জেলা বিএনপির কান্ডারী কি জাকেরীনই হচ্ছেন!
চৌধুরী মুমতাজ আহমদ-
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান দেওয়ান জয়নুল জাকেরীনের কেন্দ্রে কোনো পদ নেই। জেলা সভাপতি হিসেবে আলোচনায় তাই তার নামই জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। বিএনপি সংশ্লিষ্ট একটি শীর্ষ স্থানীয় সূত্র বলছে, কেন্দ্রে জমা পড়া কমিটিতেও জয়নুল জাকেরীনকেই বিবেচনা করা হয়েছে সভাপতি হিসেবে। কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক নূরুল ইসলাম। তবে এ কমিটি আলোর মুখ দেখার আগেই বিরোধ দেখা দিয়েছে নেতাকর্মীদের মাঝে।
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের অপেক্ষা যেন শেষ হতে চাইছে না। ৩ মাসের মধ্যে কমিটি গঠনের দায় থাকলেও তিন বছরেও কমিটি গঠন করে দিতে পারেনি আহ্বায়ক কমিটি। অবশ্য এ সময়ের মধ্যে জেলার ১৬টি সাংগঠনিক ইউনিটের ১৩টির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হওয়ায় এখন মূল কমিটি গঠনের আশা দেখছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। একটি সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যেই কেন্দ্রে একটি কমিটি জমা পড়েছে। তবে পদ নিয়ে বিরোধ-জটিলতায় তা ঝুলে রয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপিতে বিরোধ-কোন্দল কিছুতেই যেন কাটতে চাইছে না। সম্প্রতি সারা দেশে বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য ৫১টি সাংগঠনিক টিমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সুনামগঞ্জে সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াৎ হাসান জীবন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম, কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন ও সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী। তবে তারা বিবদমান পক্ষগুলোকে নিয়ে এক সঙ্গে বসতে পারেননি। ১০ই মে এ টিমটি সুনামগঞ্জের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাদাভাবে সভা করেছে। একটি সভা হয়েছে সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে আর অন্য সভাটি হয়েছে জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ফজলুল হক আছপিয়ার বাসায়। অস্থায়ী কার্যালয়ের সভায় অংশ নেন জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরীর সমর্থকরা। আর ফজলুল হক আছপিয়ার বাসার সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপিতে তার অনুসারীরা। উভয় সভায় এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করেন।
বিরোধ-কোন্দলের কারণেই ৩ বছর ধরে কমিটি পাচ্ছে না সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি। বিরোধের কারণেই ২০১৪ সালের ১৬ই এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি, ১১ উপজেলা, থানা ও পৌর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সাবেক সংসদ সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনকে প্রথম সদস্য করে ৮৭ সদস্যবিশিষ্ট জেলা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। ৩ বছরে জেলার ১৬টি সাংগঠনিক ইউনিটের ১৩টির পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং ৩টি’র আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে সক্ষম হয় জেলা আহ্বায়ক কমিটি। তবে প্রায় প্রতিটি কমিটির ক্ষেত্রেই অভিযোগ রয়েছে আহ্বায়কের পছন্দের মানুষদের দিয়ে কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের বিএনপির রাজনীতি মূলত নিয়ন্ত্রিত হয় সাবেক ৪ সংসদ সদস্যের ইশারাতেই। ফজলুল হক আছপিয়া, নজির হোসেন, নাছির উদ্দিন চৌধুরী, কলিম উদ্দিন মিলনই মূলত সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির নিয়ন্তা। এছাড়া, ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন রয়েছেন সে তালিকায়। এর মধ্যে সংস্কারপন্থির তকমা লাগায় নজির হোসেন কিছুটা নিষ্ক্রিয় ছিলেন দলে। তবে সে দুঃখ ভুলে খালেদা জিয়া সম্প্রতি তাকে কাছে ডেকে নেয়ায় আবার অনেকটাই চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন নজির হোসেন। তবে তিনি এখন নিজের নির্বাচনী এলাকার দিকেই বেশি নজর দিতে চান, নেত্রীর নির্দেশনাও এমনটি বলে জানান নজির হোসেন। তাই বোধহয় তিনি জেলার রাজনীতির নেতৃত্বে এখন আর আগ্রহী নন। তবে কে হবেন জেলা বিএনপির কাণ্ডারি?
বাকি রইলেন ৫ জন। অবশ্য বিএনপির এক নেতা এক পদের থিওরি সব হিসাব-নিকাশ সহজ করে দিয়েছে। এ থিওরিতেই সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সর্বশেষ কমিটির সভাপতি ফজলুল হক আছপিয়া আর সাধারণ সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন তাই তালিকায় নেই জেলার নেতৃত্বের। ফজলুল হক আছপিয়া দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন। সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে সে কমিটিতে জায়গা হয়েছে কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনেরও। আর কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য হিসেবে জায়গা পাওয়ায় লড়াইয়ের ময়দানে নেই জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন চৌধুরীও। সাবেক ছাত্র নেতা মিজানুর রহমানও একই সূত্রে জেলার দায়িত্ব থেকে দূরে রয়ে যাবেন। শেষমেষ উপরসারির নেতার মধ্যে বাকী রইলেন দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন তবে তিনিই কি জেলা বিএনপির কান্ডারী হতে যাচ্ছেন? এ প্রশ্ন এখন সবার।