জোছনা ভেজা রাত-
তন্দ্রা রয়-
—আজ এই ভরা পূর্নিমাতে চাঁদের আলো আমার ছোট ব্যালকোনিতে এদিক সেদিক উঁকি মারছে। ঠিক জমছে না কোথায় যেন সুর কেটে কেটে যাচ্ছে। এমন মারাত্মক একটা সময়ে কার মন চায় চারদেয়ালে আটকে থাকতে। আজ তো খোলা আকাশের নীচে জোছনার চাদর বিছানো সময়।
একটা সময় ছিলো যখন জোছনা মানেই উৎসব। আমাদের জল- জোছনার শহর সুনামগন্জে পূর্নিমা রাতে ইচ্ছে করেই লোডশেডিং হতো। আমাদের তৎকালীন পৌর চ্যায়ারম্যান সাহেব কবি মানুষ সদলবলে চাঁদ দেখতে বের হতেন। আমি তখনও এতোটা স্বাধীনতা পাইনি তাই আমাদের জন্য জানালার পাশে পড়ার টেবিলে জোছনার আল্পনা। জানালার গাঁ ঘেষে হাসনাহেনার মাতাল করা গন্ধই তখন সদ্য বুঝতে শেখা প্রেম – ভালোবাসা, জল- জোছনার অনুভূতি। কখনও কখনও খুব সাহস করে একা একা ছাদে উঠে জোছনা বিলাস। পরবর্তিতে বড়দের ঝাড়ি। তবুও কি সুন্দর সেই সময়। তারপর যখন একটু একটু স্বাধীনতা পেলাম তখন তন্দ্রা উড়াল পঙ্খি জোছনার আকাশে।
আমি কখনও একা কোথাও যেতে পারতাম না দলবল লাগতো, যত লোক তত মজা, কোনদিন জোছনা রাতে চলে যেতাম কলেজের পুকুর ঘাটে। কখনোবা হালুয়ার ঘাট নদীর পাড়ে গল্প-আড্ডা- গান-চা আর হাসি কারণে অকারনে। কান্নাও যে ছিলোনা তা না ছিলো বিরহ- ঝগড়া- না পাওয়ার কষ্ট। এমন কি নির্বাচনে প্রিয় প্রার্থির পরাজয়ের কান্নাও। হা হা কত সহজ ছিলো জীবন। একবার সিলেটে টিলার উপর বসে চাঁদ দেখেছি ভরা বর্ষায়, সাপের ভয় দেখিয়েও থামাতে পারেনি কেউ, আহারে আমার সোনালী দিন। জলের স্পর্শে জোছনা বড় বেশি আবেদনময়ী হয়ে ওঠে। ঘোর লাগে চোখে। তাই বুঝি নদী- হাওর- পুকুর – সমুদ্রে জোছনা বিলাশ করে মন। আর তাই বুঝি আজ এই বেলাশেষে এসেও কেউ যখন বলে এক আকাশ চাঁদ হাতে বসে আছি অপেক্ষায়। মুগ্ধ হই। জল- জোছনা এ মনই কেবল মুগ্ধ করেই গেলো আমায়। ভালোবাসায়।।