জেরুজালেম নিয়ে ইসরাইলের নতুন ষড়যন্ত্র!
জেরুজালেমে রাজধানী করার পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য অন্তত দশটি দেশের সাথে যোগযোগ করছে ইসরাইল সরকার। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পর গুয়েতোমালার সমর্থন পাওয়ার পর দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিজিপি হতোবেলি মঙ্গলবার সরকারি বেতারে এ কথা বলেন। খবর এএফপি’র। উপমন্ত্রী বলেন, রাজধানী স্থানান্তরের পক্ষে সমর্থনের জন্য আমরা ইউরোপীয় দেশসহ কমপক্ষে দেশটি দেশের সাথে কথা বলেছি। যদিও তিনি দেশগুলোর নাম বলেননি। তবে ইসরাইলের কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে সরকারি বেতার জানায়, ফিলিপাইন, হন্ডুরাস, রোমানিয়া, দক্ষিণ সুদান তাদের মধ্যে অন্যতম। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য যদিও যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী স্থানান্তরের ঘোষণার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। জেরুজালেম ইস্যুতে জাতিসংঘের ভোটে পক্ষে-বিপক্ষে কারা?
জেরুজালেম নগরীকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে যে স্বীকৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তা প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। ওই স্বীকৃতি প্রত্যাহারের আহবান জানিয়ে সাধারণ পরিষদের জরুরী অধিবেশনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটাভুটিতে গৃহীত প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছে, এই নগরীর মর্যাদার বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত ‘অকার্যকর’ ও ‘বাতিলযোগ্য’।
প্রস্তাবের বয়ানে বলা হয়েছে জেরুজালেম শহর নিয়ে যে কোনরকম সিদ্ধান্ত এই ভোটের মাধ্যমে বাতিল বলে গ্রাহ্য হবে। নামধাম লিখে রাখা এবং অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির পরেও, ১২৮টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে, আর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ৯টি দেশ। ভোটদানে বিরত ছিল ৩৫টি দেশ। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, সৌদি আরব, জাপানসহ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ। ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস ইস্যুতে আমেরিকার সিদ্ধান্তকে অনেকটা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বেশিরভাগ সদস্য দেশ। যেসব দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে তাদের তালিকা তুলে ধরা হলোঃ আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, আলজেরিয়া, আন্দোরা, অ্যাঙ্গোলা, আর্মেনিয়া, অস্ট্রিয়া, আজারবাইজান, বাহরাইন, বাংলাদেশ, বারবাডোস, বেলারুশ, বেলজিয়াম, বেলিজ, বলিভিয়া, বতসোয়ানা, ব্রাজিল, ব্রুনাই, বুলগেরিয়া, বুরকিনাফাসো, বুরন্ডি, কেপভার্দে, ক্যাম্বোডিয়া, চাদ, চিলি, চীন, কমরোস, কঙ্গো, কোস্টারিকা, আইভরি কোস্ট, কিউবা, সাইপ্রাস, উত্তর কোরিয়া, ডেনমার্ক, জিবুতি, ডোমিনিকা, ইকুয়েডর, মিশর, ইরিত্রিয়া, এস্তোনিয়া, ইথিওপিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, গ্যাবোন, গাম্বিয়া, জার্মানি, ঘানা, গ্রিস, গ্রানাডা, গিনি, গায়ানা, আইসল্যান্ড, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, জর্দান, কাজাখস্তান, কুয়েত, কিরগিজস্তান, লাওস, লেবানন, লাইবেরিয়া, লিবিয়া, লিচটেনস্টেইন, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ। এছাড়া, প্রস্তাবের পক্ষে আরো ভোট মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালি, মাল্টা, মৌরিতানিয়া, মরিশাস, মোনাকো, মন্টেনেগ্রো, মরক্কো, মুজাম্বিক, নামিবিয়া, নেপাল, নেদারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, নিকারাগুয়া, নাইজার, নাইজেরিয়া, নরওয়ে, ওমান, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউগিনি, পেরু, পর্তুগাল, দক্ষিণ কোরিয়া, কাতার, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্যা গ্রানাডিয়ান্স, সৌদি আরব, সেনেগাল, সার্বিয়া, সিসিলি, সিঙ্গাপুর, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, শ্রীলঙ্কা, সুদান, সুরিনাম, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সিরিয়া, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, মেসিডোনিয়া, তিউনিশিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রিটেন, তানজানিয়া, উরুগুয়ে, উজবেকিস্তান, ভেনিজুয়েলা, ভিয়েতনাম, ইয়েমেন এবং জিম্বুবুয়ে।
অন্যদিকে প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার এই নয় দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, গুয়াতেমালা, হুণ্ডরাস, মাক্রেসয়া, নাইরু, পালাও, টোগো, মার্শাল দ্বীপ। মজার ব্যাপার হলো এগুলো কোন পরিচিত দেশ নয়। সবাই আমেরিকার দান খয়রাতে চলে। সুতরাং বলা যায়, পরিচিত কোন দেশ ইসরাইল আমেরিকার পক্ষে নাই। এছাড়া ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল এন্টিগুয়া-বারবুদা, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, বাহামাস, বেনিন, ভুটান, বসনিয়া-হারজেগোভিনা, ক্যামেরুন, কানাডা, কলম্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, ডোমিনিক্যান প্রজাতন্ত্র, ইকুইটোরিয়াল গিনি, ফিজি, হাইতি, হাঙ্গেরি, জ্যামাইকা, কিরিবাতি, লাটভিয়া, লেসেথো, মালাউয়ি, মেক্সিকো, পানামা, প্যারাগুয়ে, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, রুয়ান্ডা, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ সুদান, ত্রিনিদাদ-টোবাগো, টুভ্যালু, উগান্ডা ও ভানুয়াতি।