ঞ আদালতে দায়েরকৃত পিটিশন মামলাটির তদন্ত চলছে। তদন্তের পর আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই লিটন চন্দ্র রায় বলেন,মামলাটির তদন্ত করতে গিয়ে আমি আদালতে সময়ের আবেদন করেছি। এখনও মামলাটি এফআইআর হয়নি বলে জানান তিনি।
ভিকটিম ছাত্রীর পিতা ১৭ আগস্ট মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন,বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়েরের এক মাস ২০ দিন এবং ঘটনার ৫ মাস ১৩ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত আমি থানা পুলিশে দৌড়ঝাপ করেই যাচ্ছি। তারপরও আমাকে অব্যাহত হুমকী প্রদর্শন করা হচ্ছে। মামলাটি এফআইআর না হওয়ায় আমি অপুরনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। আসামীরা আমার নাবালক ১৪ বছরের কিশোরী কন্যাকে অপহরন করত: তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষন করে নিজেদের অপরাধ কে ধামাচাপা দিতে বেআইনী হলফনামা সম্পাদনসহ বিভিন্ন জাল জালিয়াতি প্রতারনার আশ্রয় নিচ্ছে। আমি আসামীদের গ্রেফতারের ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
২৫৮ বার